গন্ধগোকুল না মেরে অবমুক্ত করল কিশোররা
<![CDATA[
নরসিংদীর রায়পুরার একটি গন্ধগোকুল আটকের পর বন অধিদফতরের পরামর্শে বিপন্ন এই প্রাণীটিকে অবমুক্ত করেছে কিশোররা।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলার আমীরগঞ্জ ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রাম থেকে প্রাণীটি ধরা হলেও মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সেটিকে অবমুক্ত করা হয়।
স্থানীয়রা জানায়, খলাপাড়া গ্রামে গন্ধগোকুলের অবস্থান টের পেয়ে চিৎকার করতে থাকে একদল কিশোর। পরে সন্ধ্যা নাগাদ প্রাণীটিকে ধাওয়া করে আটক করে তারা। রাতে একটি ঘরে সেটিকে আটকে রাখলেও কোনো এক সময় প্রাণীটি পালিয়ে যায়। তবে সকালে আবারও গন্ধগোকুলটিকে আটক করা হয়।
দ্বিতীয়বার আটকের পর বিপন্নপ্রায় প্রাণীটিকে মেরে ফেলার উদ্যোগ নেন স্থানীয়রা। তবে ওই এলাকার এক যুবক বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে যোগাযোগ করেন। বন অধিদফতরের পক্ষ থেকে প্রাণীটির গুরুত্ব বুঝিয়ে সেটিকে মেরে না ফেলার অনুরোধের পাশাপাশি বনে ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
আরও পড়ুন : মেছো বিড়ালটি পিটিয়ে মারতে চেয়েছিলেন গ্রামবাসী
পরবর্তীতে গ্রামের বায়োজ্যেষ্ঠদের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে গন্ধগোকুলটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দেয় কিশোররা।
তাশরিফ আলম নামে এক কিশোর বলেন, প্রাণীটিকে ভয় পেয়ে প্রথমে মেরে ফেলার চিন্তা করলেও এটিকে মারা হয়নি। সকলের সিদ্ধান্তে আমরা এটিকে একটি ঝোপে ছেড়ে দিয়েছি।
রুহুল আমিন বকুল নামে এক গ্রামবাসী বলেন, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরামর্শে সেটিকে আটকে না রেখে মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণীটি প্রকৃতিতে থেকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে বলে জানতে পেরেছি।
আরও পড়ুন : বনে ফিরল দুই পদ্ম গোখরা, উদ্ধারকারীদের প্রশংসা বন কর্মকতার
এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক নিগার সুলতানা বলেন, নরসিংদীর রায়পুরায় গন্ধগোকুল ধরা পড়ার বিষয়টি আমি অবগত। এটি মোটেও ক্ষতিকর নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব প্রাণী ধরার পর আতংকে গ্রামবাসী মেরে ফেলে। তবে বন বিভাগের পরামর্শ মেনে সেটিকে না মেরে অরণ্যে ছেড়ে দেয়ায় গ্রামবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি।
অপরদিকে বাংলাদেশ বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা জানান, নিশাচর এই প্রাণীটি লোকালয়ের কাছাকাছি ঝোপ-জঙ্গলে বাস করে। এরা তাল-খেজুর রস, ফল, সবজি ছাড়াও কৃষির জন্য ক্ষতিকর পোকামাড়র ও ইঁদুর খেয়ে কৃষকের উপকার করে। মজার বিষয় হলো, বট বা অন্যান্য গাছের ফল খাওয়ায় এদের মলের সঙ্গে নির্গত বীজগুলোর শতভাগ অঙ্কুরোদগম হয়, যা উদ্ভকূল রক্ষায় দারুণ কার্যকরী।
আরও পড়ুন : পাহাড় কেটে তৈরি রাস্তায় মিলল মর্মর বিড়ালের মৃতদেহ
জোহরা মিলা বলেন, আপনি বনজঙ্গল বা ঝোপ-ঝাড়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যদি পোলাওয়ের চালের মতো গন্ধ পান তবে বুঝে নেবেন আপনার আশেপাশেই গন্ধগোকুল আছে।
তিনি আরও বলেন, বনজঙ্গল ধ্বংস, খাদ্যের অভাব, পিটিয়ে হত্যা ইত্যাদি কারণে প্রকৃতির উপকারী এই প্রাণীটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন লোকজ ওষুধ ও টোটকা তৈরিতে গন্ধগোকুল হত্যা করা হয়। কিন্তু এসব ওষুধের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং কিছু অসাধু ব্যক্তি দেশের সরল মানুষকে ঠকাচ্ছে। এক সময় দেশে প্রচুর গন্ধগোকুলের দেখা মিললেও বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) বিবেচনায় এটি পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রাণীটি সংরক্ষিত। তাই এটি হত্যা বা কোনো ক্ষতি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
]]>




