খেলা

কীভাবে নির্ধারণ হয় জাতীয় পশু, পাখি, ফুল, ফল?

<![CDATA[

ছোটবেলা থেকে আমরা সবাই শিখে এসেছি যে, বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা, জাতীয় ফল কাঁঠাল এবং জাতীয় পাখি দোয়েল। এর কারণ কি কখনও ভেবেছেন… কেন দোয়েলই জাতীয় পাখি? আবার, দেশের বেশিরভাগ মানুষ, পছন্দের দিক থেকে আমকে এগিয়ে রাখা সত্ত্বেও কাঁঠালকেই কেন জাতীয় ফলের মর্যাদা দেওয়া হলো? এর নেপথ্যের কারণই বা কী?

সাধারণত কোনো দেশের জাতীয় পশু, পাখি, ফল, ফুল ইত্যাদি নির্ধারণ করার আগে খুব ভালো করে দেখা হয় দুটি বিষয়। প্রথমত — যখন জাতীয়ভাবে কোনোকিছু নির্বাচিত হয়, সে দেশে জিনিসটি অনেক বেশি পরিমাণে আছে কি না। পরিমাণে বেশি থাকার অর্থ হলো জিনিসটির সঙ্গে সবাই পরিচিত। আর প্রচুর সংখ্যক থাকার কারণে তা দেশকেও সহজভাবে রিপ্রেজেন্ট করতে পারে।

এক্ষেত্রে বলা যায় শাপলা ফুলের কথা। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে খালে-বিলে ফুটে থাকে সাদা শাপলা। আর এই ফুলটিকে ছেলে-বুড়ো সবাই খুব ভালোভাবে চেনে ও জানে। আবার যদি বলা হয় ইলিশ মাছের কথা। তাহলেও ওই একই জিনিস… কেউ কোনও মাছের নাম না জানলেও ইলিশের নাম কিন্তু ঠিকই জানে এবং চিনে! মাছটির জনপ্রিয়তা এত ব্যাপক যে, সবাই এর নামের সাথে পরিচিত।

আরও পড়ুনঃ কেন খালি স্পেনের ৭০ শতাংশ ভূমি?

এবারে আসা যাক দ্বিতীয় প্রসঙ্গে, নির্বাচনের ক্ষেত্রে যাচাইকরণ। অর্থাৎ আশপাশের অন্য কোনও দেশ, আগে থেকেই একই জিনিসকে তাদের জাতীয় মর্যাদা দিয়ে ফেলেছে কি না! এই দুটো ব্যাপার মূলত কোনও কিছুকে জাতীয় হিসেবে আখ্যায়িত করার প্রধান মানদণ্ড।

জানা গেছে, জাতীয় মর্যাদার লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার টেবিলে ছিল শালিক, দোয়েল, বকসহ ৩/৪টি পাখি। অথচ তার মধ্যে দোয়েলকেই মনোনীত করা হয়েছে। কারণ পাখিটি দেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। শহর থেকে শুরু করে পাহাড়-বন কিংবা গ্রামের নির্জন পুকুরের পাড়েও তার দেখা মেলে। এদেশের খুব কম পাখির অবস্থানই রয়েছে এমন জায়গাতে। সাধারণত যে পাখি শহরে থাকে, সে আর বনে থাকতে পারে না- বাসস্থান, বিচরণভূমি ও আহারগত কারণে। তবে এক্ষেত্রে সর্বত্রই রয়েছে দোয়েল। এছাড়া দোয়েল কিন্তু অন্য কোনো দেশের জাতীয় পাখি নয়।  

এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, দেশের সর্বত্র কাকের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও, কাক কেন হলো না জাতীয় পাখি। মূলত স্বভাবগত কারনেই কাক কারো প্রিয় পাখিদের তালিকায় পড়ে না। এদিকে দোয়েল খুব নিরুপোদ্রপ একটা পাখি। কখনোই এরা মানুষের কোনও ক্ষতি করে না। তার চেয়েও বড় বিষয়, এই পাখির চমৎকার গানের গলা। ভোরবেলা তার মিষ্টি-মধুর কণ্ঠ প্রকৃতির চারপাশ মধুর করে তোলে। আর সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে গবেষকদল দোয়েলকে জাতীয় পাখির মর্যাদা দেয়।

আরও পড়ুনঃ ১০০ তলা বিল্ডিং থেকে পড়েও কাজ করতো ‘নোকিয়া ৩৩১০’ মোবাইল!

এবার আসা যাক, জাতীয় ফল কাঁঠাল প্রসঙ্গে। এদেশে কাঁঠাল চেনে না এমন একজনও পাওয়া দুষ্কর। সব জায়গাতেই এ গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া কোনও দেশে একাধিক ফল থাকলেও, এমন একটি ফলকে জাতীয় ফল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়, যার সঙ্গে ওই দেশের সংস্কৃতির যোগ রয়েছে। একটি জাতির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে ফলের যোগসূত্র থাকলে ,তা ওই অঞ্চলে জাতীয় ফল নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়া হয়। আর এ বিষয়ে অনেকেরই মত, কাঁঠালের আদিনিবাস বাংলাদেশ ও আশপাশের অঞ্চলে।

এছাড়া জাতীয় ফলের মর্যাদা দেওয়ার ক্ষেত্রে এই ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিমানের কথাও বিবেচনা করা হয়েছে। শুধু মানুষই নয়, গবাদিখাদ্য হিসেবেও কাঁঠাল এবং এই গাছের পাতার জুড়ি নেই। বিভিন্ন রোগের দাওয়াই হিসেবেও এ ফল কাজ করে ব্যাপক। আর কাঁঠালগাছের কাঠও বেশ উন্নতমানের। মূলত এসব কারণে কাঁঠালের পরিচিতি শুরু থেকেই। তাই কাঁঠাল পায় জাতীয় ফলের মর্যাদা।

এক্ষেত্রে আমের কথাও আসতে পারত। কিন্তু আগে থেকেই আম ভারতের জাতীয় ফল হিসেবে থাকার কারণে এই প্রস্তাব আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে, আমগাছ এদেশের জাতীয় বৃক্ষের মর্যাদা ঠিকই পেয়েছে।
 

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!