অর্থনৈতিক অবনতির শঙ্কায় চীন ছাড়ছে ধনীরা
<![CDATA[
অর্থনৈতিক অবনতির আশঙ্কায় চীনের ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ধনীরা সম্পত্তি থেকে নগদ অর্থ বের করে এবং মূল ভূখণ্ড ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করায় দেশটির আর্থ-বাণিজ্যিক খাতের কেন্দ্রবিন্দু সাংহাইয়ে আবাসন বাজারের পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
অক্টোবরের শেষ নাগাদ দেখা যায়, প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪০০টি প্রাক-মালিকানাধীন ফ্ল্যাট বিক্রির বিবেচনায় রাখা হয়েছে। যা তার আগের মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। স্থানীয় আবাসন প্রশাসন ব্যুরোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফ্যাঙদি ডটকম চায়না এ তথ্য দিয়েছে।
স্থানীয় সম্পত্তি মধ্যস্থতাকারীদের সাধারণ তথ্যের ভিত্তিতে এই সংখ্যা ২০২১ সালের শেষের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
পুডং নিউ এরিয়ার প্রপার্টি এজেন্সি ফাইভআইফাইভজের সিনিয়র ম্যানেজার সং ইউলিন বলেন, ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ধনী ব্যক্তি তাদের প্রপার্টি সম্পত্তি বিক্রি করে মুক্ত হতে চাচ্ছেন। কারণ তারা আশঙ্কা করছেন, স্থানীয় আবাসন বাজারের মন্দা অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, এসব মানুষের বেশিরভাগই হয় অভিবাসনের কথা ভাবছে বা বিদেশে তাদের সম্পদের কিছু অংশ স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে।
বিক্রয়ের জন্য রাখা অতিরিক্ত সেকেন্ড-হ্যান্ড বাড়িগুলো শহরের সম্পত্তি বাজারে শেয়ারের মূল্য কমে যাওয়ার অনুভূতিকে বাড়িয়ে তুলেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের নেতা হিসেবে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অভূতপূর্ব তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ধনীদের অর্থে ভাগ বসানো হবে, যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন : তীব্র বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের মুখে শি জিনপিংয়ের তৃতীয় মেয়াদ শুরু
সাংহাইয়ের ৪৮ বছর বয়সী বাসিন্দা এডি ঝু বলেছেন, তিনি তার ১০ মিলিয়ন ইউয়ান ( ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার) মূল্যমানের বাড়ি ফেলে পর্তুগালে যাবেন। কারণ তার পরিবার সে দেশে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে।
তিনি বলেন, একটি মন্দা প্রবণতা (বাড়ির দামে) আকার ধারণ করছে এবং বাজারের আরও মন্দা এড়াতে আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চুক্তি বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘সাংহাই ও চীনের আরও মধ্যবিত্ত আগামী বছরগুলোতে দেশ ছেড়ে যাবে। কারণ অর্থনীতির সম্ভাবনা নিয়ে তাদের ক্রমে উদ্বেগ বাড়ছে।
অক্টোবরে শি’কে কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত করা হয়। এর ফলে তার ‘কমন প্রসপারিটি বা সাধারণ সমৃদ্ধি’ নীতি বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত করা হলো, যার লক্ষ্য সম্পদের ব্যবধান কমানো এবং ব্যক্তিগত সম্পদ আহরণ রোধ করা।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে অন্য একজন বাড়ির মালিক বলেছেন, বেইজিং শিগগিরই একটি সম্পত্তি কর আরোপ করতে পারে, যার ফলে তার পরিবারকে বছরে হাজার হাজার ইউয়ান খরচ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, একাধিক ফ্ল্যাট আছে এমন অনেক বাড়ির মালিক কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য অন্তত একটি বিক্রি করবেন।
ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিক্সের তথ্যমতে, সাংহাইতে প্রাক-মালিকানাধীন বাড়ির দাম গত মাসের তুলনায় অক্টোবরে দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে প্রথমবারের মতো শহরের সম্পত্তির দাম মাসে মাসে কমেছে।
আরও পড়ুন : বাড়ছে বয়স্ক জনসংখ্যা, এক সন্তান নীতির ফল ভোগ করছে চীন
স্থানীয় মধ্যস্থতাকারীরা বলছেন, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে মালিকদের তাদের চাওয়া দাম ১০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে, সাংহাইয়ের কেন্দ্রস্থলে একটি দুই বেডরুমের বাড়ির প্রতি বর্গ মিটারে প্রায় এক লাখ ইউয়ান মূল্য ট্যাগ রয়েছে।
সাংহাই শহরের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি ও পেশাদারদের প্রবাহের কারণে ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিক থেকে বাড়ির দাম বেড়েছে। ১ জুন থেকে দুই মাসের লকডাউনে মূল ভূখণ্ডের বাণিজ্যিক ও আর্থিক কেন্দ্র নিমজ্জিত হওয়ার পরও শহরের বাজার স্থিতিশীল ছিল।
সাংহাইয়ের প্রপার্টি এজেন্সি বাওনুওর মালিক ইউ লিয়াংজুর মতে, অথচ সেপ্টেম্বর থেকে বাড়িওয়ালাদের ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করতে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ছাড় দিতে হয়েছে।
সাংহাইতে ভাড়াও কমছে। কিছু বাড়িওয়ালাদের ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিতে হচ্ছে। কারণ শূন্য করোনা নীতির কারণে চীনের বাণিজ্যিক কেন্দ্রের প্রবাসী বাসিন্দা ও উচ্চ আয়ের বেতনভোগীরা এই এলাকা ছেড়ে যাচ্ছেন।
সিবিআরই চায়নার গবেষণা দলের প্রধান স্যাম জি বলেন, শূন্য-করোনা নীতি শিথিল করলেই কেবল শহরের পতনশীল আবাসন এবং বাড়ি ভাড়ার বাজারের মন্দা পরিস্থিতি মধ্য অবস্থায় রাখা যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি কোম্পানির নির্বাহী ও ব্যবসায়ীরা অবশেষে ফিরে আসবেন। সেকেন্ড-হ্যান্ড বাড়ি কেনার আগ্রহ এবং বাড়ি ভাড়ার চাহিদা ততক্ষণে পুনরুদ্ধার হবে।’
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
]]>




