বিনোদন

চরম প্রতিশোধ নিচ্ছে রাশিয়া, ইউক্রেন যুদ্ধ কোন দিকে?

<![CDATA[

ক্রিমিয়া-রাশিয়ার একমাত্র সংযোগ সেতুতে বিস্ফোরণের ঘটনার চরম প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে রাশিয়া। ওই বিস্ফোরণের একদিন পরই রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনজুড়ে বহু শহরে একযোগে অসংখ্য ক্ষেপণাস্ত্র চালিয়েছে রুশ বাহিনী।

এসব হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত ও আরও অন্তত ৬৪ জন আহত হয়েছে। এর ফলে প্রায় আট মাসব্যাপী চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন মোড় নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

শনিবার (৮ অক্টোবর) সেতুটিতে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর ফলে সেতুটির একাংশ ধসে পড়ে। বিস্ফোরণের ঘটনায় তিন জনের মুত্যুও হয়। বিস্ফোরণের একদিন পরই সেতুটি যান চলাচলের জন্য আংশিকভাবে খুলে দেয়া হয়।

২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া। এর পর কৃষ্ণসাগরীয় এ দ্বীপটিকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করে নেয় ক্রেমলিন। চারদিক পানিবেষ্টিত দ্বীপটির সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র উপায় একটি সেতু।

এতে সড়ক পথের পাশাপাশি রেল যোগাযোগের ব্যবস্থাও রয়েছে। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার রুশ বাহিনীর সামরিক রশদ সরবরাহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট এটি।

সেতুতে বিস্ফোরণের ঘটনায় সরাসরি ইউক্রেনকে দায়ী করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একই সঙ্গে এটাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অভিহিত করে এর কঠোর জবাব দেয়ার প্রত্যয় করেন তিনি। পুতিনের এ হুঁশিয়ারির কয়েক ঘণ্টা পরই ইউক্রেনের শহরগুলো লক্ষ্য করে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।

আরও পড়ুন: ইউক্রেনে ব্যর্থতার মুখে রুশ বাহিনীর নেতৃত্বে পরিবর্তন

শহরে শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি স্বীকার করেছে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারাও। সোমবার (১০ অক্টোবর) এক টুইটার বার্তায় ইউক্রেন সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনি বলেন,  সকালে অন্তত ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৪১টি ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।

ইউক্রেনীয় পুলিশ জানিয়েছে, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১১ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এছাড়া আরও প্রায় ৬৪ জন আহত হয়েছে। মৃত্যু সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ব্যাপারে পুতিন বলেছেন, ক্রিমিয়ার সংযোগ সেতুতে হামলার প্রতিশোধ নিতে ইউক্রেনের জ্বালানি, সামরিক ও যোগাযোগ অবকাঠামো টার্গেট করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে রুশ বাহিনী। 

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার ভোরের দিকেই রাজধানী কিয়েভে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এ সময় রাজধানীর আরও বেশ কয়েকটি স্থানে উচ্চ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ ছাড়া পোল্যান্ড সীমান্তে ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভ ও পূর্বাঞ্চলীয় শহর দেনিপ্রোয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এ সব হামলায় বহু ভবন ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।  

রাশিয়ার এ প্রতিশোধমূলক হামলার পর নিন্দা জানিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন,  রাশিয়া আমাদেরকে ধ্বংস ও পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার চেষ্টা করছে।

তিনি জানান, রুশ সেনারা ইউক্রেনে কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, অন্তত আটটি অঞ্চলে বিদ্যুৎসহ ১১টি বড় অবকাঠামো টার্গেট করা হয়েছে।

এর ফলে দেশের বিশাল এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। জেলেনস্কির সঙ্গে সঙ্গে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। একই সঙ্গে কিয়েভকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, ইউক্রেনে পুতিনের কর্মকাণ্ড ‘একেবারেই অগ্রহণযোগ্য’। এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এ শীর্ষ কূটনীতিক বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিষয়টা এটা পরিষ্কার করা উচিত। তার ভাষায়, ‘ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করার এখনই সময়। এখন পিছিয়ে থাকার সময় নয়।’

এবার হামলা হলে জবাব হবে আরও কঠোর

এদিকে প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যদি আবারও হামলা চালায়, তাহলে তার জবাব হবে আরও কঠোর ও ভয়াবহ। সোমবার (১০ অক্টোবর) টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনের হামলার জবাব না দিয়ে থাকাটা অসম্ভব। এমন সন্ত্রাসী হামলা আবারও চালানো হলে রাশিয়ার জবাব হবে ভয়াবহ।’

রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইউক্রেনে ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। সবগুলো টার্গেটেই আঘাত হানা হয়েছে।’ রাশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের প্রধান দিমিত্রি মেডভেদেভ রাশিয়ার এ প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ‘প্রথম পর্ব’র হামলা বলে অভিহিত করেছেন।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কিয়েভের ক্ষয়ক্ষতি

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাজধানী কিয়েভে। একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে কিয়েভ কেন্দ্রে একটা বড় এলাকা শেভচেঙ্কো জেলায়। মেয়র ভিটালি কিৎস্কো জানান, বেশ কয়েকটি সরকারি অফিসসহ ঐতিহাসিক পুররো শহরেও বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কিয়েভের বেশ কয়েকটি স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কিয়েভ পুলিশ জানিয়েছে, রাজধানীতে অন্তত ৫ জন নিহত ও আরও ১২ জন আহত হয়েছে। তবে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উপদেষ্টার মতে, ৮ জন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছে।

কিয়েভে ঘটনাস্থল থেকে আল জাজিরার রিপোর্টার রোরি চ্যালান্ডস বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তার ভাষায়, সবশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কিয়েভে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা গত কয়েক মাসেও দেখা যায়নি। আজ সকালের বাস্তবতা একেবারেই অন্যরকম ছিল।

কিয়েভে জার্মান দূতাবাসে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের যেসব অবস্থানে আঘাত হেনেছে তার মধ্যে জার্মান দূতাবাসও রয়েছে। সোমবার (১০ অক্টোবর) জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান ওয়াগনান বলেন, জার্মান দূতাবাসের ভিসা অফিসের ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এতে ভিসা বিভাগের টাওয়ারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভিসা বিভাগটি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বন্ধ ছিল। তাই হামলার সময় সেখানে কোনো কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন না।

জার্মান সরকারের মুখপাত্র স্টিফেন হেবেস্ট্রেট বলেন, জার্মানি রাশিয়ার হামলার কঠোর নিন্দা করেছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস রোববার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামত করতে সম্ভাব্য সবকিছু করবে জার্মানি।

অন্যান্য শহরের পরিস্থিতি

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজধানী কিয়েভ ছাড়াও অন্য শহরেও বেসামরিক এলাকা ও জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। অন্তত চার ঘণ্টা ধরে চলে এ হামলা। ইউক্রেনের স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভ থেকে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চলীয় খারকিভ, তার্নোপিল, কিমেলনিতস্কি, ঝিটোমির ও ক্রোপিভনিতস্কি শহরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

মেয়র ইহর তেরেখভ জানান, খারকিভে অন্তত তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এর ফলে বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী ডেনিস স্মিগাল বলেছেন, ৮ অঞ্চলের ১১টি বড় অবকাঠামো লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এর মধ্যে পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী মেডিকা ও কর্কজোয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

মলদোভার আকাশসীমা পার রুশ ক্ষেপণাস্ত্র 

এদিকে মলদোভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিসু পপেস্কু বলেছেন, রাশিয়ার ছোড়া অন্তত তিনটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তাদের আকাশসীমা পার হয়ে আঘাত হেনেছে। ওই তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র সোমবার সকালে কৃষ্ণসাগরে রুশ জাহাজ থেকে ছোড়া হয় বলেও জানান পপেস্কু।

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ‘যুদ্ধাপরাধের শামিল’: ইইউ

ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়ার সবশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নিন্দা জানিয়ে একে ‘যুদ্ধাপরাধের’ সঙ্গে তুলনা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। পশ্চিমা রাজনৈতিক জোটের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলের মুখপাত্র পিটার স্টানো সোমবার (১০ অক্টোবর) বলেন, রাশিয়া নির্বিচারে ও কাপুরোষিতভাবে বেসামরিক স্থান ও মানুষ টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে।’

এদিন এক টুইটার বার্তায় জোসেফ বোরেল বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে এসে রাশিয়ার এ কর্মকাণ্ডের কোনো জায়গা নেই।’ এ সময় ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা অব্যাবহ রাখার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, রাশিয়ার হামলায় তিনি ‘বিস্মিত ও বাকরুদ্ধ’।

ইউক্রেনকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের ঘোষণা জার্মানির

এদিকে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইউক্রেনকে নতুন করে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিন ল্যামব্রেখট বলেন, ‘আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কিয়েভকে প্রথম দফায় চারটি ‘আইআরআইএস-টিএসএলএম’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সববরাহ করা হবে।

 

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button
error: Content is protected !!