অ্যাপলের সিইও হয়ে ওঠার গল্প
<![CDATA[
প্রযুক্তি কোম্পানির মধ্যে বিশ্বের সেরা একটি ব্রান্ডের নাম যদি বলতে বলি প্রথমেই কোন ব্র্যান্ডের কথা মাথায় আসবে? নিশ্চয় অ্যাপল। হ্যাঁ, এটি বিখ্যাত আমেরিকান বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানির মধ্যে অন্যতম। এই নামটি মনে করার সঙ্গে সঙ্গে স্টিভ জবস নামটাই প্রথম মাথায় আসে। কিন্তু তার পর যে মানুষটার নামটি মুখে আসে তিনি টিমথি ডোনাল্ড কুক বা টিম কুক নামে পরিচিত।
স্টিভের মৃত্যুর পর টিম কুক অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এর আগে স্টিভ জবস অসুস্থ থাকাকালীল কুক ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করেন। আমেরিকান ব্যবসায়ী ও অ্যাপল ইনকরপোরেটেড-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হয়ে উঠতে তিনি কোন পথ পেরিয়েছেন জানাব সেই প্রসঙ্গে।
জাহাজঘাটের কর্মী ডোনাল্ড কুক আর গৃহিণী জেরালডিন কুক-এর তিন পুত্রের দ্বিতীয় টিম কুক। খুব যে সচ্ছল পরিবার থেকে এসেছেন তা কিন্তু নয়। তিনি আজ সফল ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম, কিন্তু এই সফলতা এলো আসল কীভাবে, সেই প্রশ্নটা মানুষের জানার জায়গা। অ্যাপলে যোগ দেয়ার প্রায় বারো বছর পর আউবর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সে কথা নিজ মুখেই জানান টিম কুক। বলেন, তার জীবনের সবথেকে বড় অর্জনগুলো এসেছে একটি মাত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে, আর তা হলো তার অ্যাপলে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই কথাটি বলার পর্যায়ে আসতে তাকে অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: জাভেদই ইউটিউবের প্রথম উদ্ভাবক
১৯৯৮ সালের প্রথম ভাগে যখন টিম কুক অ্যাপলে যোগ দেন তখন অ্যাপলের এত ডাকনাম ছিল না মানে বর্তমানের বিশ্ব কাঁপানো পণ্য আইম্যাক, আইপড, আইফোন এবং আইপ্যাডের মতো কোনো পণ্যই বাজারে ছিল না। বরং তখন অ্যাপলের অবস্থা রীতিমতো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ছিল। ১৯৮৫ সালে স্টিভ জবস অ্যাপল ছেড়ে যাওয়ার পর যে পতনের শুরু হয়েছিল, তা সে সময়ে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। ১৯৯৭ সালে স্টিভ জবসকে পুনরায় ফিরিয়ে এনে অ্যাপলের সিইও বানানোর পর তিনি তখনও ঠিকমতো গুছিয়ে উঠতে পারেননি। কোম্পানির লাভের মাত্রা দিন দিন কমে আসছিল। ব্র্যান্ড হিসেবে ক্রেতাদের কাছে আস্থা হারাচ্ছিল। এমন একটি সময়ই টিম কুক অ্যাপলে যোগ দিয়েছিলেন। কোম্পানিটির যখন লোকসান যাচ্ছিল এবং ভাবা হয়েছিল অ্যাপল ধ্বংসের কিনারায় চলে গেছে। টিম কুক তখন অ্যাপলে যোগদানের পূর্বে ডেলের সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ডেল জনসম্মুখে জানান অ্যাপল বন্ধ করে দিয়ে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফিরিয়ে দেয়া উচিত বলে মন্তব্যও করেছিলেন। এই ছিল প্রথম ধাক্কা। পরের ধাক্কা আসে স্টিভ জবসের মৃত্যুর পর, অনেকেই ধারণা করেছিল, অ্যাপল তাদের ব্যবসায় হোঁচট খাবে।
এসবের মাঝে কুক অ্যাপলে যোগ দিয়ে ধীরে ধীরে অ্যাপলের ইনভেন্টরি ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনেন, যার ফলে পণ্যসমূহ পূর্বের চেয়ে তুলনামূলক কম সময়েই গ্রাহকদের হাতে পৌঁছার সুযোগ তৈরি হয়। ২০১১ সালে সিইও পদে যোগ দেয়ার পরই স্টিভ জবস মৃত্যুবরণ করেন। ফলে কুকের সিইও জীবনের শুরুটা তেমন মসৃণ ছিল না। জবসের আদর্শ ধরে কোম্পানি চালানো কোনো সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু কুক সফলভাবে সিইও হিসেবে তার প্রথম বছর পার করেন এবং টাইম ম্যাগাজিনের ‘One Hundred Most Influential people’-এ নিজের নাম লেখান। কিন্তু এ ছিল কেবল শুরু। যেখানে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হতে অ্যাপলের সময় লেগেছে ৪২ বছর, সেখানে ২ ট্রিলিয়নে যেতে কুক সময় নিয়েছে ২ বছর। এ পরিসংখ্যানই বলে দেয়, অ্যাপল কত শক্তিশালী হয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছে। আর সেই অ্যাপেলকে কুক নিজের মতো করে সাজিয়েছেন। তুলনামূলক কম নতুনত্ব এনেও অ্যাপলকে ট্রিলিয়নের ঘরে নিয়ে গিয়েছেন টিম কুক, যা সত্যিই অতুলনীয়।
আরও পড়ুন: ধনী ইউটিউবারদের আয় জানলে অবাক হবেন
টিম কুক অ্যাপলের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেয়ার পরও অ্যাপল বেশ কয়েকটি বড় বিতর্কের সম্মুখীন হয়। কিন্তু সব ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তখন অ্যাপলের থেকে আজকের চিত্র সম্পূর্ণই আলাদা। স্মার্টফোনের বাজারে বরাবরের মতোই তারা তাদের আধিপত্য বজায় রেখেছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করা টিম কুক স্টিভ জবসের সৃষ্টিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। সারা বিশ্বে অ্যাপলের আলাদা একটি ফ্যানবেজ তৈরি হয়েছে এবং একে বিবেচনা করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামি ইলেকট্রনিক ডিভাইস নির্মাতা হিসেবে।
২০১২ সালের শুরুতে অ্যাপল ইনকরপোরেটেডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা টিম কুককে অ্যাপলের ১০ লাখ শেয়ার পুরস্কার হিসেবে প্রদান করে। এসব শেয়ার ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কার্যকর হয়। ২০১২ সাল পর্যন্ত অ্যাপল টিম কুককে প্রায় ৩৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করেছে, যা তাকে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত নির্বাহীদের মধ্যে শীর্ষে নিয়ে গেছে।
]]>