ওয়াশিংটন ডিসিতে কোনো সামরিক অভ্যুত্থান হয়নি কেন?
<![CDATA[
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক (আইসিটি) উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে এখন পর্যন্ত কোনো ক্যু (অভ্যুত্থান/সামরিক অভ্যুত্থান) হয়নি কেন? কারণ, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো দূতাবাস নেই!
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজে এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।
সম্প্রতি গুমের অভিযোগ তোলা ব্যক্তির স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বর্বরতার শিকার পরিবারের তোপের মুখে পড়েন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রাজধানীর শাহীনবাগ এলাকায় বর্তমান সরকারের আমলে গুমের শিকারের অভিযোগ তোলা সাজেদুল ইসলাম সুমনের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে যান।
খবর পেয়ে সেখানে জড়ো হন ১৯৭৭ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনরা। তারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে তুলে ধরেন স্বজন হত্যার খতিয়ান। তবে নির্লিপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি। এ সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে ভিড়তে বাধা দেয় স্বজনদের।
আরও পড়ুন: লক্ষ্য এবার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’: সজীব ওয়াজেদ জয় (ভিডিও)
তারা ‘মায়ের কান্না’ সংগঠনের ব্যানারে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে স্মারকলিপি দেন। সংগঠনের সদস্যরা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে ৪৫ বছর আগের ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সহায়তায় পৃথিবীর মানুষ জানতে পারবেন বিচারের নামে নির্বিচার প্রহসনের কথা। পাবেন বিচার; এমনটাই আশা স্বজনদের।
১৯৭৭ সালের অক্টোবরে কথিত বিদ্রোহ দমনের নামে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান নির্বিচার ফাঁসি ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের। গুম করা হয় অনেকের মরদেহ। এমনকি স্বজনের মৃত্যুর খবর পেতে, কবরের খোঁজ পেতে কেটে যায় ২০ বছর। ১৯৯৭ সালে পরিবারগুলো জানতে পারে স্বজনের শেষ পরিণতির অবস্থা। সেই থেকে বিচারের আশায় ঘুরছেন দুয়ারে দুয়ারে। বিচারের নামে জিয়ার হাতে খুনের শিকার প্রায় সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা।
এদিকে বাংলাদেশ নিয়ে একের পর এক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ করছেন ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা। গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনের ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রশ্ন জাগাচ্ছে- একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অন্য রাষ্ট্রের দূতাবাস কর্মকর্তাদের এমন আচরণ কতটা শিষ্টাচার সমর্থিত।
গত ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পিটার হাসের দেয়া একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে পিটার হাস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ঢাকায় নিহত (পল্টনে সংঘর্ষে) ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে। আমরা ঢাকায় ভয়ভীতি প্রদর্শন ও রাজনৈতিক সহিংসতার খবরে উদ্বিগ্ন এবং আইনের শাসনকে সম্মান জানাতে এবং সহিংসতা, হয়রানি ও ভয় দেখানো থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আচরণে ঢাবি শিক্ষক সমিতির উদ্বেগ
তিনি আরও বলেন, ‘সহিংসতার এই খবরগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করতে, এবং মত প্রকাশ, সভা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা করতে আমরা সরকারি কর্তৃপক্ষকে উৎসাহিত করছি।’
মূলত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এমন শিষ্টাচার বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত করেই সজীব ওয়াজেদ জয় ওই পোস্ট দিয়েছেন।
এদিকে ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা তাদের দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি দিতে গেলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তাদের কথা না শুনে এড়িয়ে যাওয়ায় এর সমালোচনা করেছেন ৩৪ বিশিষ্ট নাগরিক।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে একথা জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সাবেক ছাত্রদল নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের রাজধানীর শাহীনবাগের বাসায় যান। সে সময় তিনি বেরিয়ে আসার পর ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা তাদের দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি দিতে গেলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তাদের কথা না শুনে এড়িয়ে যান বলে দাবি করেন তারা।
পিটার হাসের এ আচরণকে বিশিষ্টজনরা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বর্হিভূত আচরণ হিসেবে দেখছেন, যা কিনা ভিয়েনা কনভেনশনের (১৯৬১) পরিপন্থী। একইসঙ্গে তার এ ধরনের আচরণ কূটনৈতিক দায়িত্বের পর্যায়ে ফেলা যায় কি-না, নাকি এর মধ্যদিয়ে তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সরাসরি জড়িয়ে পড়লেন এবং বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষভুক্ত হলেন কি-না, এনিয়ে দেশের জনগণের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
]]>