বাংলাদেশ

কতদূর যেতে পারবেন বাইডেন

<![CDATA[

কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন। কংগ্রেসের দুই কক্ষের নিয়ন্ত্রণে দুই দল। ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটদের দখলে রয়েছে উচ্চকক্ষ সিনেট এবং নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রিপাবলিকান পার্টির কাছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফল নিজেদের পক্ষে না গেলেও, দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করার ইঙ্গিত দিয়েছেন বাইডেন। ৮০ বছরের বাইডেন একা নন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তৃতীয় দফায় নির্বাচনে নামার ইঙ্গিত দিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।

তবে বাইডেন ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি। তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রন ক্লেইন, অনিতা দুন, মাইক ডনিলন, স্টিফেন জে. রশেটি এবং জেনিফার ও’ম্যালি ডিলন এরইমধ্যে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের প্রচারণা কৌশল কেমন হবে তার পরিকল্পনা শুরু করেছেন। যদিও এর সবই ভেস্তে যেতে পারে।

বয়স, ঘরে-বাইরে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-ভূরাজনৈতিক চাপ ইত্যাদি সামলে ওঠার ক্ষেত্রে বাইডেন কতটা সফল হবেন তার ওপরও অনেকটা নির্ভর করছে তার আগামী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পার্টির টিকিট লাভ। তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনে সিনেট নিজেদের কব্জায় রাখলেও তা খুব বেশি সুবিধা দেবে না বাইডেনকে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেন উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ঠাঁই করে নিয়েছেন। বহুল পরিচিত জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালপ ১৯৩৫ সাল থেকে যতগুলো জরিপ করেছে তার মধ্যে সবচেয় কম জনপ্রিয় নেতাদের কাতারে উঠে গেছেন বাইডেন-ট্রাম্প।

গত ১৪ নভেম্বর প্রকাশিত এক জরিপ বলছে, ৬৫ শতাংশ মার্কিন নাগরকিই চান না বাইডেন ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। একই সংখ্যক নাগরিক একইভাবে ট্রাম্পকেও নাকচ করেছেন। ফলে বাইডেন নিজের ঘরেই প্রথম ধাক্কা খেয়েছেন।

আরও পড়ুন: মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে পাস ৮৫৮ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বিল

সাধারণ জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তা হারালেও নিজ দলে এখনো কিঞ্চিৎ আশা বোধহয় অবশিষ্ট রয়েছে বাইডেনের জন্য। দলীয় নেতাকর্মীরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর বাইডেনের প্রতি আনুকূল্য দেখিয়েছেন। নির্বাচনের আগে যেখানে ৪৪ শতাংশ নেতাকর্মী বাইডেনের দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের পক্ষে ছিল, নির্বাচনের পর সেই সংখ্যা বেড়ে ৫৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ফলে বাইডেন আশা রাখতেই পারেন। তবে এর বাইরেও আরও বেশ কিছু বিষয় মোকাবিলা করতে হবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কোভিড এবং অন্যান্য কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি প্রবল চাপের মুখে। ইউরোজোনসহ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশেই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি। কমবেশি একই অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রেরও। দেশটিতে মূল্যস্ফীতির বর্তমান হার ৭ শতাংশের বেশি। বেকারত্বের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। আটকে গেছে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ‘স্টুডেন্ট লোন’ পরিশোধের প্রক্রিয়াও। সবমিলিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনে তুলনামূলক ভালো করলেও তা বাইডেনের জন্য প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকশনে ফাইট দেয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।

কেবল ঘরে নয়, বাইরেও সমানতালে লড়তে হবে বাইডেনকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে দূরত্ব খুব একটা প্রকাশ্যে না এলেও দূরত্ব যে রয়েছে তা স্পষ্ট বুঝা যায়। সর্বশেষ, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭ সেভেন প্রস্তাবিত রাশিয়ার জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে দেখেন ইউরোপীয় মিত্ররা। যদিও জি-৭ প্রস্তাবিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যই নির্ধারণ করেছে ইউরোপ তবে এই জ্বালানি শূন্যতা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে সেই বিষয়ে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা যুক্তরাষ্ট্র বা বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে আসেনি।

ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে যে আস্থাহীনতা রয়েছে তা আরও স্পষ্ট হয় মার্কিন থিংকট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশনসের এক নিবন্ধ থেকে। সেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর থেকে দেশটি যে উৎসাহ নিয়ে ইউক্রেনকে সহায়তা দিয়েছে তাতে ভাটা পড়েছে। ইউরোপ সতর্ক করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি পিছু হটে তবে ইউরোপের একার পক্ষে ব্যয় সামলানো সম্ভব হবে না। বিশেষ করে, যুদ্ধের সামগ্রিক দিক সামলানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ক্রিসমাস ট্রি

এদিকে, বাইডেনের প্রতিপক্ষ শিবির থেকে যুদ্ধবিরোধী রব এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে ইতিবাচকভাবে না দেখায় কিয়েভকে অনবরত সহায়তা দেয়া যুক্তরাষ্ট্র তথা বাইডেনের জন্য ভালো ফল বয়ে আনতে নাও পারে। তাই আসছে নির্বাচনকে সামনে রেখে বাইডেনকে অবশ্যই মাপা পদক্ষেপ ফেলতে হবে। যার ফলাফল হিসেবে পশ্চিমা বিশ্বের এই প্রধান দুই কেন্দ্রের মধ্যে সম্পর্কে আরও দূরত্ব তৈরি হতে পারে।

বাইডেনের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে আরও একটি বিষয়। সেটি হলো চীন। বিগত কয়েকমাসে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্ক বেশ শীতল হয়ে গেছে। ওয়াশিংটন চীনা সেমিকন্ডাক্টর-চিপ শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু তাতে মার্কিন চিপ- সেমিকন্ডাক্টর শিল্প কতটা লাভবান হয়েছে সেটা অবশ্য বুঝে উঠতে একটু সময় লাগবে। তবে এই পদক্ষেপ দুই দেশকে আরও দূরে ঠেলে দিয়েছে।

এই দূরত্ব প্রতিফলিত হয়েছে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সৌদি সফরের মধ্য দিয়ে। দেশটিতে শি যে ঊষ্ণ আতিথেয়তা পেয়েছেন তার তুলনায় বলা চলে, চলতি বছরের মাঝামাঝি বাইডেনকে সৌদি সফরে দেয়া আতিথেয়তা অনেকটাই শীতল। সৌদি চীনের সঙ্গে ৩০টিরও বেশি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বিভিন্ন খাতে। চীনে সৌদির তেল সরবরাহও নিরবচ্ছিন্ন রাখার বিষয়ে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। বিপরীতে বাইডেন সৌদি সফরের সময় তেল উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ করলেও এর মাত্র ক’দিন পরই তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংস্থা ওপেক প্লাসের সঙ্গে মিলে তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দেয় সৌদি। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেরে ভাণ্ডারে মজুদ থাকা তেলে হাত দিতে হয়েছে। যা দেশটিকে চাপে ফেলতে পারে।

আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইরানের ‘গভীর সম্পর্ক’ নিয়ে আশঙ্কায় যারা

ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থান এবং অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বাইডেনের খুব একটা অনুকূলে নয়। তারপরও ধরা যাক, বাইডেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নির্বাচনী টিকিট পেলেন। তবে সেই যাত্রাও সহজ হবে না। কারণ, ট্রাম্প ছাড়াও বাইডেনের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার তালিকায় রয়েছে সিনেটর রন ডিস্যান্টিসের নাম। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় এবং হার্ভার্ড ল কলেজের গ্র্যাজুয়েট রন ডিস্যান্টিস এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ-বৈদেশিক সমস্যাবলী নিয়ে যথেষ্ট সোচ্চার এবং এসব বিষয়ে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। যা এরইমধ্যে জনসাধারণের কাছে যথেষ্ঠ আস্থা অর্জন করেছে।

ফলে মধ্যবর্তী নির্বাচনে তুলনামূলক ভালো ফলাফল যতই বাইডেনের আত্মবিশ্বাসের আগুনে সলতে জোগাক না কেন, বাইডেনের বয়স কিন্তু থেমে থাকছে না। ঘরে-বাইরের সমস্যাও কমছে না। তাই বাইডেন টিকিট পেলেই জিতবেন এমনটাও জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।

তথ্যসূত্র: আরব নিউজ, ওয়াশিংটন পোস্ট, কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশনস, সিএনবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস ও ইউএস টুডে

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!