আইন-আদালতদুর্নীতি

ইভ্যালির গ্রাহকের টাকার কী হবে?

মো: মিজানুর রহমান (পলাশ)

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। তাদের মধ্যে অনেকেই ইভ্যালির কাছে টাকা দিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন, হারিয়েছেন সর্বস্ব। অনেকেই লাখ লাখ টাকা দিয়েছেন। গ্রেপ্তারের খবরে তার বাসার সামনে ছুটে যান শত শত গ্রাহক। তাদের চোখে মুখে দেখা গেছে হতাশার ছাপ। তাদের প্রশ্ন, আমাদের টাকার কী হবে?

 

হতাশ গ্রাহকরা বলেন, আমরা রাসেল ভাইয়ের গ্রেপ্তার চাই না। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই। গ্রেপ্তার হলে তো আমাদের টাকা পাব না। এ সময় তারা তাদের বিনিয়োগকৃত টাকা ফিরিয়ে দিতে সরকারের কাছে দাবি জানান।

তারা বলেন, রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হলে গ্রাহকরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্ণধারদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কেউই তাদের বিনিয়োগ করা অর্থ ফেরত পাননি।
বিনিয়োগকারী এক গ্রাহক বলেন, ইভ্যালির রাসেলকে যথাযথ নজরদারির মধ্যে রেখে আরও কিছুদিন সময় দেওয়া উচিত। একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে তাকে গ্রাহকদের টাকা ফেরত বা পণ্য দিতে বাধ্য করা যেতে পারে। তাকে ধরে নিয়ে গেলে গ্রাহকরা পণ্য বা টাকা কিছুই পাবে না।
আরেকজন গ্রাহক বলেন, আমরা তার (রাসেলের) গ্রেপ্তারের খবর শুনে এসেছি। আমরা উনার (রাসেলের) গ্রেপ্তার চাই না। আমরা চাই রাসেল ভাই সময় চেয়েছে আমরা সময় দিতে রাজি আছি।
আরেক গ্রাহক বলেন, এতদিন পরে কেন উনাকে এ্যারেস্ট করতে হবে। গত বছর যখন উনার ব্যাংক এ্যাকউন্টগুলো ওপেন করে দেওয়া হলো তখন তো সবাই আবার কনফিডেন্টলি বিনিয়োগ করল। এতগুলো মানুষের টাকা অনিশ্চিত হয়ে গেল। সরকার শুধু গ্রেপ্তার করেই দায় সারতে পারবে না। আমরা আশা করি, আমরা যারা টাকা পায় তাদের টাকা পরিশোধ করার ব্যবস্থা করবে সরকার।
উৎকণ্ঠা নিয়ে ইভ্যালিতে টাকা দেওয়া আরও একজন বলেন, ‘আমার টাকার কী হবে, কার কাছে যাব? এতদিন তো ভেবেছি, টাকা দেবে। গ্রেপ্তার না হলে রাসেলের বাসায় অথবা অফিসে যোগাযোগ করা যেত। কিন্তু এখন কার কাছে যাব। টাকা না পেলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’
এরআগে বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং তার স্বামী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেলকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাদেরকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাবের গাড়িতে করে সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন র‍্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এদিকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় করা অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার দিকে আরিফ বাকের নামে এক ভুক্তভোগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন জমা দেন। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গুলশান থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) আনিন্দ্য।
আবেদনের অভিযোগে জানা যায়, ইভ্যালির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে আরিফ বাকের ও তার কয়েকজন বন্ধু চলতি বছরের মে ও জুন মাসে কিছু পণ্য অর্ডার করেন। সব পণ্যের জন্য নির্ধারিত টাকাও পরিশোধ করেন তারা। তবে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি করার কথা থাকলেও দিনের পর দিন পার হয়ে গেলেও পণ্য বুঝিয়ে দেয়নি ইভ্যালি। পরবর্তীতে গত ৯ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির ধানমন্ডির অফিসে পণ্যে চাইতে গেলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ভুক্তভোগীকে পণ্য বুঝিয়ে না দিয়ে বরং ভয়ভীতি দেখান।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!