অনেকেই ভাবেন আম খেলে ওজন বাড়ে। পাশাপাশি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
তবে আসল ব্যাপার হল মৌসুমি ফল আম দেহের নানান রকম পুষ্টির চাহিদা মেটায়। আর মোটা হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও ঠিক নয়।
‘দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় পুষ্টিবিদ পুজা মাখিজা বলেন, “আমে রেয়েছে ভিটামিন এ, সি, কপার এবং ফোলাট। আর চর্বির পরিমাণ মাত্র এক শতাংশ।”
আর এই ফল হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখার পাশাপাশি এর ভোজ্য আঁশ হৃদরোগ ও টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
আমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ‘খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান’ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারাহ মাসুদা জানান-
পাকা আমে ক্যারোটিনের মাত্রা বেশি।
প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ২৭৪০ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন থাকে। আম শ্বেতসারের ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ২০ গ্রাম শ্বেতসার পাওয়া যায়। রয়েছে ১০৭ ক্যালরি, ৩ গ্রাম আঁশ, ২৪ গ্রাম শর্করা। এছাড়াও এতে রয়েছে ২৫৭ মি.গ্রা. পটাসিয়াম, ০.২ মি.গ্রা ভিটামিন বি-৬।
এতে ১.৩ গ্রাম আয়রণ, ১৪ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম, ১৬ মি.গ্রা. ফসফরাস, ১৬ মি.গ্রা. ভিটামিন সি, ০.৯ মি.গ্রা. রিভোফ্লেভিন এবং ০.০৮ মি.গ্রা. থায়ামিন থাকে।
এছাড়াও পাকা আমে রয়েছে ভিটামিন বি-১ ও বি-২।
প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ০.১ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-১ ও ০.০৭ মি.গ্রা. বি-২ রয়েছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ০.৫ গ্রাম খনিজ লবণ থাকে। এতে কিছু পরিমাণ প্রোটিন এবং ফ্যাটও পাওয়া যায়। যেমন প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ১ গ্রাম প্রোটিন ও ০.৭ গ্রাম ফ্যাট থাকে।
দৈনিক চাহিদার ২৫ শতাংশ ভিটামিন ‘এ’ এবং ৭৬ শতাংশ ভিটামিন ‘সি’ আম থেকে মিলতে পারে।
পাকা আমের উপকারিতা সম্পর্কে ফারাহ মাসুদা বলেন, “এর পুষ্টি উপাদান শরীরের নানাভাবে শক্তি জুগিয়ে ও ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে মানবদেহ সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।”
দৈনিক চাহিদার ২৫ শতাংশ ভিটামিন ‘এ পাওয়া যায় আমে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ‘এ’য়ের গুরুত্ব অপরিসীম। পাশপাশি কিডনি, যকৃত, হৃদপিণ্ড ও অন্যান্য অংগপ্রত্যঙ্গ সুস্থ রাখে সাহায্য করে।
– আমের ক্যারোটিন চোখ সুস্থ রাখে, সর্দি-কাশি দূর করে।
– কার্বোহাইড্রেইট কর্মশক্তি যোগায়।
– আমের আয়রন রক্ত শূন্যতা প্রতিরোধ করে।
– ক্যালসিয়াম হাড় সুগঠিত করে, হাড় ও দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখে।
– আমে আছে দৈনিক চাহিদার ৭৬ শতাংশ ভিটামিন ‘সি। ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। দাঁত, মাড়ি, ত্বক ও হাড়ের সুস্থতা রক্ষা করতেও সাহায্য করে ভিটামিন সি।
– এর পটাশিয়াম রক্ত স্বল্পতা দূর করে ও হৃদযন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে।
– এই ফলের আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা হজমে সহায়তা করে। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে।
-আমে থাকা উন্নত ফ্যাটি অ্যাসিড হজম ক্রিয়া উন্নত করে।
– আমে থাকা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, আমের পলিফেনল স্তন ক্যানসারের কোষের বৃদ্ধিকে বাঁধা দেয়। এছাড়াও, কোলন ক্যান্সার, রক্তস্বল্পতা ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
তবে অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়
‘দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতীয় জেষ্ঠ্য পুষ্টিবিদ সৌম্য শতাক্ষী বলেন, “অতিরিক্ত আম খাওয়া ক্ষতিকরও হতে পারে। তাই এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।”
মনে রাখতে হবে দিনের শুরুতে আম খাওয়া উপকারী।
“কারণ খাবারের পরে আম খাওয়া সার্বিক ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি করে।”
তবে পুষ্টিবিদ পুজা মাখিজার মতে, আম তখনই ওজন বাড়াবে যদি তা অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে মিলিয়ে খাওয়া হবে। যেমন- আমের মিল্কশেইক, আইসক্রিম বা ‘ম্যাঙ্গো অ্যান্ড ক্রিম’ ইত্যাদি।
পুজা পরামর্শ দেন, নাস্তা হিসেবে আম খাওয়া ভালো। ভারী খাবার হিসেবে নয়। দিনে একটা আম খাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আমের জুস বানিয়ে পান করতে চাইলে চিনি বা মিষ্টি না মেশালে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।