করোনা ভাইরাস

করোনায় ৬ জেলায় ৬১ জনের মৃত্যু

মো: মিজানুর রহমান (পলাশ)

দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। লকডাউনেও থামানো যাচ্ছে না আক্রান্তের হার। মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দেশের ছয় জেলায় করোনা ও উপসর্গে ৬১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে রোগীর চাপ সামলাতে দিশেহারা হাসপাতালগুলো। তৈরি হয়েছে শয্যা ও অক্সিজেন সংকট। সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন জেলার করোনার চিত্র তুলে ধরা হলো-

রাজশাহী:
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।  
পরিচালক জানিয়েছেন, মৃতদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৫ জন ও উপসর্গে ১৪ জন মারা গেছেন। নেগেটিভ হওয়ার পরেও অন্যান্য জটিলতায় আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে মৃত ২১ জনের মধ্যে রাজশাহীর ১০ জন, পাবনার ৪ জন, নওগাঁর ৪ জন,  চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২, বাকি একজন নাটোরের বাসিন্দা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে করোনা উপসর্গ ও আক্রান্ত হয়ে নতুন ভর্তি হয়েছেন ৪৩ জন। বর্তমানে  হাসপাতালে করোনার জন্য নির্ধারিত ৫১৩টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন ৩৮০ জন। হাসপাতালে করোনার জন্য শয্যা পর্যাপ্ত হলেও সংকট রয়েছে আইসিইউর ভোগান্তিতে থাকছেন মুমূর্ষু রোগীরা।
হাসপাতাল পরিচালক গতকাল বলেছিলেন, রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ ও নতুন রোগীর সংখ্যা নিম্নমুখী হচ্ছে। লকডাউন ও ভ্যাকসিনের সুফলে এ হার আরও কমবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়েছেন হাসপাতালের করোনা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। তবে তার একদিন পরেই মৃত্যুহার বেড়েছে।
ময়মনসিংহ:
ময়মনসিংহ মেডিকেলে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৭ জন করোনা শনাক্ত হয়ে এবং ৮ জন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ময়মনসিংহের ১২ জন, নেত্রকোনার ২ জন ও টাঙ্গাইলের একজন রয়েছেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেলের করোনা ইউনিটের ফোকালপার্সন ডা. মহিউদ্দিন খান মুন জানান, ৪০২ আসনের ডেডিকেটেড করোনা ইউনিটে বর্তমানে রোগী ভর্তি আছেন ৪১১ জন। এর মধ্যে ২১ জন আইসিইউতে আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩১ জন আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৬ জন।
এদিকে জেলায় এক হাজার ৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১৮৮ জনের শরীরে। পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণের হার ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ।
চাঁদপুর:
চাঁদপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ জন চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এবং ৩ জন কচুয়া উপজেলা হাসপাতালে মারা যান। একই সময় ৬১১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৮৫ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এতে সংক্রমণের হার ৩০.২৭ শতাংশ। এই নিয়ে চাঁদপুরে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন সাড়ে ১২ হাজার। মারা গেছেন ২ শতাধিক এবং উপসর্গ নিয়ে আরও ৫২০ জন মারা গেছেন।
চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, গত কয়েক দিনের পরিসংখ্যানে মৃত্যু সংখ্যা ওঠানামা করলেও শনাক্ত অনুযায়ী সংক্রমণের হার কমেছে।
তিনি আরো জানান, এখন মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর সংক্রমণ এবং মৃত্যু নির্ভর করছে।
দিনাজপুর:
দিনাজপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কুষ্টিয়া:
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কুষ্টিয়া করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ জনের করোনা পজিটিভ ও ১ জনের করোনা উপসর্গ ছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল মোমেন। জানান, বর্তমানে হাসপাতালে ১৫৮ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী ও ৪১ জন উপসর্গ নিয়ে মোট ১৯৯ জন ভর্তি রয়েছেন।
পিসিআর ল্যাব ও জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৫৭২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৬৬ জনের দেহে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৯.০২% শতাংশ।
কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৩ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া করোনা আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!