ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান
<![CDATA[
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার নিয়ে ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন একদল ডেমোক্র্যাট সিনেটর। আইনপ্রণেতারা বলছেন, টুইটারের মালিকানা কেনার পর মাস্ক এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছেন যা প্লাটফর্মটির নিরাপত্তা ও সংহতির ক্ষতি করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ফেডারেল ট্রেডিং কমিশনের (এফটিসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
গত মাসে টুইটারের মালিকানা কিনে নেন বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার কর্ণধার তিনি। সফল এই ব্যবসায়ী টুইটারকে লাভজনক করতে এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে।
কর্মীরা যখন দলে দলে চাকরি ছাড়ছেন, ঠিক তখন মাস্কের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানালেন ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতারা। বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) ফেডারেল ট্রেড কমিশন বরাবর লেখা এক চিঠি পাঠান সাতজন সিনেটরের একটি দল। চিঠিতে তারা বলেন, ‘ইলন মাস্ক মালিকানাধীন টুইটার ব্যবহারকারীদের স্বার্থকে উপেক্ষা করে কাজ করছে।
চিঠিতে স্বাক্ষর করা আইনপ্রণেতাদের মধ্যে সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেনথাল ও সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনও রয়েছেন। ফেডারেল ট্রেডিং কমিশনের (এফটিসি) কাছে লেখা চিঠিতে টুইটার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বিবেচনারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: টুইটার সদর দফতরে মাস্কবিরোধী প্রচারণা
মাস্ক টুইটারের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরপরই কয়েক হাজার কর্মী ছাটাই করেছেন মাস্ক। আগে কোম্পানিতে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কর্মী ছিল। এছাড়া ছিল কয়েক হাজার চুক্তিভিত্তিক কর্মীও। যাদের অধিকাংশকেই ছাঁটাই করা হয়েছে বলে মনে করা যাচ্ছে।
এছাড়া শ্রম আইন অনুযায়ী, আট ঘণ্টা কাজ করার কথা থাকলেও সম্প্রতি কর্মীদের আরও বেশি সময় ধরে কাজ করার অবৈধ নির্দেশনা দেন মাস্ক। নির্দেশনা না মানলে চাকরি ছেড়ে দেয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
এদিকে ইলন মাস্কের সাম্প্রতিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জেরে টুইটার সদর দফতরের ডিজিটাল ওয়ালে মাস্কবিরোধী প্রচারণা শুরু করেছেন প্রতিষ্ঠানকর্মীর কর্মীরা। এতে মাস্ককে ‘অযোগ্য বিলিয়নিয়ার’ ও ‘লোভী’র পাশাপাশি ‘বর্ণবাদী’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে নানা মহল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে টুইটারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির পতনের আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
চলতি সম্প্রতি টুইটারের কর্মীদের দীর্ঘ সময় মন দিয়ে কাজ করার বাধ্যতামূলক শর্ত দেন ইলন মাস্ক। সিদ্ধান্ত জানানোর শেষ সময় ছিল গত বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বিকাল ৫টা পর্যন্ত। তবে তার এই প্রস্তাবে রাজি হননি কয়েকশ কর্মী। এরপরই আগামী সোমবার নাগাদ সব অফিস বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায় টুইটার কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: টুইটার অফিস সাময়িক বন্ধ
মাস্ক বলেছিলেন, শর্তে রাজি না হলে চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। সেই পথেই হেঁটেছেন কয়েকশ কর্মী। চাকরি ছাড়ার পর হ্যাশট্যাগ ও ইমোজি ব্যবহার করে টুইটারেই নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছেন তারা। কর্মীদের অনেকে নানা হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানান। কেউ কেউ স্যালুট ইমোজি দিয়ে কোম্পানিটি ছাড়ার কথা জানান দেন।
টুইটারের সাবেক এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার মনে হয়, যখন বাস্তব অবস্থা প্রকাশ পাবে, তখন দুই হাজারেরও কম কর্মী অবশিষ্ট থাকবেন।’ কর্মীরা বলছেন, এমনও হয়েছে একটি টিমের সবাইকে ছাঁটাই করা হয়েছে। ওই কর্মী বলেন, ওই টিমের ব্যবস্থাপক ও তার ব্যবস্থাপককেও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ওই টিমের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিটি প্রথম দিন চাকরিচ্যুত হওয়া নির্বাহীদের একজন। ফলে এই চেইন অব কমান্ডে আর কেউই নেই।
আরেক কর্মী জানান, দীর্ঘ সময় কাজ করার জন্য প্রস্তুত হলেও তারা পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এমন কোনো ব্যক্তির জন্য কাজ করতে চাই না, যিনি ই–মেইলে আমাদের একাধিকবার হুমকি দিয়ে বলেছেন—শুধু অসাধারণ টুইটার কর্মীদের এখানে কাজ করা উচিত। অথচ তখনো আমি সপ্তাহে ৬০ থেকে ৭০ ঘণ্টা কাজ করছিলাম।’
]]>