ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনার পর প্রেসিডেন্ট আলভির অনুমোদন
<![CDATA[
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ও জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ কমিটির (সিজেসিএসসি) চেয়ারম্যান নিয়োগ অনুমোদন করেছেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনার পর অনুমোদন দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মুনিরকে পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান (চিফ অব আর্মি স্টাফ) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পাক সেনাবাহিনীর শীর্ষ এ জেনারেল বর্তমানে সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিদায়ী সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার স্থলাভিষিক্ত হবেন মুনির। একই সঙ্গে লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান (সিজেসিএসসি) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বিদায়ী চেয়ারম্যান নাদিম রেজার স্থানে বসবেন তিনি।
এদিন এক ঘোষণায় পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মুনিরকে সেনাপ্রধান ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান আসিম মুনির
এদিনই সেনাবাহিনীর শীর্ষ দুই পদের নিয়োগে নিজের মনোনীতদের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট আলভিকে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নিয়োগের সারসংক্ষেপ শোনার পরই লাহোরের উদ্দেশে যাত্রা করেন প্রেসিডেন্ট আলভি। চলতি মাসে লংমার্চে বন্দুকধারীর গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর থেকে এই লাহোরেই অবস্থান করছেন পিটিআই প্রধান ইমরান খান।
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন মতে, বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে লাহোরের জামান পার্কে পিটিআই প্রধানের বাসভবনে ইমরান খান ও প্রেসিডেন্ট আলভির মধ্যে বৈঠক হয়। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলা ওই বৈঠকে নতুন সেনাপ্রধান ও জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান নিয়োগ সম্পর্কিত বিষয়, নিয়োগ নিয়ে পিটিআই’র অবস্থান ও শনিবার (২৬ নভেম্বর) রাওয়ালপিন্ডিতে পিটিআই’র দলীয় কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
বৈঠকের সময় সেখানে পিটিআই নেতা শাহ মাহমুদ কুরেশি, আসাদ ওমর ও ফাওয়াদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর জামান পার্কের বাসভবনের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, প্রেসিডেন্ট আলভি ও ইমরান খান সেনাপ্রধান নিয়োগ নিয়ে কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ আঞ্চলিক রাজনীতিতে কেন গুরুত্বপূর্ণ
বৈঠকের পরই প্রেসিডেন্ট আলভি রাজধানী ইসলামাবাদে ফিরে আসেন। ফিরেই নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের নিয়োগের নথিতে স্বাক্ষর করেন তিনি। কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তার বড় ভাই ও ক্ষমতাসীন দলের প্রধান নেতা নওয়াজ শরিফের সঙ্গে আলোচনার জন্য লন্ডনে যান। সেসময় এতে গুরুতর আপত্তি জানিয়েছিল ইমরানের পিটিআই।
এর পর সেনাপ্রধান নিয়োগের ব্যাপারে এক বক্তব্যে ইমরান খান বলেন, তার দৃঢ় বিশ্বাস, পরবর্তী সেনাপ্রধান নিয়োগ চূড়ান্ত করার আগে বিষয়টি নিয়ে তার (ইমরানের) সঙ্গে আলোচনা করবেন প্রেসিডেন্ট আলভি। তার কথায়, ‘সেনাপ্রধান নিয়োগের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি নিশ্চিতভাবেই আমার সঙ্গে পরামর্শ করবেন।’
পাকিস্তানের বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া চলতি মাসের শেষে অবসরে যাচ্ছেন। তার অবসরের মাত্র ছয়দিন আগে নতুন সেনাপ্রধান মনোনীত করেন শাহবাজ। ২০১৬ সালে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান বাজওয়া।
২০১৯ সালের আগস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার মেয়াদ আরও তিন বছরের জন্য বৃদ্ধি করেন। ফলে দুই মেয়াদে মোট ছয় বছর পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তানের ৬ লাখ সদস্যের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দিলেন ৬২ বছর বয়সী এই জেনারেল।
সেনাবাহিনীর নতুন প্রধান কে হবেন তা নিয়ে ইমরান খান ও ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উত্তেজনা ছিল চরমে। এই বিষয়টি উত্তেজনা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা ছিল, কারণ আরিফ আলভি দীর্ঘদিন ইমরান খানের বিশ্বস্ত সহকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন এবং বর্তমানে দেশটির প্রেসিডেন্ট।
আরও পড়ুন: একাত্তর নিয়ে যা বললেন পাকিস্তানের বিদায়ী সেনাপ্রধান
পাকিস্তানে অনেক সময় প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে আলোচনাকে ছাড়িয়ে যায় সেনাপ্রধান নিয়োগের আলোচনা। এবারও তেমনটাই দেখা গেছে। এমনিতেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের সম্পর্ক সবসময়ই জটিল। তবে বর্তমানে দেশটির সেনাবাহিনী ও পিটিআই প্রধান ইমরান খানের মধ্যকার বিবাদের কারণে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে।
প্রেসিডেন্ট আলভি নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ নিয়ে শাহবাজের সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেবেন কিনা সেটি নিয়েও ছিল শঙ্কা। এ কারণেই সেনাপ্রধান নিয়োগের পরপরই পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ আশা প্রকাশ করেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি এই নিয়োগকে ‘বিতর্কিত’ করবেন না এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজের পরামর্শকে সমর্থন করবেন।
তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্টের উচিত প্রধানমন্ত্রীর ‘পরামর্শকে’ সমর্থন করা যাতে ‘বিতর্কের সৃষ্টি না হয়’। তার ভাষায়, ‘এটি আমাদের দেশ ও অর্থনীতিকে সঠিক পথে যেতে সহায়তা করবে। বর্তমানে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে।’ শেষ পর্যন্ত সেনাপ্রধান নিয়োগে শাহবাজের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন প্রেসিডেন্ট আলভি। তবে শাহবাজের সিদ্ধান্ত অনুমোদনের আগে ইমরানের সঙ্গে আলভির বৈঠককে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
]]>