বিনোদন

ঢাকার প্রবেশমুখে ৫ বাস টার্মিনাল, স্বস্তি ফিরবে নগরে

<![CDATA[

ঢাকা শহরের গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং যানজট কমাতে দূরপাল্লার বাসগুলোর জন্য ঢাকার প্রবেশমুখে পাঁচটি বাস টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সরকার। পাশাপাশি নির্মাণ করা হবে আরও পাঁচটি বাস ডিপো।

যানজট রাজধানী ঢাকার জন্য একটা অভিশাপ বলাই যায়। দুই ঈদের ছুটি ছাড়া নগরবাসী যানজটে পড়বেন না- এমনটা ভাবতেই পারেন না। দুর্বিষহ এই জীবন থেকে ঢাকাবাসীকে রক্ষায় বহু প্রকল্প নেয়া হয়েছে, বাস্তবায়নও হয়েছে অনেকটুকু। কিন্তু কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি এসব উন্নয়ন কর্ম। ব্যক্তিগত গাড়ি এবং শহরের ভেতরে চলাচল করা আন্তঃজেলা বাসগুলোকে যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করা হয়। মহাখালী বাস টার্মিনাল যার জ্বলন্ত উদাহরণ।

তাই শহরের ভেতরে আন্তঃজেলা ও শহরতলির বাস চলাচল বন্ধে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোয় পাঁচটি আন্তঃজেলা টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সরকার। পাশাপাশি নির্মাণ করা হবে আরো পাঁচটি বাস ডিপো।

বর্তমানে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী এবং সায়েদাবাদে তিনটি বাস টার্মিনাল আছে। এগুলোকে পুরোপুরি সিটি টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়ে দুরপাল্লার বাসের জন্য কেরানীগঞ্জের বাঘাইর, নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর, তুরাগের ভাটুলিয়া, রূপগঞ্জের ভুলতা ও সাভারের হেমায়েতপুরে নির্মাণ করা হবে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান এসব টার্মিনাল দ্রুত নির্মাণের উপর জোর দেন। বলেন, ‘বহির্বিশ্বে আন্তঃজেলার গণপরিবহনগুলো শহরের মধ্যে প্রবেশ করে না। ওদের টার্মিনালগুলো শহরের বাইরে এবং রিং রোড এবং বাইপাস আছে। কিন্তু আমাদের শহরের মধ্যে মহাখালী ও সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সিটি বাস টার্মিনাল আমাদের কার্যকর নেই। যেখানে-সেখানে সিটি বাস রাস্তার ওপরে থেকে যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। সাথে যোগ হয় আন্তঃজেলার গণপরিবহন।’

তিনি বলেন, গণপরিবহন যদি ঢাকায় প্রবেশ না করে রিং রোড দিয়ে চলে যেতে পারে তাহলে সময় বাঁচবে, যানজটও কমবে। দেরিতে হলেও সরকার ঢাকার বাইরে টার্মিনাল করায় স্বস্তি প্রকাশ করেন এই যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ।

পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এরইমধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ শেষ করেছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ঢাকার প্রবেশমুখে পাঁচটি বাস টার্মিনাল গড়ে তুলতে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে পাঁচটি বাস ডিপো তৈরি করতে খরচ হবে চার হাজার কোটি টাকার বেশি।

আরও পড়ুন: ঘুড়ি-নাটাইয়ের সূতিকাগার শাঁখারীবাজার

বাস ডিপোগুলো আঁতি বাজার, কাঁচপুর উত্তর, নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন, সাভারের বাইপাইল এবং গাজীপুরে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

যদিও বিদ্যমান ঢাকার তিনটি টার্মিনাল রাতের বেলা সিটি বাস ধারণ করতে পারবে না বলে পরিকল্পনায় জানানো হয়েছে। তাই কাঁচপুর উত্তরকে আন্তঃজেলা টার্মিনাল এবং সিটি বাস ডিপো উভয়ই ব্যবহার করা হবে এবং বাইপাইল এবং গাজীপুর ডিপোকে বাস বা ট্রাক ডিপো হিসাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাস এসব টার্মিনালে এসে থামবে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রীরা টার্মিনালগুলোতে মেট্রোরেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) এবং কোম্পানিভিত্তিক বাস সেবা ব্যবহার করে এসব টার্মিনাল পর্যন্ত পৌঁছতে পারবেন এবং টার্মিনালগুলো থেকে ঢাকার বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পারবেন।

সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২৫ সাল নাগাদ এসব টার্মিনাল ব্যবহারকারী যাত্রীর সংখ্যা হবে দৈনিক ৩ লাখ ৪৪ হাজার। ২০৪৫ সালে যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে হবে ৫ লাখ ১৪ হাজার।

ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে সবচেয়ে বড় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালটি হবে সাভারের হেমায়েতপুরে। ৪৫ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হবে এ টার্মিনাল। আন্তঃজেলা বাস পার্কিংয়ের পাশাপাশি কার, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের জন্য বরাদ্দ থাকবে জায়গা। চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, মেহেরপুর, নড়াইল, নবাবগঞ্জ, পাবনা, রাজবাড়ী ও রাজশাহী থেকে আসা আন্তঃজেলা বাস থামবে হেমায়েতপুর টার্মিনালে।

ভাটুলিয়ার টার্মিনালটির আয়তন হবে প্রায় ২৭ একর। বগুড়া, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, গাজীপুর, জামালপুর, জয়পুরহাট, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ময়মনসিংহ, নওগাঁ, নাটোর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রংপুর, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও ঠাকুরগাঁও জেলার বাসের জন্য বরাদ্দ থাকবে এ ভাটুলিয়া টার্মিনাল। আন্তঃজেলা বাস পার্কিংয়ের পাশাপাশি কার, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের জন্য বরাদ্দ থাকবে জায়গা।

আরও পড়ুন: গাড়ি ভাঙার কারিগররা গাড়ি বানাবেন কবে?

বাঘাইর আন্তঃজেলা টার্মিনাল নির্ধারিত থাকবে বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, ঝালকাঠি, খুলনা, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর ও শরীয়তপুরে যাতায়াত করা বাসের জন্য। সাড়ে ৩৩ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হবে এ টার্মিনাল। এছাড়া, কার, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের জন্য জায়গার সংস্থান রাখা হবে।

প্রায় ২৮ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে কাঁচপুর (দক্ষিণ) আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। আন্তঃজেলা বাস পার্কিংয়ের পাশাপাশি কার, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের জন্য বরাদ্দ থাকবে জায়গা। বান্দরবান, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ফেনী, খাগড়াছড়ি, লক্ষ্মীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী ও রাঙ্গামাটিতে যাতায়াতকারী বাস থামবে এ টার্মিনালে।

অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নরসিংদী, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বাস এসে থামবে ভুলতা টার্মিনালে। এ টার্মিনালটির আয়তন ২৪ একরের বেশি। আন্তঃজেলা বাস পার্কিংয়ের পাশাপাশি কার, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের জন্য বরাদ্দ থাকবে জায়গা।

টার্মিনালে থাকবে যেসব সুবিধা:
সম্ভাব্য সমীক্ষা প্রস্তাবে টার্মিনালগুলোতে শহর ও আন্তঃজেলা বাসের জন্য পর্যাপ্ত পার্কিং এবং স্টাফদের বিশ্রাম ও রাত্রিযাপনের জন্য ভবনের সুবিধা থাকবে। বাস, ট্যাক্সি, অটোরিকশা এবং প্রাইভেটকারের জন্য পর্যাপ্ত পার্কিং স্থান থাকবে যা যাত্রীদের শহরে এবং শহর থেকে টার্মিনালে পরিবহন করবে। এছাড়া, যাত্রী এবং দর্শনার্থীদের জন্য প্রশস্ত ওয়েটিং লাউঞ্জ, মায়েদের জন্য বুকের দুধ খাওয়ানো কেন্দ্র, পর্যাপ্ত সংখ্যক টয়লেট, বসার ব্যবস্থা এবং পুরুষ ও নারীদের জন্য প্রার্থনা কক্ষ থাকেবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বয়স্ক এবং শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য চলন্ত সিঁড়ির সুবিধা থাকবে।

নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াইফাই সুবিধা, টার্মিনালে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে তথ্যের ডিজিটাল ডিসপ্লে এবং টাকাবিহীন টার্মিনাল চার্জ এবং ই-টিকিট চালু করা হবে। শিশুদের জন্য গেম, বই এবং স্টেশনারি দোকান, সেলুন, এটিএম বুথ এবং রেস্টুরেন্ট থাকবে।

সমীক্ষা প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, স্থানীয় ও জাতীয় ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করার জন্য টার্মিনালগুলো ভাস্কর্য, পেইন্টিং এবং অন্যান্য প্রদর্শন দ্বারা সজ্জিত করা হবে। পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, প্রাথমিক চিকিৎসা ও জরুরি পরিষেবার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা রাখা হবে।

এছাড়া, বিদ্যুতের উপর চাপ কমিয়ে সৌর শক্তির ব্যবহার, প্রাকৃতিক আলোর উপর উচ্চ নির্ভরতা, বর্জ্য এবং পানি ব্যবস্থাপনা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।

প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এরইমধ্যে কর্মকর্তারা জমি অধিগ্রহণের জন্য স্পট পরিদর্শন করেছেন। আগামি ৭ ফেব্রুয়ারি কারিগরি কমিটির বৈঠক আছে, যেখানে সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এর নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন।

তিনি জানান, রিং রোড এবং বাইপাসের মাধ্যমে টার্মিনালগুলো আন্তঃসংযোগ থাকবে। এতে যাত্রীরা রাজধানীর মধ্য দিয়ে না গিয়ে জেলা থেকে জেলায় যাতায়াত করতে পারবে। এতে রাজধানীর উপর চাপ কমার পাশাপশি কমে আসবে যানজট, দুর্ভোগ কমবে যাত্রীদের।

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button
error: Content is protected !!