ইসরাইলি গোয়েন্দার সঙ্গে বিএনপি নেতার বৈঠকের পক্ষে সাফাই নুরের
<![CDATA[
সম্প্রতি সৌদি আরবে ওমরা হজ পালন করতে যান গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর। সেখান থেকে তিনি দুবাই গিয়ে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তার সে সাক্ষাতের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ছবিকে কেন্দ্র করে নানা নাটকীয়তা করেছেন তিনি। কখনও ছবিকে এডিট বলে দাবি করেছেন, আবার কখনও স্বীকার করেছেন বৈঠক করার ঘটনা।
ছবিতে দেখা যায়, একটি রেস্টুরেন্টের সামনে মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন নুরুল হক নুর।
নুরের আগে ২০১৬ সালে বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী বিদেশে মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে দুজনের ছবি ফাঁস হয়ে গেলে দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। একপর্যায়ে আসলাম চৌধুরীর দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশ জানায়, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের উদ্দেশে আসলাম চৌধুরী ইসরায়েলি নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এদিকে দেশে ফিরে আসলাম চৌধুরীর পক্ষে সাফাই গাইলেন গণঅধিকার পরিষদের এ সদস্য সচিব।
আরও পড়ুন: দেশে ফিরেই জামায়াত নেতাকে ‘মানবতাবাদী’ বললেন নুর
এক ভিডিও বক্তব্যে নুর বলেন, ‘বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর অন্য কোনো মামলা আছে কি না আমি সেটা জানি না। কিন্তু পত্রপত্রিকায় যেটি আলোচিত হয়েছে তিনি ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার কথিত এই লোক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করার অপরাধে সরকার তাকে কারাগারে রেখেছে। সে মিটিং করেছে কি করেনি, সেটা কিন্তু আমরা জানি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসলাম চৌধুরীর মতো একজন নেতা বিএনপির মতো একটি দল যারা একাধিকবার ক্ষমতায় ছিল তাদের দলের একটা যুগ্ম মহাসচিব লেভেলের লোক। তার সঙ্গে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার মিটিং হতেই পারে। সেজন্য সরকার তো তাকে গ্রেফতার করতে পারে না।’
বিএনপির সমালোচনা করে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব বলেন, ‘বিএনপিও এ বিষয়টি নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করেছিল। সেটা বিএনপির উচিত হয়নি। তাদের দলের একজন নেতা, তার পক্ষে বিএনপির অবস্থান থাকা উচিত ছিল।’
যদিও আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে নিজের ঘটনার মিল নেই বলে জানান নুর।
শুধু তাই নয়, ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর দেশে ফিরেই জামায়াতের পক্ষে বক্তব্য দেন নুরুল হক নুর।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জঙ্গিবাদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার অপরাধে গ্রেফতার জামায়াত ইসলামের আমিরের প্রসঙ্গ তুলে তাকে ‘মানবতাবাদী লোক’ হিসেবে অভিহিত করেন।
নুর নিজের নিরাপত্তা হুমকির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘জামায়েতের আমিরের মতো একজন মানবতাবাদী লোককেও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যারা জেলে নিতে পারে আমাকে নেয়া তো তাদের জন্য কোনো ব্যাপার না।’
গত ১৩ ডিসেম্বর জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানকে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) গ্রেফতার করে। এর আগে সরাসরি জঙ্গিদের সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেফতার করা হয় তার ছেলে চিকিৎসক রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহ। ছেলে জঙ্গি ট্রেনিংয়ের জন্য হিজরত করে এবং তার ছেলে একটা গ্রুপসহ বান্দরবানের পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা করে যেতে না পেরে শফিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরবর্তীতে জামায়াত আমির তাকে (ছেলেকে) নিরাপদে ফিরিয়ে আনার সব ব্যবস্থা করেন। এ সবকিছু প্রমাণীত এবং শফিকুর রহমান এ সব কথা স্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন: ইসরাইলি গোয়েন্দার সঙ্গে ছবি তোলার কথা স্বীকার নুরের
কিন্তু তার জঙ্গি সম্পৃক্ততাকে নুর ‘জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ’ এবং মুক্তিযুদ্ধকালে যুদ্ধাপরাধ করা এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে সাম্প্রদায়ীক উসকানিমূলক কার্যক্রমে জড়িত জামায়াত ইসলামের নেতাকে ‘মানবতাবাদী লোক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করে যে নুর দেশের মৌলবাদী ডানপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে যাচ্ছেন।
অবশ্য সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হওয়া নুরের জন্য নতুন কিছু নয়। জনপ্রিয়তা অর্জনের শুরু থেকেই তিনি বিভিন্ন সময় তার রূপ বদলেছেন। ডাকসু নির্বাচনে তার ডাকে সাড়া দিয়ে যখন বাম বেশ কিছু দল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়, সেখানেই নিজে পদত্যাগ করেননি নুরুল হক নুর।
]]>




