বাংলাদেশ

ডার্টি বোম কি, কতটা ভয়ানক

<![CDATA[

ইউক্রেন যুদ্ধে এ মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ‘ডার্টি বোম’। কয়েক দিন ধরেই রাশিয়া অভিযোগ করে আসছে, ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘ডার্টি বোম’ ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। শুধু অভিযোগেই থেমে থাকেনি, বিষয়টি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তুলেছে মস্কো।

‘ডার্টি বোম’ নিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেনের কথার লড়াই

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় আট মাস ধরে চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সামরিক অভিযান চালিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনের যেসব শহর দখল করেছে, এখন সেগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।

এদিকে ইউক্রেনে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী। শীতের আগে ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এমন অবস্থায় আলোচনায় উঠে আসে ‘ডার্টি বোম’।

রাশিয়ার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, ইউক্রেন তার নিজ ভূখণ্ডে ‘ডার্টি বোমা’ ব্যবহার করে রাশিয়ার ওপর দায় চাপানোর পরিকল্পনা করছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ।

প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘যদি রাশিয়া অভিযোগ করে—ইউক্রেন এমন বোমা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে তারাই এ ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে।’

‘ডার্টি বোম’ নিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেনের কথার লড়াই চলছে। তবে যদি সত্যি সত্যি কোনো পক্ষ যুদ্ধে এ ধরনের কোনো অস্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে সেটা নিশ্চিতভাবেই খুবই বাজে পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। এর শিকার হবে লাখো নিরীহ মানুষ।

ডার্টি বোম কী

ডার্টি বোম’ কী তা নিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘ডার্টি বোম’ হচ্ছে এমন এক বিস্ফোরক, যাতে ইউরেনিয়ামের মতো তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকে। বিস্ফোরণ ঘটালে এর থেকে বাতাসে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়।

তেজস্ক্রিয় পদার্থ দিয়ে তৈরি ‘ডার্টি বোম’ বিস্তৃত এলাকায় তেজস্ক্রিয় দূষণ ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ব্যবহার করা হয়। যদি তেজস্ক্রিয় কণাগুলো খুব সূক্ষ্ম হয় এবং তা প্রবল বাতাসে ছড়িয়ে যায়, তবে তা আরও বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ ধরনের বোমা বেসামরিক নাগরিকদের জন্য বিপজ্জনক ও ভয়ংকর।

তবে এটি পরমাণু বোমার মতো নয়। কেননা, পরমাণু বোমা তৈরিতে তেজস্ক্রিয় উপাদান যে উচ্চমাত্রায় পরিশোধন করা হয়, ডার্টি বোমের ক্ষেত্রে তেমনটি করা হয় না। কম মাত্রায় পরিশোধিত যেমন: হাসপাতাল, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বা পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় উপাদান যে মাত্রায় পরিশোধন করা হয়, ডার্টি বোমের ক্ষেত্রেও সেই মাত্রা একই।

পরমাণু অস্ত্রের চেয়ে এটি কম খরচে ও কম সময়ে তৈরি করা যায়। এটি গাড়িতে করে বহন করা যায়। এ ধরনের তেজস্ক্রিয় বোমার বিস্ফোরণের প্রভাবে ক্যানসারের মতো গুরুতর শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এ ধরনের তেজস্ক্রিয় বোমার বিস্ফোরণে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এ ধরনের বোমা বিস্ফোরিত হলে সেই অঞ্চলের চারপাশের একটি বিস্তৃত এলাকা দূষণমুক্ত করার জন্য খালি করতে হয়। এমনকি ওই এলাকা সম্পূর্ণ পরিত্যক্তও ঘোষণা করতে হতে পারে।

বেসরকারি বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্ট বলছে, নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে যদি ৯ গ্রাম কোবাল্ট-৬০ এবং ৫ কেজি টিএনটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে, তাহলে পুরো শহর কয়েক দশকের জন্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। এ কারণেই ‘ডার্টি বোম’ গণবিধ্বংসী হিসেবে পরিচিত। যাহোক, অস্ত্র হিসেবে এগুলো তেমন নির্ভরযোগ্য নয়।

‘ডার্টি বোম’ কি আগে কখনো ব্যবহার হয়েছে

বিশ্বে এখন পর্যন্ত ‘ডার্টি বোম’ ব্যবহৃত হওয়ার কোনো নজির নেই। তবে ‘ডার্টি বোম’ ব্যবহারের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো সফল হয়নি।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে চেচনিয়ার বিদ্রোহীরা মস্কোর ইজমাইলোভো পার্কে ডিনামাইট এবং সিজিয়াম-১৩৭ সংবলিত বোমা স্থাপন করেছিল। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এই বোমার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে যায় এবং এটিকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে।

১৯৯৮ সালে চেচনিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা রেললাইনের কাছে স্থাপন করা একটি ডার্টি বোমার সন্ধান পায়। পরে সেটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। ২০০২ সালে জোস প্যাডিলা নামের এক মার্কিন নাগরিক আল-কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। 

তাকে ‘ডার্টি বোম’ হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহ করা হয়। পরে তিনি শিকাগো থেকে গ্রেফতার হন। বিচারে তাকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

এ ঘটনার দুই বছর পর ব্রিটিশ নাগরিক ও আল-কায়েদার সদস্য ধীরেন বারতকে লন্ডন থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে পরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ‘ডার্টি বোম’ হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। জোস প্যাডিলা ও ধীরেন বারত অবশ্য ‘ডার্টি বোম’ তৈরির কাজ শুরু করার আগেই গ্রেফতার হন।

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!