আবারও এলএনজির স্পট মার্কেটে ঝুঁকছে সরকার
<![CDATA[
জ্বালানি সংকট কাটাতে আবারও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) স্পট মার্কেটে ঝুঁকছে সরকার। আগামী মাসে এক কার্গো এলএনজি কেনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যার ওপর নির্ভর করে আরও অন্তত ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগান বাড়াতে চায় জ্বালানি বিভাগ।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমরা নিজস্ব গ্যাসের জোগান কিছুটা বাড়িয়েছি। এরই মধ্যে খুবই সামান্য পরিমাণ গ্যাস স্পট মার্কেট থেকে কেনার ব্যবস্থা করছি। সুতরাং, আমি মনে করি স্পট মার্কেটের গ্যাস আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু আমরা শিল্পখাতের গ্যাসের দাম সমন্বয় করেছি, সেহেতু স্পট থেকে গ্যাস কিনতে পারব। শিল্পখাতের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ খাতের সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য আমরা স্পট থেকে গ্যাস নিতে চাচ্ছি। এ ছাড়া অন্যান্য খাতেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করা হবে।’
তুলনামূলক কম চাহিদা থাকা সত্ত্বেও শীত মৌসুমেও জ্বালানি সংকটে ধুঁকছে শিল্পসহ বিভিন্ন খাত। সরবরাহ না থাকায় প্রায় দুই ডজন বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ পড়ে আছে। সেচ, রমজান ও গ্রীষ্ম মৌসুম সামনে থাকায়, মাসখানেকের মধ্যেই পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকবে গ্যাস-বিদ্যুৎ দুইয়েরই চাহিদা।
আরও পড়ুন: ভোলার গ্যাস আসবে আগামী মাসেই: প্রতিমন্ত্রী
এমন পরিস্থিতিতে সংকট থেকে কিছুটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচার নানা পথ খুঁজছে জ্বালানি বিভাগ। তারই একটি হচ্ছে, আবারও স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির এ সিদ্ধান্ত। গত জুলাইয়ে স্পটের এলএনজি কেনা বন্ধ করে দেয়ার মূল কারণ ছিল ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আকাশচুম্বী দাম। তবে সে অবস্থার পরিবর্তন কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে নীতিনির্ধারকদের। একসময় ইউনিটপ্রতি ৬০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া স্পটের এলএনজি এখন নেমে এসেছে ২০ ডলারে। অন্যদিকে জ্বালানির দাম বাড়ালেও ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের নিশ্চয়তা।
সব দিক বিবেচনায় তাই আগামী মাস থেকে আবারও স্পট মার্কেটের এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে যেখানে গ্যাসের দৈনিক জোগান ২ হাজার ৬৫০ থেকে ২ হাজার ৭২০ মিলিয়ন ঘনফুটের ঘরে; এর মধ্যে নিজস্ব উৎস থেকে আসে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ২৫০ ঘনফুট ও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় আসে ৪০০ থেকে ৪৯০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি।
তবে স্পটের এলএনজির ওপর ভর করে সেটি দৈনিক ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি রাখতে চায় জ্বালানি বিভাগ। এর মধ্যে নিজস্ব উৎস হবে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট ও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও স্পটের এলএনজি হবে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
আরও পড়ুন: গ্যাস নিয়ে মন্ত্রণালয়ে বিজিএমইএর চিঠি
তবে বাড়তি গ্যাসের জোগান কিছুটা স্বস্তিজাগানিয়া হলেও চাহিদার বিপরীতে যথেষ্ট নয়। দিনে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহের পরও ঘাটতি থেকে যাবে আরও ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। সে ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার খাতগুলোকে প্রাধান্য দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শক সালেক সুফি।
তিনি বলেন, বর্তমান মুহূর্তে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্তটি যথাযথ। তা না হলে আমাদের দিনশেষে ভুগতে হবে। আমাদের অগ্রাধিকারমূলক খাত নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আসে শিল্পখাত। কারণ, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যদি গ্যাস দেয়া হয় এবং সেটি ঠিকমতো চলে, বিশেষ করে রফতানির মতো শিল্প, তাহলে সেটি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবে। যেটি আমাদের এ মুহূর্তে ভীষণভাবে দরকার। এর পরে যতটুকু সম্ভব বিদ্যুৎকে দিতে হবে।
তবে সংকট কাটাতে কেবল উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানি নয়, নিজস্ব গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো ও অপচয় কমানোর দিকেও নজর দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
]]>




