খেলা

আত্মসমর্পণকারী ১০১ আসামির রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ

<![CDATA[

‘কক্সবাজারের টেকনাফে প্রথম দফায় আত্মসমর্পণকারী ১০১ জন ইয়াবা কারবারির বিরুদ্ধে দায়ের করা পুলিশের ২টি মামলায় অভিযুক্তদের দোষী প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র। এতে দায়ের হওয়া ২টি মামলায় অভিযুক্তরা খালাস পাওয়ার যোগ্য হলেও এটা সামাজিকভাবে ভুল বার্তা যাবে। যেহেতু এরা সকলেই নিজদের ইয়াবা কারবারি ও গডফাদার হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন, তাই অস্ত্র মামলায় এদের খালাস দেয়া হলেও মাদক মামলায় সাজা ও জরিমানা করা হয়েছে।’

বুধবার (২৩ নভেম্বর) মামলার রায় ঘোষণার পর্যবেক্ষণ হিসেবে এমন কথা বলেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল।

বিচারক বলেছেন, এ রায় মাদক কারবারে জড়িতদের জন্য শিক্ষণীয় হিসেবে সাজা ও জরিমানা করা হয়। রায় শেষে প্রতিক্রিয়াকালে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর এসব কথা বলেছেন।

আসামিপক্ষের এই আইনজীবী বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হুমকির কারণে নিজেরাই আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন। এদের সকলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। রায়ে তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন।

ঘোষিত রায়ে মাদক মামলায় প্রত্যেককে ১ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে অস্ত্র মামলায় সকলকে খালাসের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে বিচারক রায় পাঠ শুরু করেন। রায় পাঠ শেষে ১০১ জনকে ইয়াবা মামলায় ১ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন। এতে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অবশ্যই পরিশোধের নির্দেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে পুলিশের দায়ের করা অস্ত্র মামলায় সকলকে খালাসের আদেশ দিয়েছেন। রায় ঘোষণাকালে ১৭ জন আসামি আদালতে উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিত ছিল ৮৪ জন।

আরও পড়ুন: আত্মস্বীকৃত ১০১ ইয়াবা কারবারির মামলার রায় আজ

রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবীও সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, এ রায় মাদক কারবারিদের জন্য একটি সতর্কবার্তা বলা যাবে।

ঘোষিত রায়ে ১০১ আসামি কারও নতুন করে সাজা ভোগ করার প্রয়োজন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর জিয়া উদ্দিন আহমদ। তিনি জানান, হাজতবাস সাজার অধীনে হওয়ায় নতুন করে সাজাভোগ করতে হচ্ছে কারও। এখানে প্রতি আসামি ২ বছরের কাছাকাছি হাজতবাস করেছেন। তবে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে করা ২০ হাজার টাকা জরিমানা অবশ্যই প্রতিশোধ করতে হবে। তবে এ বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরে মন্তব্য করার কথা বলেছেন পিপি ফরিদুল আলম।

এ মামলার রায়ে সাজাপ্রাপ্তরা সকলেই অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়াছুর রহমান। তিনি বলেছেন, রায়ে বলা হয়েছে তারা সকলেই আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারি-গডফাদার হিসেবে উল্লেখ করে সাজা ও জরিমানা করা হয়। এতে সকলকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

কক্সবাজার পিপলস্ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেছেন, সাজা ও জরিমানা উভয় কম হয়েছে। তবে আদালত বলেছে এটা প্রতীকী। এর রায় থেকে মাদক কারবারিদের শিক্ষা গ্রহণ জরুরি।

আরও পড়ুন: রাজধানীতে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে গ্রেফতার ৪০

এজাহারের বিবরণ মতে, ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ সৈকতের নিকটবর্তী এলাকায় ইয়াবা ও অস্ত্রসহ একদল ইয়াবা কারবারি অবস্থান নেয়ার খবরে পুলিশ অভিযান চালায়। ওই সময় পুলিশকে ১০২ জন আত্মসমর্পণের ইচ্ছে প্রকাশ করেন। ওই দিন টেকনাফ সদরের টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে ১০২ জন আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারি ও গডফাদার সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা, ৩০টি দেশীয় তৈরি বন্দুক ও ৭০ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করেন। ওইদিনই আত্মসমর্পণকারী ১০২ জনকে আসামি করে টেকনাফ মডেল থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়। বাদী হয়ে মামলাটি করেন টেকনাফ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) শরীফ ইবনে আলম। পরিদর্শক এবিএমএস দোহাকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। মামলা দায়েরের দিনই আদালতের মাধ্যমে সকল আসামিকে গ্রেফতার দেখিয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। ১০২ জন আসামির মধ্যে মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট মোহাম্মদ রাসেল নামে এক আসামি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহ এর আদালত ১০১ আসামির বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরবর্তীতে মামলাটি বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। একই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল সকল আসামির উপস্থিতিতে শুনানি শেষে মামলার চার্জ গঠন করেন। বিচার শেষে ১৫ নভেম্বর মামলার রায় ঘোষণার জন্য ২৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

আদালতে উপস্থিত ১৭ আসামি হলেন– নুরুল হুদা, শাহ আলম, আব্দুর রহমান, ফরিদ আলম, মাহবুব আলম, রশিদ আহমেদ, মোহাম্মদ তৈয়ব, জাফর আলম, মোহাম্মদ হাশেম ওরফে আংকু, আবু তৈয়ব, আলী নেওয়াজ, মোহাম্মদ আইয়ুব, কামাল হোসেন, নুরুল বশর ওরফে কালাভাই, আব্দুল করিম ওরফে করিম মাঝি, দিল মোহাম্মদ ও মো. সাকের মিয়া ওরফে সাকের মাঝি।

আরও পড়ুন: গ্রেফতার আসামিকে ছিনিয়ে আনতে গ্রেফতার ২

অনুপস্থিত ৮৪ আসামি হলেন– সাবেক এমপি বদির ভাই আব্দুর শুক্কুর, বদির ভাই আমিনুর রহমান ওরফে আব্দুল আমিন, দিদার মিয়া, বদির ভাগনে মো. সাহেদ রহমান নিপু, আব্দুল আমিন, নুরুল আমিন, বদির ভাই শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক, বদির ভাই ফয়সাল রহমান, এনামুল হক ওরফে এনাম মেম্বার, একরাম হোসেন, ছৈয়দ হোসেন, বদির বেয়াই সাহেদ কামাল ওরফে সাহেদ, মৌলভী বশির আহমদ, আব্দুর রহমান, মোজাম্মেল হক, জোবাইর হোসেন, নুরুল বশর ওরফে কাউন্সিলার নুরশাদ, বদির  ফুপাত ভাই কামরুল হাসান রাসেল, বর্তমানে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ওরফে জিহাদ, মোহাম্মদ শাহ, নুরুল কবির, মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু, মোহাম্মদ ইউনুচ, ছৈয়দ হোসেন ওরফে ছৈয়দু, মোহাম্মদ জামাল ওরফে জামাল মেম্বার, মোহাম্মদ হোছাইন, মো. হাসান আব্দুল্লাহ, রেজাউল করিম ওরফে রেজাউল মেম্বার, মো. আবু তাহের, রমজান আলী, মোহাম্মদ আফছার, হাবিবুর রহমান ওরফে নুর হাবিব, শামসুল আলম ওরফে শামশু মেম্বার, মোহাম্মদ ইসমাঈল, আব্দুল গনি, মোহাম্মদ আলী, জামাল হোসেন, আব্দুল হামিদ, নজরুল ইসলাম, মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে দানু, মোহাম্মদ সিরাজ, মোহাম্মদ আলম, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, হোসেন আলী, নুরুল কবির মিঝি, শাহ আজম, জাফর আহমেদ ওরফে জাফর, রুস্তম আলী, নুরুল আলম, শফি উল্লাহ, মো. জহুর আলম, মোহাম্মদ হুসাইন, মোহাম্মদ সিদ্দিক, রবিউল আলম, মঞ্জুর আলী, হামিদ হোসেন, মোহাম্মদ আলম, নুরুল আমিন, বোরহান উদ্দিন, ইমান হোসেন, মোহাম্মদ হারুন, শওকত আলম, হোছাইন আহম্মদ, মোহাম্মদ আইয়ুব, মো. আবু ছৈয়দ, মো. রহিম উল্লাহ, মোহাম্মদ রফিক, মোহাম্মদ সেলিম, নুর মোহাম্মদ, বদির খালাত ভাই মং অং থেইন ওরফে মমচি, মোহাম্মদ হেলাল, বদিউর রহমান ওরফে বদুরান, ছৈয়দ আলী, মোহাম্মদ হাছন, নুরুল আলম, আব্দুল কুদ্দুস, আলী আহম্মেদ, আলমগীর ফয়সাল ওরফে লিটন, জাহাঙ্গীর আলম, নুরুল আলম, সামছুল আলম শামীম, মোহাম্মদ ইউনুচ, নুরুল আফসার ওরফে আফসার উদ্দিন ও মোহাম্মদ শাহজাহান আনছারী।

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!