কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুর এক বছর: রাবির স্মরণসভা
<![CDATA[
“হাসান আজিজুল হক আমাদের ছেড়ে যাওয়ার এক বছর হয়ে গেল। বরেণ্য এ লেখক কথাসাহিত্যের জগতে চিরদিন উজ্জ্বল নাম হয়ে থাকবেন। চলার পথে তিনি যে মানবিক যন্ত্রণা পেয়েছেন তার সাহিত্যকর্মে সেটা ফিরে ফিরে এসেছে। দেশভাগের যন্ত্রণা থেকে মুক্তিযুদ্ধের রক্তগঙ্গা ও প্রান্তিক মানুষের জীবনকে এঁকেছেন তার সাহিত্যকর্মে। একজন নিগৃহীত মানুষকে মানবিক বাস্তবতায় ফুটিয়ে তুলতেন গল্পে-গল্পে। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’–তিনি এ বাক্যকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন তার নির্মিত চরিত্রে। মানুষের ইতর স্বভাবকেও তিনি এড়িয়ে না গিয়ে গল্পে তুলে এনেছেন। তিনি ভারত থেকে উদ্বাস্তু হয়ে বাংলায় এসেছিলেন, এটা আমাদের পরম সৌভাগ্য।”
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে বরেণ্য কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় জনসংযোগ দফতর প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডের সঞ্চালনায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা।
তিনি আরও বলেন, ‘মনুষ্য সত্যকে তিনি যে পূর্ণতা দিয়েছেন, তা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উদার ও মানবতাবাদী ছিলেন। তার প্রতি আমাদের যে আবেগ, সেটি মোটেও কাঁচা আবেগ নয়, গভীর আবেগ। এ সচেতন আবেগ ধরে রাখতে পারলে আমাদের কল্যাণ বয়ে আনবে। তিনি আমাদের গভীরে গেঁথে আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমাহিত করতে পেরে আমরা গর্বিত। যদিও এতে আমাদের বেদনা উপশম হয় না।’
এ সময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘হাসান আজিজুল হক শারীরিকভাবে আমাদের মধ্যে নেই, তবে কর্মে তিনি আমাদের মধ্যে আছেন। তিনি শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নন, বাংলাভাষী সব বাঙালির সম্পদ। তিনি একজন সফল শিক্ষক ছিলেন। দর্শনের মতো জটিল বিষয়কে খুব সহজ ও আনন্দদায়ক করে উপস্থাপন করতেন। তিনি তার সাহিত্য নির্মাণে কাদাজল মাখা মানুষকে নিপুণ হাতে তুলে আনতেন। তার নির্মাণশৈলী বাংলা ছোটগল্পের গঠন বিন্যাসে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে।’
আরও পড়ুন: কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৫তম জন্মবার্ষিকী পালিত
উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘ছোটগল্পের রাজপুত্র হাসান আজিজুল হক পুরস্কারের জন্য লিখতেন না। তিনি মানুষের জন্য লিখতেন। উজানের দিকে নৌকা ভাসাতেন, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতেন। ১৯৫০-৬০ সালের দিকে বাংলা সাহিত্যে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন, হাসান আজিজুল হক তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বাংলা সাহিত্যের একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করে গেছেন। তার অসামান্য ভাষাভঙ্গি, অশ্রুতপূর্ব সংলাপ, অনাস্বাদিত চরিত্র নির্মাণ ও অনন্য গল্প বলার যে ধরন, তা ৫০ বছর ধরে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের মুগ্ধ করে রেখেছে। আমরা দর্শন বিভাগকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব দেব যেন হাসান আজিজুল হককে প্রতিবছর স্মৃতিতে স্মরণ করা হয়।’
এ সময় আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ অবায়দুর রহমান প্রামাণিক, দর্শন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নিলুফার আহমেদ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা মলয় কুমার ভৌমিক, অধ্যাপক নুরুল হোসেন, অধ্যাপক আবু বকর, অধ্যাপক জুলফিকার মতিন ও হাসান আজিজুল হকের নাতি অনির্বাণ।
]]>