আশ্রয়ণের ঘর বিক্রি!
<![CDATA[
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. সেলিম রেজার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় উপজেলার শোমসপুর ইউনিয়নের সাতপাখিয়া পুকুরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬ নম্বর ঘরটি মন্টু ব্যাপারীর কাছে বিক্রি করেন তিনি।
মন্টু কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শোমসপুর ইউনিয়নের মৃত আবুহার ব্যাপারীর ছেলে।
এলাকাবাসী জানান, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সাতপাখিয়া গ্রামে ১৩টি ঘর নির্মাণ করে উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে একটি ঘরের বরাদ্দ পেয়েছেন স্থানীয় হারুন অর রশিদ (৭৫)। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে ঘর ও ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়।
কিন্তু সরকারি এই ঘর দখল করে নেন স্থানীয় মো. আবুহার ব্যাপারীর প্রভাবশালী ছেলে মো. মন্টু ব্যাপারী (৪০)। ফলে বরাদ্দ পাওয়ার প্রায় ১০ মাস অতিবাহিত হলেও ঘরের কক্ষে মাথা রেখে এক দিনও ঘুমাতে পারেননি অসহায় এই বৃদ্ধ। কনকনে শীত উপেক্ষা করে বসবাস করছেন ওই ঘরের বারান্দায়। অপরদিকে সেই ঘরেই আয়েশে বসবাস করছে ওই প্রভাবশালী পরিবারটি।
তবে দখলদার মন্টু ব্যাপারীর স্ত্রী মোছা. মুসলিমা খাতুন বলেন, ‘ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমের মাধ্যমে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে গত ২৪ এপ্রিল ঘরটি ক্রয় করেছি। আমার কাছে লিখিত হস্তান্তরনামা আছে। হারুন বৃদ্ধ মানুষ। তাই ঘরের বারান্দায় থাকার জায়গা করে দিছি।’
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমার কিছু বলার নেই। বললে কি টিকে থাকতে পারব। খাচ্ছি, ঘুরছি আর বারান্দায় থাকছি।’
বৃদ্ধ হারুনের মেয়ে খাদিজা খাতুন বলেন, ‘বাবা অসুস্থ। যে যা বলে তা-ই বোঝে। মন্টুরা বাবাকে পাগল বানায়া ঘরে থাকে। আর কনকনে শীতে বাবা থাকেন বারান্দায়। আমরা চাই বাবার ঘরে বাবায় থাকবে। আমরা দেখাশোনা করতে চাই।’
আরও পড়ুন: আশ্রয়ণ প্রকল্পে চাঁদাবাজির অভিযোগে ভাইস চেয়ারম্যানের স্বামী আটক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় দুই ইউপি সদস্য বলেন, ‘ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমই এ ঘটনার মূল হোতা। তিনি টাকা নিয়ে ঘর বিক্রি করে ঝামেলা বাধায় রাখছে। ঘটনার একটা সমাধান হওয়া দরকার। ভাইস চেয়ারম্যানকে আইনের আওতায় আনা উচিত।’
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা ফোনে বলেন, ‘আমার একজন মারা গেছেন, সেখানে আছি আমি। পরে কথা বলছি।’
ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমকে কল দেয়ার ১৫ মিনিট পরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে দেখা মেলে তার। এ সময় তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি দ্রুত মোটরসাইকেল নিয়ে ওই স্থান ত্যাগ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস বলেন, ‘যার নামে ঘর বরাদ্দ, তার দখলেই ঘরটি থাকবে। আর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রি বা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। ঘরটি হস্তান্তর বা বিক্রির একটি ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিয়ে লেনদেন হয় এবং লেনদেনের ঘটনায় যারা জড়িত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
]]>