কিডনী রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা
অনলাইন ডেস্কঃ
একজন লোক সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন । বয়স আনুমানিক ৪৫ থেকে ৪৮ হবে । কতই বা আর বয়স ! কিন্তু এই বয়সেই তিনি বাধিয়ে ফেলেছেন দুরারোগ্য কিডনী রোগ । ভর্তি হয়ে আছেন হাসপাতালে। সপ্তায় দু’বার ডায়ালাইসিস করতে হয় ওনার । খরচ ও যায় মোটা অংকে । এতকিছুর পরেও ডাক্তাররা তাকে সুস্থতার তেমন কোন আশা দিতে পারেন নি ।
প্রতি বছর আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বে মঈনুল আহসান এর মতো হাজারো মানুষ কিডনী সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় । অথচ একটু বেছেশুনে খাবার খেলে এবং জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলে কিন্তু মানবদেহের এই অতিপ্রয়োজনীয় অঙ্গটি বেঁচে যায় । আসুন , কিডনী সংক্রান্ত কিছু তথ্য জেনে রাখি । এতে কিডনী রোগের প্রতিরোধ করতে পারবেন সহজেই ।
মানবদেহের কোমরের কিছুটা ওপরে দুই পাশে দুটি কিডনি থাকে। পরিণত বয়সে একটি কিডনি ১১-১৩ সেমি লম্বা, ৫-৬ সেমি চওড়া এবং ৩ সেমি পুরু হয়। একটি কিডনির ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম। তবে বাম কিডনিটি ডান কিডনি অপেক্ষা একটু বড় ও কিছুটা ওপরে থাকে। প্রতিটি কিডনি প্রায় ১২ লাখ নেফ্রন দিয়ে তৈরি। নেফ্রন হলো কিডনির কার্যকর ও গাঠনিক একক। কোনো কারণে এই নেফ্রনগুলো নষ্ট হয়ে গেলে কিডনি দ্রুত অকেজো হয়ে যায়।
কিডনি রোগে সাধারণত একসঙ্গে দুটি কিডনি আক্রান্ত হয়। আমাদের দেহে প্রতিনিয়ত অসংখ্য জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হচ্ছে। এসব বিক্রিয়ায় উত্পন্ন দূষিত পদার্থ রক্তে মিশে যায়। আর কিডনি তার ছাঁকনির মাধ্যমে রক্তকে ছেঁকে পরিশোধিত করে এবং দূষিত পদার্থগুলো (ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, অ্যামোনিয়া, ক্রিয়েটনিন ইত্যাদি) দেহ থেকে মূত্রের সঙ্গে বের করে দেয়। এভাবে কিডনি আমাদের দেহকে বিষাক্ত ও ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থের হাত থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়াও কিডনির অন্যান্য কাজ আছে।
কিডনি রোগ এমনই মারাত্মক যা কোনো প্রকার লক্ষণ বা উপসর্গ ছাড়া খুব ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে। তাই একে নীরব ঘাতক বলে অভিহিত করা হয়। কখনো কখনো রোগী কোনো উপসর্গ বুঝে ওঠার আগেই তার কিডনির শতকরা ৫০ ভাগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিডনি রোগ যেহেতু অনেক প্রকার সেহেতু এর লক্ষণও ভিন্ন ভিন্ন।
কিডনি রোগের প্রধান প্রধান লক্ষণগুলো হচ্ছেঃ
- হঠাৎ করে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া,
- প্রস্রাবে পরিমাণ ও সংখ্যার পরিবর্তন বিশেষ করে রাতে বেশি প্রস্রাব হওয়া,
- প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফেনা হওয়া,
- প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত এবং প্রোটিন যাওয়া,
- চোখের চারপাশে ও পায়ের গোড়ালিতে পানি জমা,
- প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা ও অস্বাভাবিক গন্ধ হওয়া,
- রক্তশূন্যতা বেড়ে যাওয়া,
- মাথাব্যথা ও শরীর চুলকানো এবং বমি বমি ভাব,
- প্রস্রাবের সঙ্গে পাথর বের হওয়া,
- হাত, পা মুখসহ সমস্ত শরীর ফুলে যাওয়া,
- গ্লোমেরুলার ফিল্টারেশন রেট ৯০-এর কম হওয়া ইত্যাদি ।
কিডনী যেভাবে ভালো রাখবেনঃ
- প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস (২ লিটার) বিশুদ্ধ পানি পান করা। তবে ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে অধিক পানি পান করা প্রয়োজন।
- প্রচুর ফল ও সবজি এবং দানা বা বীজ জাতীয় খাদ্য খান যেমন ব্রেড, নুডুলস, বাদাম ইত্যাদি। সপ্তাহে অন্তত একটি কচি ডাবের পানি পান করুন। প্রতিদিন অন্তত চারটি থানকুচি পাতা খেতে হবে। শশা, তরমুজ, লাউ, বাঙ্গি, কমলালেবু, লেবু, মাল্টা, ডালিম, বীট, গাজর, আখের রস, বার্লি, পিয়াজ, সাজনা ইত্যাদি পরিমাণ মতো খেতে হবে।
এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে যাদের প্রসাবের পরিমাণ কমে যায় এবং হাত পায়ে পানি জমে তারা নিয়মিত গোক্ষুর চূর্ণ ৩ গ্রাম পরিমাণে খেলে প্রসাবের পরিমাণ ঠিক হয়ে যায় এবং শরীরে জমে থাকা পানি বা ইউরিক এসিডের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
কিডনি রোগীদের জন্য আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ হলো রক্তচন্দন। রক্ত চন্দন ডাই ডাইরুটিক হিসাবে কাজ করে। এছাড়া প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বন্ধ করে এবং প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও পাথরকুচি পাতার নির্যাস কিডনির পাথর ধ্বংস করতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
যেসব খাবার অবশ্যই বাদ দেবেনঃ গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগীর মাংস, চকোলেট, চকোলেট দুধ, পনির, সস, পিচস, ব্রকোলি, বাদাম, মাশরুম, মিষ্টি কুমড়া, পালংশাক, টমেটো, কলা, খেজুর ও আচার ইত্যাদি ।
আপনার সামান্য অবহেলা বা অসচেতনতা ই ভয়াবহ কিডনী রোগের কারণ হতে পারে । তাই সতর্ক থাকুন, নিয়ন মেনে চলুন , সুস্থ থাকুন ।