ক্যাম্পে টার্গেট করে খুন করছে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা
<![CDATA[
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনোভাবেই থামছে না খুনাখুনি। বৃহস্পতিবারও (২৭ অক্টোবর) মুখোশধারীরা গুলি করে দুই রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। নিহতদের স্বজনরা বলছেন, প্রশাসনকে সহযোগিতা আর মামলার সাক্ষী হওয়ায় টার্গেট করে মুখোশধারীরা রাতের বেলায় দলবেঁধে গুলি করে হত্যা করছে।
এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গারা যেমন শঙ্কিত, ঠিক তেমনি আতঙ্কে স্থানীয়রাও। তবে, মিয়ানমারের ইন্ধনে প্রত্যাবাসন বিরোধী চক্র ক্যাম্পকে অস্থিতিশীল করতে এসব হত্যাকাণ্ড করছে বলে দাবি সচেতন মহলের।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রয়েছে ৩২টি আশ্রয় শিবির। দুই উপজেলায় ৮ হাজার একর পাহাড়ি ভূমিতে গড়ে উঠেছে এসব আশ্রয় শিবির। যেখানে বসবাস করছে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। যাদের নিরাপত্তায় রয়েছে এপিবিএনের ৩টি ব্যাটালিয়ন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে ক্যাম্পে দিনে তেমন কোনো ঘটনা না ঘটলেও দুর্বৃত্তরা এখন রাতের বেলায় একের পর এক হত্যাকাণ্ড শুরু করেছে। বিশেষ করে, দলবদ্ধ হয়ে মুখোশ পরে এসব হামলা চালাচ্ছে তারা।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে হত্যাকাণ্ড, তিন মাসে ১২ খুন
বুধবার ক্যাম্প ১০ এ মোহাম্মদ জসিম নামে একজন রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যার পর বৃহস্পতিবার ভোররাতেও ক্যাম্প ১৭ তে আয়াত ও ইয়াছিন নামের দুই রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা করে মুখোশধারীরা। নিহতদের স্বজনদের দাবি, প্রশাসনকে সহযোগিতা আর মামলার সাক্ষী হওয়ায় টার্গেট করে মুখোশধারীরা গুলি করে হত্যা করছে। এসব ঘটনায় তারা শঙ্কিত।
নিহত আয়াত উল্লাহর ভাই সালামত উল্লাহ বলেন, আমার ভাই ক্যাম্প-৫ ডি’তে চাকরি করে। দুর্বৃত্তরা সবাই মুখোশধারী, কাউকে চেনা যায়নি। সবার হাতে অস্ত্র ছিল। দুর্বৃত্তরা এক ঘণ্টা পর্যন্ত গুলি করেছে। আমার ভাই ঘরের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিল। দুর্বৃত্তরা তার ঘরের চারদিকে ঘিরে দরজা কেটে এবং বেড়া ভেঙে রাত সাড়ে ৩টার দিকে গুলি করে মেরে ফেলেছে।
নিহত মোহাম্মদ ইয়াছিনের ভাই মোহাম্মদ হাছন বলেন, আয়াত উল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এমনকি তার একটা ভাইয়ের হাত ও পা কেটে ফেলে তারা। তখন মাঝি ও পুলিশকে আমার ভাই সহযোগিতা করতো। এজন্য দুর্বৃত্তরা টার্গেট করে আমার ভাই ইয়াছিনকে মেরে ফেলেছে। তারা ইয়াছিনকে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কুপিয়েছে। তারা আমাকেও ধরতে চেয়েছে। কিন্তু আমি অন্যদিকে পালিয়ে যাওয়ায় আমাকে ধরতে পারেনি। এখন তো যা হবার তা হয়ে গেছে। সামনে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে এজন্য ক্যাম্পে র্যাব ও সেনাবাহিনী দিয়ে নিরাপত্তা দেয়ার দাবি করছি।
আরও পড়ুন: উখিয়ায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে দুই রোহিঙ্গা নিহত
ক্যাম্প ১৭ এর বাসিন্দা মোহাম্মদ মুজিব বলেন, ক্যাম্পে সুস্থভাবে থাকতে চাইলেও পারছি না। রোহিঙ্গাদের মধ্যেই একটি চক্র আমাদেরকে নির্যাতন করছে। আমরা পুলিশকে এসব বিষয় জানিয়েছি। এছাড়াও নানা ঘটনায় বাদী হয়েছি। বাদী হয়ে সাক্ষী দেয়ার জন্য দুর্বৃত্তরা আমাদেরকে মেরে ফেলছে। আমরা এখন ক্যাম্পে নিরাপত্তা চাইছি, যাতে ভালো প্রশাসন দেয়া হয়।
সম্প্রতি ক্যাম্পে বেড়েছে হত্যাকাণ্ডসহ নানা ধরনের অপরাধ। একইসঙ্গে বেড়েছে অস্ত্রের ব্যবহার। তাই ক্যাম্পের বাসিন্দাসহ স্থানীয়রা আতঙ্কে বলে জানান সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি।
উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পে খুনাখুনি, মারামারি, গোলাগুলি, মাদক, অপহরণসহ নানা অপরাধ বেড়েছে। এখন আমরা যারা স্থানীয়রা রয়েছি, তারা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযানের মাধ্যমে ক্যাম্পে যে অস্ত্রগুলো ব্যবহার হচ্ছে তা উদ্ধার করা হোক। একইসঙ্গে অপরাধীদের যেনো আইনের আওতায় আনা হয়।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের এনআইডি কারসাজি, ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় কার্ড
আর সচেতন মহলের দাবি, মিয়ানমারের ইন্ধনে প্রত্যাবাসন বিরোধী চক্র ক্যাম্পে এসব হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটছে তাতে ধারণা করছি, একটি চক্র যারা প্রত্যাবাসন বিরোধী এবং মিয়ানমারের যোগসাজশে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। যখন প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ সরকার উঠে পড়ে লেগেছে, জাতিসংঘে কথা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মহলে কথা হচ্ছে, চীন থেকে শুরু করে সবাই সম্মতি দিচ্ছে, ঠিক তখনি কোনো না কোনো ক্যাম্প অস্থিতিশীল করতে এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে।
পুলিশ জানিয়েছে, চলতি মাসে ক্যাম্পে দুর্বৃত্তদের গুলিতে দু’জন কমিউনিটি নেতাসহ মোট ৬ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন।
]]>