কীভাবে এলো চিজ বা পনির?
<![CDATA[
চিজ বা পনির। যে নামেই বলি না কেন, ভোজনরসিক মানুষের পছন্দের তালিকায় থাকে এ খাবারটি। আজকাল রেস্টুরেন্টে সব ধরনের খাবারেই কম-বেশি ব্যবহার করা হয় চিজ। পিৎজা, বার্গার তো আছে, সেই সঙ্গে ডিমের অমলেটেও ইদানীং অনেকেই চিজ ব্যবহার করছেন। সারা বিশ্বে-যে কত ধরনের চিজ আছে তার সঠিক কোনো হিসাব নেই। মোজারেলা, চেডার, গৌডা,পারমিজিয়ানসহ আরও কত কী! কিন্তু এভাবে এসেছে এই খাবার?
একদিন এক যাযাবর ব্যক্তি তার উটকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণে বের হয়েছিলেন। তৃষ্ণা মেটানোর জন্য চামড়ার ব্যাগে করে দুধ নিয়েছিলেন তার সঙ্গে। সে সময় চামড়ার ব্যাগ ছিল যাযাবর জাতির জন্য পানি ও দুধ সংরক্ষণের একটি সুবিধাজনক উপায়। কিছুদূর যাওয়ার পর যখন সেই যাযাবর ব্যক্তি তৃষ্ণা মেটানোর জন্য দুধপান করতে গেলেন, সেই মুহূর্তে দেখলেন তরল দুধ জমে গেছে। সে সময় চিন্তায় পড়ে গেলেন কীভাবে হলো এটি? এর জন্য অবশ্য কিছু যুক্তি দেখিয়েছেন গবেষকরা। পশুর চামড়ার ব্যাগে কিছুটা রেনেট নামক একপ্রকার এনজাইম রস থেকে গিয়েছিল, যা দুধকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করেছে, সেই সঙ্গে সূর্যের উত্তাপ। আর এভাবেই শুরু হয়েছিল চীজ বা পনির তৈরির কাহিনি।
তবে পনিরের সঠিক উৎপত্তিস্থল কোথায় এবং কীভাবে তৈরি হয়েছে তা নিয়ে রয়েছে কিছুটা রহস্য। চিজ তৈরির উদ্ভব কোথায়, তার কোনো সঠিক ও চূড়ান্ত প্রমাণ নেই। সম্ভবত ইউরোপ বা মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য বা সাহারা অঞ্চলে এটির উৎপত্তি হয়ে থাকতে পারে। তবে বিভিন্ন রিসার্চে উঠে এসেছে যে, সাত হাজার খ্রিস্টপূর্বে যখন মানুষ বাড়িতে পশু পালন শুরু করেন যে সময়ে পনির বা চিজের প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল। দুগ্ধজাত চিজে রয়েছে ফ্যাট বা চর্বি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্কসহ অনেক পুষ্টি উপাদান।
আরও পড়ুন: রোলেক্সের সবচেয়ে সস্তা ঘড়ির দাম ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা!
প্রাচীন গ্রিস, মিশর, রোমে ৫ হাজার খ্রিস্টপূর্বের আগে পনিরের ব্যবহার খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। ২০১৮ সালে মিশরের কায়রো এবং কাতানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিকরা মিশর থেকে প্রাচীনতম চিজ আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন। তাদের আবিষ্কৃত চিজটি প্রায় ৩২০০ বছরের পুরোনো। এর আগে মিশরে খ্রিস্টপূর্ব ২৯০০ অব্দে শেষকৃত্যের খাবারে চিজের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছিল। জুলিয়াস সিজারের সময় সেখানে ১০০ প্রকারের পনির তৈরি হয়েছিলো। প্রাচীন রোমে আভিজাত্যদের খাবারের তালিকায় থাকত চিজ।
আরও পড়ুন: ৩৫৫০ বছর আগেই ডিপ্রেশনের চিকিৎসা জানতেন মিশরীয়রা!
উনিশ শতকের আগপর্যন্ত চিজ একটি স্থানীয় পণ্য ছিল। ১৮১৫ সালে সুইজারল্যান্ডে চিজের শিল্প উৎপাদনের জন্য প্রথম কারখানা স্থাপিত হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৫০-এর দশকে বড় আকারের চিজ উৎপাদন বাড়তে শুরু করে। বিগত ৩০ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন হচ্ছে চিজ। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতিবছর ২২ বিলিয়ন কিলোগ্রাম পনির উৎপাদন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: জোরে নাকি আস্তে, কীভাবে পড়লে পড়া মুখস্থ হয়?
ধীরে ধীরে বিভিন্ন খাবার ও সালাদে চিজের ব্যবহার করা ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিত্যদিনের ব্যবহৃত খাবারের পেছনের ইতিহাসটি সত্যিই চমকপ্রদ। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে চিজ বা পনিরের খামার। দিন দিনই বাড়ছে চিজের চাহিদা। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের চিজ ব্যবসায়ীরাও বিদেশেও চিজ রফতনি করবেন।
]]>