উপনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন আ.লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা
<![CDATA[
জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপি দলীয় এমপিদের পদত্যাগের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রোববার (১৫ জানুয়ারি) এ নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। তবে এর একদিন আগেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেন আওয়ামী লীগের তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে তারা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপনির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারকারী প্রার্থীরা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ) নেতা শাহজাহান সাজু।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রার্থীদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় কার্যালয়ে হওয়া এই বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচন আর মাত্র এক বছর বাকি। এর আগে এই উপনির্বাচন থেকে দলের প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোর জন্য বলা হয়। দলের কৌশলগত কারণে এমন সিধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার দলের সতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ওই আসনে দল কোনো প্রার্থী দেয়নি। সেক্ষেত্রে দলের কথা বলে কেউ প্রার্থী হতে পারেন না। দলের প্রার্থী না দেয়ার সিদ্ধান্তের কথাটি প্রার্থীদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। শুনেছি আজ তারা তাদের প্রার্থীতা সেচ্ছায় প্রত্যাহার করেছেন।
এ অবস্থায় আসনটি কপাল খুলতে পাড়ে সদ্য বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া বিএনপির সাবেক সাংসদ আব্দুস সাত্তার ভূইয়ার।
এদিকে সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের এক সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা অভিযোগ করে বলেছিলেন, সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সাত্তারকে সরকার নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন। সরকার সেটা সফলভাবে করেছে। তাকে চাপ দিয়ে এই নির্বাচনে আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশকে পেছনের দিকে নেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে: কামরুল ইসলাম
সাত্তার প্রসঙ্গে একই কথা বলেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লু রহমান জিল্লু। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস পাওয়ার পরই তিনি (উকিল আব্দুস সাত্তার ) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তার সঙ্গে তৃণমূল বিএনপির কেউ নেই।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এ আসনে আট প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন- পদত্যাগ পরবর্তী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক সাংসদ উকিল আব্দুস সাত্তার ভূইয়া, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাসানী, আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ ও জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জুয়েল।
মনোনয়ন বাতিল হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক, স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফ উদ্দিন মন্তু, শাহ মফিজ, মোহন মিয়া ও আব্দুর রহিম। হলফনামায় সাক্ষর, এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর, ব্যাংক স্টেটমেন্ট দাখিল না করাসহ বিভিন্ন ত্রুটির কারণে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
বাকি ৫ জন প্রার্থী হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এই আসনের ৫ বারের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি থেকে পদত্যাগকারী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এই আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য, বর্তমানে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত নেতা অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানী, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ ও জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রাজনীতি বিশ্লেষক জানান, মূলত কৌশলগত কারণে এখানে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। এ আসনে পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বিএনপির নেত্রী ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা। আব্দুস সাত্তারের জয়লাভের মধ্য দিয়ে যেন এখানে তার ইমেজ ঠিক থাকে এর সুযোগ নিতে চায় আওয়ামী লীগ। কেননা, আওয়ামী লীগ মনে করছে আব্দুস সাত্তারের চেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা রুমি ফারহানার। পরবর্তী নির্বাচনে আব্দুস সাত্তার থাকলে আওয়ামী লীগের জন্য জয়লাভ অনেকটা সহজ হবে।
আরও পড়ুন: নির্যাতন যত হবে, আন্দোলনের গতি ততই বাড়বে: মির্জা ফখরুল
এর আগে ১৯৭৩ সালের পর ওই সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়নি। সারা দেশে যখন আওয়ামী লীগের জোয়ার, তখনও (২০১৮) জোটের মারপ্যাঁচে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ায় সেখানে নিজেদের প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। সেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ভরাডুবি হয়। নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূইয়া জয়লাভ করেন, যিনি পাঁচবারের সংসদ সদস্য।
ব্যক্তিগত ও এলাকায় দলীয় অবস্থান বিবেচনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে সামান্য ভোটে হেরে যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. মঈন উদ্দিন মঈন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগের ওই নেতা হেরে যান বলে মনে করা হয়।
ভোটের আগে বেশ আলোচনায় আসেন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা পাঁচবারের সংসদ সদস্য ৮৪ বছর বয়সী আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করে ক্ষোভে দল থেকে পদত্যাগ করেন। তার নামে কেনা হয় মনোনয়নপত্র। এর পরপরই তাকে দল থেকে বহিষ্কারের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। সর্বশেষ সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
]]>