‘কাজে দেরি হলে চামচ-খুন্তি দিয়ে খোঁচা দিত’
<![CDATA[
‘কাজে দেরি হলেই মোটা লাঠি দিয়ে পেটাতো। চামচ ও খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে খোঁচা দিত। জোরপূর্বক থুতু ও প্রস্রাব খাওয়াতো আমাকে। বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে দিত না।’
শনিবার (৮ অক্টোবর) এভাবেই গৃহকর্তার বাড়িতে নির্যাতনের কথা বলছিলেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রাবেয়া আক্তার ওরফে আকলিমা (১৭)।
নির্যাতনের শিকার রাবেয়া আক্তার ওরফে আকলিমা বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার উত্তর বারইখালী গ্রামের সুলতান মোল্লার মেয়ে।
হাসপাতালের বিছানায় বসে নির্যাতনের শিকার রাবেয়া জানান, ২০১৫ সালে মাত্র দশ বছর বয়সী রাবেয়াকে একই গ্রামের জালাল হাওলাদারের মাধ্যমে খুলনার নিরালা এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক এসএম সামছুল হকের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজে পাঠায় তার বাবা-মা। সেখানে ৫ বছর কাজ করার পরে, রাবেয়াকে সিলেটে সামছুল হকের মেয়ে তানিয়া সুলতানা লাকির কাছে পাঠানো হয়।
তিন মাস পরে রাবেয়াকে ঢাকার মিরপুরে ছোট বোন নাসরিন সুলতানা লিজার বাসায় পাঠিয়ে দেন লাকি। এতদিন ভালো থাকলেও নাসরিন সুলতানা লিজার বাসায় আসার পরে অমানসিক নির্যাতন শুরু হয় রাবেয়ার ওপর। তিন বছর নির্যাতন সহ্য করে প্রাণ বাঁচাতে শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন নিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় গত ৫ অক্টোবর লিজার ঢাকার বাসা থেকে পালিয়ে মোরেলগঞ্জে বাবার বাড়িতে চলে যান রাবেয়া। পরে শুক্রবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় তাকে।
আরও পড়ুন: ফেসবুকে প্রেমের অভিযোগে প্রেমিককে নির্যাতন, গ্রেফতার ২
রাবেয়া বলেন, সামছুল হক স্যার ও তার বড় মেয়ে সবাই ভালো ছিল। কিন্তু তার ছোট মেয়ে অন্যরকম। প্রতিটা কাজে সময় বেধে দিত। একটু দেরি হলে বা ভুল হলেই মারধর, বকাবকি করত। একদিন ওয়্যারড্রবের ওপর টিকটিকির মল পাওয়ায় আমাকে মুখ দিয়ে পরিষ্কার করায়। আমার মা মারা গেলেও বাড়ি আসতে পরিনি। ওই ম্যাডামের স্বামী অবসরপ্রাপ্ত মেজর মাহফুজুর রহমানের পোস্টিংয়ের কারণে সৈয়দপুর, ঘাটাইল, সাভার, রংপুর হয়ে ঢাকার বাসায় কাজ করছি। কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক দেয়া হতো না। পেটে ভাতে কাজ করতাম। বড় করে বিয়ে দিয়ে দেয়া হবে এমন কথা বলে অনেক ছোট বেলায় বাড়ি থেকে কাজে পাঠানো হয়েছিল।
রাবেয়া আরও বলেন, আমাকে প্রচুর মারধর করত। লাঠি, খুনতি দিয়ে পেটাত। দেয়ালে মাথা আঘাত দিত। সব সময় একটা ভয়ে থাকতাম। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক কাপড়ে আমি পালিয়ে যাই।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শর্মী রায় বলেন, ওই কিশোরীর সারা শরীরেই ক্ষতচিহ্ন আছে। এগুলো বেশ পুরাতন। সবই লাঠি বা এই ধরণের কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন বলে মনে হয়েছে। তিনি দুর্বল ও শরীরের ব্যথার কথা বলেছেন। এখন শারীরিকভাবে তিনি ভালো আছেন। তবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
রাবেয়ার বড় বোন হামিদা বেগম বলেন, বাবার দুই বিয়ে। প্রথম ঘরে আমরা চার বোন। পরের ঘরে ৭ বোন দুই ভাই। অভাবের কারণে ওকে কাজে দেই। বছরে এক দুই বার কথা হতো। আমরা জানতাম ও রংপুরে আছে। ঢাকায় আছে এই কথা আমাদের জানানো হয়নি।
আরও পড়ুন: ভাইকে নির্যাতনের মামলায় মুক্তি পেয়ে এবার বোনকে অপহরণ!
রাবেয়ার চাচা কাঞ্চন মোল্লা বলেন, ওর বাবা এখন এখন মৃত্যু শয্যায়। গত ৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওর বাবার কাছে ফোন করে বলা হয় রাবেয়া ঢাকার বাসা থেকে পালিয়েছে। কিন্তু তার আগে আমাদের জানানোই হয়নি মেয়েটা ঢাকায়। মেয়ে বাড়িতে আসলে আমরা ওসি সামছুল হককে জানাই। তিনি এসে চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন এবং আরও ৬০ হাজার টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি এমন নির্যাতনের বিচার চাই।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক সামছুল হক বলেন, রাবেয়া আমার মেয়ের বাসা থেকে অনেক মালামাল নিয়ে গত বুধবার পালিয়ে গেছে। মিরপুর থানায় জিডি করা হয়েছে। আপনারা শিগগিরই মোরেলগঞ্জ থানার মাধ্যমে মেইল পেয়ে যাবেন। এছাড়া আমার মেয়ে রাবেয়াকে মারধর করেছে তাই মানবিক কারণে মোরেলগঞ্জে গিয়ে তার চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা দিয়ে এসেছি।
]]>