খেলা

এশিয়াকে কেন সস্তায় তেল দিচ্ছে রাশিয়া

<![CDATA[

সম্প্রতি রাশিয়ার জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয়ায় বিশ্ববাজারে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা। এ অবস্থায় প্রধান তেল-উৎপাদনকারী দেশগুলো যখন বিশ্বব্যাপী তেলের দাম একই ধারায় রাখতে আগ্রহী, তখন এশিয়ার ক্রেতাদের জন্য হ্রাসকৃত মূল্যে তেল সরবরাহ করছে রাশিয়া। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে আগে থেকেই পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার তেল-গ্যাসের বৃহত্তম ক্রেতা হয়ে উঠেছে এশিয়ার অনেক দেশ, বিশেষ করে ভারত ও চীন।

রাশিয়া থেকে কী পরিমাণ তেল যাচ্ছে এশিয়ায়?
চলতি বছরের শুরুতে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির পরিমাণ তলানিতে থাকলেও জুন ও জুলাই মাসে তা পৌঁছায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে। নভেম্বর পর্যন্ত আমদানির এই ধারা অব্যাহত ছিল।

রুশ তেলের আরেক বড় ক্রেতা চীন। গত ফেব্রুয়ারিতে রুশ সেনারা ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর ক্রেমলিনের সঙ্গে বেইজিংয়ের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ওঠানামা করলেও পরবর্তী মাসগুলোতে তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে হ্রাসকৃত মূল্যে তেল বিক্রি করে রাশিয়া। ওই মাসেই রাশিয়া থেকে চীন ও ভারতের সম্মিলিত তেল আমদানি ছাড়িয়ে যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রকে। এছাড়া নভেম্বরের শেষ দিকে এসে রাশিয়া থেকে নতুন করে তেল আমদানি বাড়িয়েছে ভারত।

কেপলারের তেল বিশ্লেষক ম্যাট স্মিথের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের পরিবর্তে রাশিয়ার তেলের বড় গন্তব্য এখন ভারত। ডিসেম্বরেও একই মাত্রায় তেল সরবরাহ অব্যাহত থাকলে ভারতে একক বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী দেশ হয়ে উঠতে পারে রাশিয়া।

হ্রাসকৃত মূল্যে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল কেনার সুযোগ নিচ্ছে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়া শ্রীলঙ্কাও। এছাড়া তেল কেনার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করছে পাকিস্তান, যদিও এখনো তাদের মধ্যে কোনো চুক্তি হয়নি।

হিতে বিপরীত হবে কি
ইউক্রেনে আক্রমণের পর রাশিয়ার ইউরাল অপরিশোধিত তেলের ক্রেতা কমে যায়। একপর্যায়ে ব্রেন্ট ক্রুডের তুলনায় রাশিয়ান ইউরাল ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেলে কমে যায় ৩০ ডলারের বেশি। সেপ্টেম্বরে দাম কমতে কমতে ব্যারেল প্রতি নেমে আসে ২০ ডলারে।

যুক্তরাষ্ট্র-পশ্চিমাদের আপত্তি সত্বেও ভারত সরকার রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখে। দিল্লির পক্ষ থেকে বলা হয়, যেখান থেকে সবচেয়ে সস্তায় পাবে, সেখান থেকেই জ্বালানি তেল সংগ্রহ করবে তারা।

আরও পড়ুন: রাশিয়ার বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

মার্কিন সরকার শুরুতে ভারতের এই উদ্যোগের সমালোচনা করলেও, সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে তারা। ভারতের রুশ তেল কেনায় কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে ইউক্রেনে আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় সমুদ্রপথে রাশিয়ার তেল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ান তেলের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে এবং তেলের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। যেখান থেকে মূলত মস্কোই লাভবান হবে।

তবে আন্তর্জাতিক বাজারে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলার নির্ধারণ করে দেয়ার পর ভারত এবং চীনের মতো হ্রাসকৃত মূল্যে তেল কেনা দেশগুলোর ওপর তা কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।

মস্কো বলছে, তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয়া জি-সেভেনের পদক্ষেপে যোগদানকারী দেশগুলোর কাছে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হবে।

কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষক মারিয়া শাগিনা বলছেন, ইইউর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এশিয়ায় সস্তায় তেল রফতানি রাশিয়ার জন্য ‘বেশি ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং কষ্টকর’ হবে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কী?
রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের দাম আকর্ষণীয় হলেও, ভারতের শোধনাগারগুলো তা কিনতে গিয়ে অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। কারণ রুশ ব্যাংকগুলোর ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রভাবিত করছে লেনদেনকে।
ভারতের বিবেচনা করা বিকল্পগুলোর মধ্যে একটি ছিল স্থানীয় মুদ্রার ওপর ভিত্তি করে একটি ব্যবস্থা চালু করা। যেখানে রাশিয়ায় ভারতীয় রফতানিকারকরা মার্কিন ডলার বা ইউরোর পরিবর্তে রুবলে অর্থ প্ররিশোধ করবে এবং আমদানির জন্য দেয়া হবে রুপি। যদিও সেই পরিকল্পনা ফলপ্রসূ হয়নি।

তবে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল প্রতিষ্ঠানগুলো তেল ক্রয়ের অর্থায়নে ডলারের পরিবর্তে চীনা মুদ্রাই ব্যবহার করছে।

আরও পড়ুন: পশ্চিমাদের ধোঁকায় ইউক্রেন সংকট জটিল হচ্ছে: পুতিন

রাশিয়ার কী পরিমাণ গ্যাস এশিয়ায় যায়?
ভারতের মোট গ্যাসের চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ আসে বিদেশ থেকে। রাশিয়ার তুলনায় যার বেশিরভাগই ভারত আমদানি করে উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে।

শিল্পপণ্য বিশেষজ্ঞ আন্তোনিও পেসিসিয়া জানান, ভারতে রাশিয়ান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ খুবই কম। গত বছর সাতটি কার্গো গেলেও, চলতি বছর এখন পর্যন্ত পাঁচটি রাশিয়া থেকে ভারতে গেছে পাঁচটি কার্গো।

অন্যদিকে চীন তার বেশিরভাগ গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে মধ্য এশিয়া থেকে আমদানি করে। বর্তমানে দেশটির বৃহত্তম সরবরাহকারী তুর্কমেনিস্তান।

কিন্তু এই দশকের শেষ দিকে ‘সাইবেরিয়া পাওয়ার’ নামের নতুন পাইপলাইনের কাজ শেষ হলে, চীনের সবচেয়ে বড় গ্যাস সরবরাহকারী দেশ হতে পারে রাশিয়া। এছাড়া এ বছর রাশিয়া থেকে এলএনজি আমদানি বাড়িয়েছে চীন। যদিও চীনের বেশিরভাগ এলএনজি এখনও অন্যান্য দেশ থেকেই আসে। আর্কটিক হয়ে সমুদ্রপথে রাশিয়ান এলএনজি পরিবহনের জন্য নতুন চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছে চীন।

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!