ইসরাইলের ক্ষমতায় ফিরছেন নেতানিয়াহু?
<![CDATA[
সাড়ে তিন বছরের মধ্যে পঞ্চমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন ইসরাইলি ভোটাররা। মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) সকালে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। কয়েক বছর ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অচলায়তন ভেঙে বেরিয়ে একটি স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠাই এ নির্বাচনের লক্ষ্য।
তবে এ নির্বাচনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে দুর্নীতির অভিযোগে বিচারাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কট্টর ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর আবারও ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা।
গত বছর দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন নেতানিয়াহু। তখন অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন, এই দুর্নীতিবাজের হাত থেকে অবশেষে মুক্তি পাওয়া গেল।
কিন্তু এটি যে কেবল সাময়িক মুক্তি, তা হয়তো অনেকেই আন্দাজ করতে পারেননি। এখন এই নেতানিয়াহুই ফের ক্ষমতায় আসতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকার গঠন করতে পারেন নেতানিয়াহু
জনমত জরিপে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন কট্টর ডানপন্থি জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর তাকে ছাড়া একটি স্থিতিশীল সরকার গঠনে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই এই অবিশ্বাস্য কাণ্ডটি ঘটতে চলেছে।
জনমত জরিপে নেতানিয়াহু এগিয়ে থাকলেও তার ডানপন্থি লিকুদ পার্টি, গোড়া ইহুদি ও অন্যান্য কট্টর ডানপন্থি দলগুলো মিলে সরকার গড়তে প্রয়োজনীয় ৬১টি আসন নিশ্চিত করা থেকে এখনও অনেকটা দূরে রয়েছে।
তবে নেতানিয়াহুর জোট যদি শেষ পর্যন্ত ৬১টি আসন জোগাড় করতে সক্ষম হয়, নেতানিয়াহুই হবেন প্রধানমন্ত্রী। সে ক্ষেত্রে তার মন্ত্রিসভা কট্টর ডানপন্থার চেহারাই পাবে। নেতানিয়াহু আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এবার প্রধানমন্ত্রী হলে ডানপন্থিদের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিক ইতামার বেন জিভির মতো কট্টরপন্থিদের নিয়েও সরকার গড়বেন তিনি।
নেতানিয়াহুর সম্ভাব্য সেই মন্ত্রিসভা নিয়ে জনমনে এরই মধ্যে একটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এর কারণ কট্টর ডানপন্থি ইতামার বেন জিভির ইসরাইলের নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি চরমপন্থি গোষ্ঠী থেকে উঠে এসেছেন।
অতীতে তার বিরুদ্ধে সরাসরি সন্ত্রাসবাদকে সহযোগিতার অভিযোগ এমনকি ওই অভিযোগে অভিযুক্তও হয়েছিলেন তিনি। আজও তিনি সেই দৃষ্টিভঙ্গিই পোষণ করেন। স্থানীয় আরবদের ‘ইসরাইল রাষ্ট্রবিরোধী’ অভিহিত করে তাদের বাস্তুচ্যুত করার পক্ষে ওকালতি করেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইলপন্থি গোষ্ঠী এআইপিএসি বা আইপ্যাক ইতামার বেন জিভির ও তার নেতৃত্বাধীন কট্টর ইহুদিবাদী দল জিইয়িশ পাওয়ার পার্টির কঠোর সমালোচনা করে আসছে। আইপ্যাকের মতে, জিইয়িশ পাওয়ার পার্টি একটি বর্ণবাদী দল। তবে নেতানিয়াহু বলছেন, বেন জিভির আগের অবস্থান বদলে এখন ‘মডারেট’ তথা ‘মধ্যপন্থি’ হয়ে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী হলে বিচারব্যবস্থার ডানা ছাঁটবেন নেতানিয়াহু
আশঙ্কাটা ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। সরকার গঠন করেই নেতানিয়াহু ও তার সহযোগীরা বিচারব্যবস্থার ডানা ছাঁটতে চান। বিষয়টি এরই মধ্যে খোলাসা করেছেন নেতানিয়াহুর আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী বেজালেল স্টরিচ।
বিচারব্যবস্থার কিছু ক্ষমতা কেড়ে নিতে এরই মধ্যে বেশ কিছু আইন প্রস্তাব করেছেন তিনি। ফৌজদারি আইনের কিছু ধারাও বদলে ফেলতে পারেন নেতানিয়াহু। যাতে দুর্নীতির মামলায় নেতানিয়াহুকে জালিয়াতি ও বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া যায়।
ফিলিস্তিনিদের আশু মুক্তি নেই
কয়েক বছর ধরেই নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন বিরোধী রাজনীতিকরা। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ অনেক অভিযোগই করেছেন তারা। অথচ তাদের কেউই ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংঘাতের ব্যাপারে তার নীতিকে চ্যালেঞ্জ করতে আগ্রহী হননি।
ফিলিস্তিনি মানবাধিকারের প্রশ্নে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা তার কার্বন কপি বলেই মনে হচ্ছে। ক্ষমতায় যাওয়ার উচ্চাকাঙক্ষার কারণেই তারা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন।
]]>




