‘কার্তিক আইলেই আমরার চাইল-ডাইলের টান পড়ে’
<![CDATA[
‘কার্তিক মাস আইলেই আমরার চাইল, তেল, ডাইল, নুন আদার টান পড়ে। দুনিয়াজুড়া কোনো কাজকাম নাই। বেডাইন বেট্টিয়াইন ঘর বইয়া দিন কাটায়; এর লাগি অভাব আর যায় না; নিদান পড়ে’।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের টাকাটুকিয়া কান্দাহাটি গ্রামের আশি বছর বয়সের রহিমা বিবি তার কষ্টের কথাগুলো এভাবেই সময় সংবাদকে বলেন।
একই গ্রামের ফেরজুল ইসলামের স্ত্রী ফরিদা বেগম (৩৯) বলেন, তাদের সংসারে চার মেয়ে শ্বশুর-শাশুড়িসহ আট সদস্য রয়েছেন। বিগত মাসগুলোতে মাটিয়ান হাওড়ে মাছ ধরে সংসার চালিয়েছেন স্বামী। এখন ইজারাদারের পাহারাদার হাওড়ে মাছ ধরতে দেয় না।
এদিকে কৃষিজমিগুলো এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে। তাই হাওড়ে মাছ ধরা কৃষিকাজ কোনোটিই নেই। তাই অভাব জেঁকে বসেছে গোটা হাওড় এলাকায়।
ফরিদা বেগমের মেয়ে তাহিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী; জুঁই আক্তার বলে, কান্দাহাটি গ্রামের বেশিরভাগ নারী-পুরুষ এখন বেকার। তাদের কোনো কাজ নেই। মহাজনী ঋণ করে অনেকেই সংসারের খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ঋণের টাকা জ্যৈষ্ঠ মাসে দেড়গুণ সুদে মহাজনকে পরিশোধ করবেন।
হাওড় বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, হাওড় এলাকায় কার্তিক মাসে ও চৈত্র মাসের শুরুতে তীব্র অভাব দেখা দেয়। এটি নিরসনে কোনো সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এসব নিদানে হতদরিদ্র মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্ট করেন।
আরও পড়ুন: ‘হাওর প্রাকৃতিক প্রয়োজনেই সৃষ্টি, অভিযোজন করেই এগিয়ে যেতে হবে’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সারা জেলায় তিন লাখ ৭৮ হাজার ৭০৫টি কৃষিজীবী পরিবার রয়েছে। তাদের মধ্যে ভূমিহীন কৃষক রয়েছেন ৪৯ হাজার ১২৪ জন, প্রান্তিক কৃষক রয়েছেন এক লাখ ২ হাজার ৫৮৪, ক্ষুদ্র কৃষক রয়েছেন এক লাখ ৪৬ হাজার ৮৪৮, মাঝারি শ্রেণির কৃষক রয়েছেন ৬৭ হাজার ৮৯৮, বড় শ্রেণির কৃষক রয়েছেন ১২ হাজার ২৫১।
কার্ডধারী কৃষক রয়েছেন তিন লাখ ৬৫ হাজার ৭৭৭। তাদের মধ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক রয়েছেন দুই লাখ ২৩ হাজার ৮০৭ জন। ভূমিহীন কৃষকদের ০ দশমিক শূন্য ৫ শতক জায়গা, প্রান্তিক কৃষকের ০ দশমিক ৫ শতক থেকে ০ দশমিক ৪৯ একর জায়গা, ক্ষুদ্র কৃষকের শূন্য দশমিক ৫০ একর থেকে ২ দশমিক ৪৯ একর জায়গা, মাঝারি কৃষকের ২ একর ৫০ শতক থেকে ৭ একর ৪৯ শতক জায়গা ও বড় কৃষকের সাড়ে সাত একরের বেশি জায়গা রয়েছে।
কার্তিকের নিদানে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা। মোট ফসলি জমি রয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ১৪৫ হেক্টর। এক ফসলি জমি রয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর, দুই ফসলি জমি রয়েছে ৬৫ হাজার হেক্টর, তিন ফসলি জমি রয়েছে ১৫ হাজার হেক্টর।
এদিকে জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় এক লাখ ২১ হাজার ৭৪৩ জেলে রয়েছেন। কার্ডধারী জেলে রয়েছেন এক লাখ ৩ হাজার ৩০৭জন। জেলায় ২০ একর ও ২০ একরের ঊর্ধ্বে জলমহাল রয়েছে দুই হাজার ৫০০টি।
আরও পড়ুন: নদীর পানি বাড়ছে, বন্যার আশঙ্কা
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বিমল কান্তি সোম বলেন, হাওড় এলাকার কৃষকদের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির মাধ্যমে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে কৃষি বিভাগ সব সময় সহযোগিতা করে থাকে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মণ্ডল জানান, আগামী বছর থেকে হাওড়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকার সময় জেলেদের ৪০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। এ ছাড়া চলতি বছর শান্তিগঞ্জ জগন্নাথপুর ও ছাতক উপজেলায় এক হাজার ৮১২ মৎস্যচাষি ও জেলেকে ফাওয়ের সহযোগিতায় নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হাওড়বাসীর জন্য টিসিবি, ওএমএসসহ বিভিন্ন খাদ্য নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম চালু রয়েছে। এতে হতদরিদ্র মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা তাদের সাহায্য করছে। প্রকৃত জেলেরা যাতে জলমহালের সুফল ভোগী হতে পারেন সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকার ও প্রশাসন সব ধরনের দুর্যোগে হাওড়বাসী পাশে আছেন।
জেলায় মোট ২ হাজার ৮৮৭টি গ্রাম ও ৮৮টি ইউনিয়নে ২৫ লাখেরও বেশি মানুষ বাস করেন।
]]>




