ইলন মাস্কের টুইটার নিয়ে তামাশার শেষ কোথায়?
<![CDATA[
টুইটারের প্রধান নির্বাহীর পদ ছাড়া না-ছাড়া নিয়ে ফের হেঁয়ালি ইলন মাস্কের। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) এক টুইটে তিনি বলেন, টুইটারের প্রধান নির্বাহীর পদ নিতে আগ্রহী তার মতো একজন বোকাকে পাওয়া মাত্রই তিনি পদত্যাগ করবেন। এরপর তিনি শুধু প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার ও সার্ভারবিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
মূলত এ টুইটকে কেন্দ্র করেই নতুন করে শুরু হয়েছে তর্ক-বিতর্ক। আসলেই কি টুইটারের সিইও পদ ছাড়তে চান ইলন মাস্ক। নাকি এসবই তার স্বভাবসুলভ তামাশার অংশ।
এর আগে হঠাৎ করেই রোববার (১৮ ডিসেম্বর)) বিশ্বকাপ ফাইনালের দিন তার টুইটারের প্রধান নির্বাহীর পদে থাকা না-থাকা নিয়ে এক গণভোটের ঘোষণা দেন।
তিনি দাবি করেন, গণভোটের রায়ে চূড়ান্ত হবে তার টুইটারের প্রধান নির্বাহী পদ। অর্থাৎ, সংখ্যাগরিষ্ঠ টুইটার ব্যবহারকারী যদি রায় দেন, তার প্রধান নির্বাহীর পদ ছাড়ার ব্যাপারে, তবে তিনি পদ ছেড়ে দেবেন।
শেষে দেখা যায় অধিকাংশ ভোট পড়েছে তার টুইটার পদ ছাড়ার পক্ষে। সব মিলিয়ে তার পদ ছাড়ার পক্ষে ভোট পড়ে ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ, অপরদিকে পদে থাকার পক্ষে ভোট পড়ে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। ভোটাভুটিতে অংশ নেন ১ কোটি ৭৫ লাখ ২ হাজার ৩৯১ জন টুইটার ব্যবহারকারী।
গণভোটের ফলাফলের পর থেকে মাঝের দুই থেকে তিন দিন আর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি ইলন মাস্কের। এ সময়টায় তিনি বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল উপভোগ করেন কাতারে। সেখানে তাকে দেখা যায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে খোশ আলাপে।
এর পর মঙ্গলবার ফের টুইট করে বিষয়টি উসকে দেন তিনি। আর এ টুইট নিয়ে সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশার। কারণ, আসলে তিনি টুইটারের প্রধান নির্বাহীর পদ ছাড়বেন কি না, তা নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি টুইটে। অনেকে অবশ্য মাস্কের এসব কাণ্ডকারখানাকে তামাশা হিসেবেই মনে করছেন। মূলত বিশ্বকাপের উন্মাদনায় বিশ্ব মিডিয়ায় নিজেকে আলোচিত রাখতেই এসব উদ্ভট কর্মকাণ্ড মাস্কের মনে করা হচ্ছে এমনটাই।
আবার কোনো কোনো মার্কিন মিডিয়া খবর দিচ্ছে, সত্যিই প্রধান নির্বাহীর পদ ছাড়তে যাচ্ছেন ইলন মাস্ক। এ ব্যাপারে সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মাস্ক টুইটারের প্রধান নির্বাহীর পদে নিয়োগ দিতে কর্মী খুঁজছেন। মাস্কের গণভোটের ঘোষণার আগেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছিল সিএনবিসি।
আরও পড়ুন: টুইটারের বিরুদ্ধে ভয়ংকর অভিযোগ
ইলন মাস্ক মূলত আলোচনায় আসেন তার বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার বদৌলতে। টেসলার বৈদ্যুতিক গাড়ি বেচেই তিনি লাভ করেন বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তকমা। এ ছাড়া তার মহাকাশ পর্যটন সংস্থা স্পেস এক্স কিংবা উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট সার্ভিস স্টারলিংকের সৌজন্যেও কয়েক বছর ধরেই আলোচিত তিনি। এসব আলোচনার বেশির ভাগই ছিল ইতিবাচক। নতুন নতুন ধ্যানধারণা এবং ভিন্নধর্মী ব্যবসায়িক চেতনার জন্য বিভিন্ন মহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন তিনি।
এরপরই শুরু হয় ইলন মাস্কের টুইটারপর্ব। হুট করেই তিনি কিনে ফেলেন টুইটারের উল্লেখযোগ্য শেয়ার। বর্তমানে বিশ্বের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে টুইটারের সক্ষমতা রয়েছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার। তবে টুইটার কর্তৃপক্ষের নীতিমালা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ সমস্যা সমাধানে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে পুরো টুইটারকেই কিনে নেয়ার ঘোষণা দেন ইলন মাস্ক।
এরপর থেকেই তার টুইটার কেনা নিয়ে শুরু হয় নানা নাটক। শেষ পর্যন্ত কয়েক মাস ধরে নানাভাবে জল ঘোলা করে গত অক্টোবরের শেষের দিকে টুইটারের মালিকানা লাভ করেন ইলন মাস্ক। আর মালিক হয়েই তিনি চাকরি খান টুইটারের প্রধান নির্বাহী পরাগ আগরওয়াল, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা নেড সেগালসহ আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার। এরপর নিজেই প্রধান নির্বাহী হয়ে বসে পড়েন টুইটারের মাথার ওপর। নেন একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত হলো খরচ কমানোর কথা বলে প্রায় অর্ধেক কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত। মাস্ক দাবি করেন, এ অপরিহার্য নয় এমন কর্মীদের ছাঁটাই করা হয়েছে টুইটারের লোকসান কমাতে। কারণ, প্রতিদিন চল্লিশ লাখ ডলার লোকসান করছে টুইটার। তার আরেকটি কাণ্ড হলো টুইটারের কর্মীদের জন্য বরাদ্দ বিনা পয়সায় দুপুরের খাবারের সুযোগ বন্ধ করা।
আরও পড়ুন: টুইটারের সিইও পদ ছাড়বেন ইলন মাস্ক, তবে…
সমালোচকরা বলছেন, টুইটারকে কেন্দ্র করে মাস্কের দ্বৈতনীতি বা কথার বরখেলাপের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। কারণ, এর আগে টুইটার কেনার প্রধান কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, অথচ টুইটারের মালিকানা হাতে পেয়েই তিনি বন্ধ করে দেন টুইটারের ট্রুথ অ্যান্ড সেফটি কাউন্সিল। এ ফোরামটির কাজ ছিল টুইটারে হয়রানি বন্ধে কাজ করা। পাশাপাশি তিনি হেট স্পিচ বা বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য বন্ধ করে দেয়া বেশ কিছু অ্যাকাউন্টও চালু করেন। এ ছাড়া টুইটারে তার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটিতে হেট স্পিচ-এর প্রাদুর্ভাব অনেক বেড়ে গেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তবে টুইটার নিয়ে ইলন মাস্কের এসব কর্মকাণ্ডের প্রভাব পড়ছে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ও ব্র্যান্ডিংয়ে। পাশাপাশি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিজ্ঞাপনদাতারাও। অথচ টুইটারের আয়ের প্রধান উৎসই হচ্ছে এর বিজ্ঞাপন। এ ছাড়া টুইটারের নতুন পেইড সাবস্ক্রিপশন সার্ভিস টুইটার ব্লু নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। কারণ, অধিকাংশ বিজ্ঞাপনদাতাই এ পেইড সাবস্ক্রিপশনের বিষয়টিকে সমর্থন করছেন না।
অবশ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারের মতে, তামাশা নয় সত্যিই সত্যিই টুইটারের জন্য নতুন প্রধান নির্বাহী খুঁজছেন মাস্ক। এর কারণ হিসেবে তারা বলছে, মাস্কের ওপর টেসলার শেয়ারহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীদের চাপকে। কারণ, টুইটারের পাশাপাশি টেসলারও প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। পত্রিকাটির মতে, টুইটারের দিকে মাস্কের বেশি মনোযোগের কারণে ক্ষতি হচ্ছে টেসলার ব্যবসায়। ইতোমধ্যে চলতি বছরে টেসলার শেয়ারের মূল্য কমে গেছে প্রায় ৬১ শতাংশ। এ জন্য টুইটারের পদ ছাড়তে ইলন মাস্কের ওপর চাপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে টেসলার পক্ষে।
তবে তামাশা হোক কিংবা সত্যিই সত্যিই টুইটারের জন্য নতুন সিইও খোঁজার উদ্যোগ হোক, ইলন মাস্কের এসব কর্মকাণ্ডে বিব্রত হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। পাশাপাশি বিভ্রান্ত হচ্ছেন এর ব্যবহারকারী ও বিনিয়োগকারীরা।
]]>