গৃহবধূ খুনের রহস্য উন্মোচনের দাবি হালিশহর পুলিশের
<![CDATA[
কোনো প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়াই ক্লুলেস হত্যারহস্য উন্মোচন করেছে চট্টগ্রামের হালিশহর থানা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, পারিবারিক কলহের জেরে ছুরিকাঘাতে গৃহবধূ রাবেয়াকে হত্যা করে তার স্বামী ও ভগিনীপতি। ক্ষুদ্রঋণের টাকা তুলে না দেয়ায় পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) হালিশহর থানা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) উপকমিশনার (পশ্চিম) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, এক বছর আগে বড় বোনের স্বামী মোস্তফা নিহত রাবেয়াকে জামিনের সঙ্গে পরিচয় ও পরে বিয়ের ব্যবস্থা করেন। স্বামী কাজ না করায় শুরু হয় কলহ। ক্ষুদ্রঋণের টাকা তুলতে জামিন ও মোস্তফা মিলে নানা সময়ে রাবেয়াকে চাপাচাপিও করতেন। এছাড়া সংসার চালাতে বাবার সঙ্গে রাবেয়ার পিঠা বিক্রির বিষয়টিও অপছন্দ ছিল জামিনের।
সবশেষ গত ১০ জানুয়ারি একটি এনজিও থেকে ঋণ ফরমে রাবেয়া স্বাক্ষর দিতে রাজি না হওয়ায় দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। সেদিনের ক্ষোভে চার দিন পর ১৪ জানুয়ারি স্বামী ও ভগিনীপতি ছুরিকাঘাত করে রাবেয়াকে হত্যা করেন।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে দুটি ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উৎঘাটন
সংবাদ সম্মেলনে ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানানো হয়, ১৪ জানুয়ারি দুপুরে কাজ শেষে হালিশহরের পাবলিক স্কুল মোড়ে জামিন ও রাবেয়ার বোনের স্বামী খুনের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওইদিন সন্ধ্যায় জামিন একটি ছুরি নিয়ে বাসায় যান। তার পেছন পেছন রাবেয়ার ভগিনীপতিও রুমে প্রবেশ করেন। সেখানে রুমে থাকা রাবেয়ার ১০ বছরের মেয়ে আক্তার জান্নাতকে বাইরে বেরিয়ে যেতে বলেন।
পরে শিশুটি বাসা থেকে বের হয়ে তার নানার দোকানে যায়। নানাকে সে জানায়, তার বাবা একটি ছুরি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে তাকে বাইরে চলে আসতে বলেছেন। পরে রাবেয়া তার স্বামী ও ভগিনীপতির জন্য নাশতা আনতে রান্না ঘরে গেলে আসামিরা তাকে ঝাপটে ধরেন। তৎক্ষণাৎ জামিন ছুরি দিয়ে রাবেয়ার গলায় পোঁচ মারেন এবং পরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন।
আরও পড়ুন: নরসিংদীতে ক্লুলেস দুই হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ২১
এ সময় চিৎকার করে উঠলে জামিনের হাত থেকে ছুরি কেড়ে নিয়ে রাবেয়ার গলায় আরও কয়েকবার পোঁচ দেন তার ভগিনীপতি মোস্তফা। তখন দৌড়ে রাবেয়া বাবার দোকানের সামনে রাস্তায় পড়ে যান। এ সময় জামিন ও তার ভায়রাভাই মোস্তফা দৌড়ে দেয়াল টপকে খালপাড়ের দিকে পালিয়ে যান। পালানোর সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি খালে ছুড়ে মারেন। পরে রাবেয়াকে উদ্ধার করে পাশের একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
মোবাইল ব্যবহার না করায় আসামিদের ধরা কঠিন হয়ে পড়ে। পরে কিশোরগঞ্জের অজপাড়াগাঁয়ে স্থানীয় মানুষের ছদ্মবেশ নিয়ে জামিনকে গ্রেফতার করেন পুলিশ সদস্যরা। পরে নগরীর হালিশহর থেকে ভগিনীপতি মোস্তফাকেও গ্রেফতার করা হয়।
হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির উদ্দিন বলেন, ‘নিকলী থানায় গিয়ে আমরা ওখানকার মানুষের ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে আসামি জামিনকে গ্রেফতার করি।’
আরও পড়ুন: ৩২ বছর পর হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার
ঘটনার দুদিন পর সোমবার (১৬ জানুয়ারি) দুজনকে গ্রেফতারের খবরে স্বজনসহ স্থানীয়রা থানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় স্বজনরা দাবি করেন, এ হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত।
নিহত রাবেয়ার প্রথম সংসারের দুই সন্তান রয়েছে।
]]>