ইউক্রেনকে নতুন করে যেসব অস্ত্র দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
<![CDATA[
ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে কিয়েভকে উদার হস্তে অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি সপ্তাহে আরও ১৮৫ কোটি ডলারের অস্ত্র দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানী ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউজে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ইউক্রেনের প্রতিটি পদক্ষেপে সঙ্গে রয়েছে। যত দিন প্রয়োজন তত দিন পাশে থাকবে।
এদিকে ওইদিন রাতে মার্কিন কংগ্রেসে দেয়া ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘আপনাদের অর্থ দান নয়। বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রে বিনিয়োগ। আপনারা চাইলে আমাদের জয় দ্রুততর করতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন শুধু যে গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি পাল্টে দিতেও জরুরি। আমাদের কামান রয়েছে সত্য, কিন্তু তা কি যথেষ্ট? সত্যি কথা বলতে, তা যথেষ্ট নয়।’
ইউক্রেনের জন্য নতুন করে যেসব অস্ত্র দিচ্ছে ওয়াশিংটন
এমআইএম-১০৪ প্যাট্রিয়ট: যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও অত্যাধুনিক অস্ত্র হলো ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র প্যাট্রিয়ট। জেলেনস্কি বলেছেন, ‘এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাকে জোরদার করবে।’
ইউক্রেনকে যে ব্যাটারি সরবরাহ করা হয়েছে, তা ৫০ হাজার ফুট উচ্চতার মধ্যে থাকা যুদ্ধবিমান, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ভূপাতিত করতে পারবে। এই ব্যাটারিতে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। যার মূল্য ৪ মিলিয়ন ডলার। ইউক্রেনকে কত সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র দেয়া হয়েছে তা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে পেন্টাগন।
জয়েন্ট ডিরেক্ট অ্যাটাক মিউনিশন্স (জেডিএএমএস): নতুন প্যাকেজে অজ্ঞাত সংখ্যক নির্ভুলভাবে আঘাতে সক্ষম আকাশচর অস্ত্র থাকবে। পেন্টাগন পরে জানিয়েছে, এগুলো জয়েন্ট ডিরেক্ট অ্যাটাক মিউনিশন্স। এগুলো হলো পথ নির্দেশক যন্ত্র। যা বোমায় লাগানোর ফলে তা জিপিএস পথ নির্দেশিত অস্ত্রে পরিণত হয়। এগুলো লক্ষ্যবস্তুর ১৫ ফুটের মধ্যে নির্ভুলভাবে আঘাত করতে পারে। মার্কিন সেনাবাহিনী এই সমরাস্ত্র দিয়ে ২ হাজার পাউন্ডের বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ঘোষণা বাইডেনের
হিমার্স ও এক্সক্যালিবার: এম১৪২ হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (হিমার্স) রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এগুলো দিয়ে ৫৭ মাইল দূরত্বের মধ্যে রুশ অবস্থানে নির্ভুলভাবে আক্রমণ চালাতে পারছে ইউক্রেনীয় সেনারা।
ইউক্রেনকে এরইমধ্যে সরবরাহ করা ২০টি হিমার্সের জন্য এবার কী পরিমাণ গোলাবারুদ দেয়া হচ্ছে তা প্রকাশ করা হয়নি। ইউক্রেনের কাছে হিমার্সের কাছাকাছি মানের ১০টি অস্ত্র হয়েছে। যেমন, জার্মান মার্স, ব্রিটিশ এম২৭০বি১। যুক্তরাষ্ট্র আরও ১৮টি হিমার্স ব্যবস্থা ইউক্রেনকে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
সর্বশেষ প্যাকেজে ৫০০টি নির্ভুলভাবে আঘাতে সক্ষম ১৫৫এমএম কামানের গোলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এগুলো এক্সক্যালিবার নামে পরিচিত। ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা জানিয়েছেন, এই কামানের গোলা খুব কার্যকর, দূর থেকে শত্রুদের যানবাহন ধ্বংস করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করতে পারে।
এজিএম-৮৮ এইচএআরএম তেজস্ক্রিয়তা বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র: যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত দ্রতগতির অ্যান্টি-র্যাডিয়েশন ক্ষেপণাস্ত্র (হার্মস) ব্যবহার করছে ইউক্রেন। দূর থেকে রাশিয়ার বিমান বিধ্বংসী ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে রাশিয়া দাবি করেছে, বেলগরোদ অঞ্চলে এমন চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে তাদের সেনাবাহিনী।
হার্ম মোটামুটি পুরনো অস্ত্র। এগুলো প্রথম মোতায়েন করা হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ১৪ ফুট দীর্ঘ, ওজন ৮০০ পাউন্ড। লক্ষ্যবস্তুর ১৪ ফুটের মধ্যে এটি আঘাতে সক্ষম।
আরও পড়ুন: মার্কিন কংগ্রেসে জেলেনস্কির ভাষণ
কুগার ও হাম্বি: শীতে বৃষ্টি ও কাদায় ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর অগ্রগতি মন্থর হয়ে গেছে। ট্যাংকস ও অপর সাঁজোয়া যান এমন সময়ের যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ হলেও হালকা ও গোয়েন্দা যান শত্রু রেখায় অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে। নতুন প্যাকেজে আরো ৩৭টি মাইন প্রতিরোধী কুগার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া হাম্বি নামে পরিচিত ১২০টি হাই মোবিলিটি মাল্টিপারপোজ হুইলড ভেহিক্যালও রয়েছে এই প্যাকেজে।
এখন পর্যন্ত কত ডলার সহায়তা দিয়েছে
দীর্ঘদিন টানাপোড়েন চলার পর অবশেষে চলতি বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপরই দেশটির রাজধানী কিয়েভ অভিমুখে অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রতিরোধ শুরু করলে শুরু হয় সংঘাত।
এরপর প্রায় গত ১০ মাস ধরে সেই সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। এই অভিযানে এরইমধ্যে খেরসন, ঝাপোরিজ্জিয়া, দনেৎস্ক ও লুহানস্ক— ইউক্রেনের এই চারটি প্রদেশ নিজেদের সীমানাভুক্ত করেছে রাশিয়া। শতকরা হিসেবে দেশটির মোট ভূখণ্ডের তুলনায় এই চার প্রদেশের আয়তন ১৫ শতাংশ।
যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউক্রেনকে আর্থিক ও সমরাস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা। ইউরোপের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার পরিমাণ অবশ্য অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্যমতে, চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সামরিক ও বেসামরিক সহায়তা মিলিয়ে ইউক্রেনকে ২০ বিলিয়ন ডলারের মতো সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলছেন, এখন পর্যন্ত ১৮.৬ বিলিয়ন সামরিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে হামলার জন্য তৃতীয় শক্তি দায়ী: পুতিন
তবে বেসরকারি হিসাব মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গত ৯ মাসে কিয়েভকে প্রায় ৬৮ বিলিয়ন দেয়া হয়েছে। যেমনটা বলছেন সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রোগ্রামের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মার্ক এফ কানসিয়ান।
সিএসআইএস’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘এইড টু ইউক্রেন এক্সপ্লেইনড ইন সিক্স চার্টস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনের শুরুতেই কানসিয়ান বলেন, ‘ইউক্রেনকে এখন পর্যন্ত মোট ৬৮ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আরও ৩৭.৭ বিলিয়ন ডলার সরবরাহের জন্য কংগ্রেসের কাছে আবেদন জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। খুব শিগগিরই এই সহায়তা প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা শুরু করবে কংগ্রেস।’
]]>