বাংলাদেশ

গোলাগুলির শব্দ ছাড়াই এসএসসি পরীক্ষায় সীমান্তের শিক্ষার্থীরা

<![CDATA[

গোলাগুলির বিকট শব্দ ছাড়াই এসএসসি পরীক্ষা দিল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সীমান্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাতে জরুরি নির্দেশনার পর শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। আর শিক্ষার্থীরা স্বস্তিতে পরীক্ষা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী বেপরোয়া গুলিবর্ষণ, মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে, যার কিছু এসে পড়ছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে। গোলা এসে পড়ার ঘটনায় শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে শূন্যরেখার আশ্রয় শিবিরের মো. ইকবাল নামে এক রোহিঙ্গা কিশোর নিহত হয়। আহত হয় পাঁচজন। এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রটি সরিয়ে উখিয়ায় স্থানান্তর করে প্রশাসন।

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে মিনিবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ১০ কিলোমিটার দূরত্বের স্থানান্তরিত কেন্দ্র উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। কয়েকশ এসএসসি পরীক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও কেন্দ্রে আসেন। গোলাগুলির শব্দ থেকে সরিয়ে এনে নিরাপদে পরীক্ষার ব্যবস্থা করায় স্বস্তি প্রকাশ করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

পরীক্ষা দিতে আসা ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার বলে, ‘পরীক্ষা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম, আমাদের এলাকার অবস্থা ভালো না। সকালেও কেন্দ্রে আসার সময় গুলির শব্দ শুনেছি।’ আরেক পরীক্ষার্থী ইমরান সরকার বলে, ‘এখন অনেক ভালো লাগছে। কানে কোনো ধরনের গুলির শব্দ আসছে না। এখন ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারব।’

আরও পড়ুন: এবার সীমান্তে মিয়ানমারের ৪ মর্টার শেল নিক্ষেপ, নিহত ১

পরীক্ষা শেষ করে আসা শিক্ষার্থী রাসেল বলে, ‘শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত আতঙ্কে ছিলাম গোলাগুলির শব্দে। পড়ায় মনও দিতে পারিনি। তবে শনিবার খুব সকালে কুতুপালং এসে ঘণ্টা দুয়েক পড়েছি। তারপর খুবই ভালো পরিবেশে পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষাও ভালো হয়েছে।’

ছৈয়দ উল্লাহ নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘একদিকে গোলাগুলির আতঙ্ক, অন্যদিকে ছেলেকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। কীভাবে পরীক্ষা দেবে, নাকি পরীক্ষার কেন্দ্রে গুলি এসে পড়ে। তবে কেন্দ্র স্থানান্তরের পর স্বস্তিতে ছেলে পরীক্ষা দিতে পেরেছে। প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই, ভালোভাবে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য।’

বেলা ১১টায় শুরু হয় বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা, যা শেষ হয় দুপুর ১টায়। ঘুমধুম কেন্দ্রের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের উখিয়ার কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে একাধিক বাসের ব্যবস্থা করে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ।

উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, ৪টি বাস সকাল থেকে কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের জন্য চলাচল করেছে। কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের নির্দেশনায় তারা ঘুমধুমের শিক্ষার্থীদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করেছেন। পরীক্ষা শেষেও শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যতদিন পরীক্ষা চলবে, ততদিন তাদের এই ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।

এ ছাড়াও উখিয়া থানা পুলিশের পক্ষ থেকেও শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি বাস দেয়া হয়েছে। উখিয়া থানার পরিদর্শক শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, বরাদ্দ করা বাস যতক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন হবে ততক্ষণ স্ট্যান্ডবাই থাকবে। তাদের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ পাশে রয়েছে।

আরও পড়ুন: সীমান্তে আবারও মিয়ানমারের গুলির শব্দ, আতঙ্ক

এদিকে পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসাইন সজীব। হল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঘুমধুম কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের বসার জায়গা নির্ধারণসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়।

তিনি বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতির কারণে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সরিয়ে আনা হয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রে সব পরীক্ষার্থী ঠিক সময়ে উপস্থিত হয়েছে এবং স্বস্তিতে ও নিরাপদে পরীক্ষা দিয়েছে।

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অংশ নেয় ঘুমধুম কেন্দ্রের ৪৪২ জন পরীক্ষার্থী।

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!