Feni (ফেনী)উপ-সম্পাদকীয়সর্বশেষ

তত্ত্বাবধায়ক সরকার জোট- মহাজোট ক্ষমতার লড়াই

নাজমুল হক

একটি স্বাধীন দেশে ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল প্রায় ৯ বছর সামরিক শাসন চললো। ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের মুখে সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলো। জাতীয় চেতনায় উৎসবমুখর পরিবেশে গণতন্ত্রের তীব্র সংকটকালে তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে জাতির অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। ভোটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ভোট ডাকাতি রোধ করার জন্য তিনি শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পেতে পারতেন। রাজনৈতিক দলের রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা মানেই ক্ষমতাসীন দলের নিরংকুশ বিজয় অর্জন। ১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল নিরস্কুশ বিজয় অর্জন করে। রাস্ট্রীয় ক্ষমতা ও মাসেলম্যান ব্যবহার করে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, বোমাবাজি, জ্বাল ভোট, ভোটের বাক্সলুট ইত্যাদি করে ভোট ডাকাতি ও ভোট কারচুপির উৎসব পালন করতো তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকার। একটা হোন্ডা, দুইটা গুন্ডা এবং ভোট ডাকাতি ও গুন্ডা বাহিনী ইত্যাদি থাকলে নিশ্চিত সাংসদ। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সারাদেশে আইনশৃংখলা বজায় রাখতে সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন থেকে প্রতিনিধিদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে শান্তিপূর্ণ নিবাচন উপহার দিয়েছেন। বাংলাদেশের নাগরিকদের নিকট নিরপেক্ষ প্রশাসন ও সংসদ নির্বাচন ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। রাজনৈতিক দলের জন্য শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ নিশ্চিত করেন। সন্ত্রাসীদেরকে কারাগারে বন্দী করেন, নিরপেক্ষ প্রশাসন গড়েন, সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপহার প্রদান করেন।

বিচারপতি আব্দুর রউপ ছিলেন প্রধান নিবাচন কমিশনার হিসেবে ১০০% নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করেন। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ থেকে তত্ত¡াবধায়ক সরকার সমুহ ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নিবাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে পরিচালনা করেন।

২০০৭ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা মানেই ১০০% ব্যলেট পেপারের নিশ্চয়তা কিন্তু ২০১৪, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন জাতির প্রত্যাশা পুরনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক এর ১৫তম সংবিধান সংশোধনীর রায় এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার রকিব উদ্দিনদের ভোটার বিহিন সংসদ নির্বাচন পরিচালনা, নুরুল হুদার দিনের আলোর ভোট রাতের বেলা, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা না করে কারচুপির মাধ্যমে সরকার গঠনের দ্বায়ভার জাতিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বহন করতে হবে। এখন দেখার বিষয় আউয়াল কমিশন কি করে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ থেকে আব্দুল হামিদ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সমুহ জাতির অভিভাবক হিসেবে নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরন করেছে কি? বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ করে থাকে। রাস্ট্রপতি সংবিধান মোতাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামশ করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেন।

ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলে কেবল সেই সরকারকে গনতান্ত্রিক সরকার বলে। প্রতিবেশী ভারতে জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবতন ঘটে। ভারতে নির্বাচন কমিশন বা ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে ভোট চুরি বা কারচুপির মাধ্যমে সরকার গঠনের কোন অভিযোগ নেই। আধুনিক বিশ্বের সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গনতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা। একটি গনতান্ত্রিক দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকে। ক্ষমতাসীন সরকারের ভুল ত্রæটিগুলো বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা সংসদে তুলে ধরে। কিন্তু বাংলাদেশে সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা নেই বললেই চলে। জেনারেল এরশাদের আমলে গৃহপালিত বিরোধী দলের প্রধান ছিলো আ.স.ম আব্দুর রব। ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।

১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন ও জাতির পিতার হত্যাকান্ডের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে ১ম বার গণতান্ত্রিক সরকার বাধাগ্রস্ত হয়। ১৯৮১ সালের ৩০ শে মে রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান হত্যার মাধ্যমে ২য় বার গনতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। ১৯৮২ সালের ২৪ মাচ জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে। ৩য় বার গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দল সমুহ নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে জেনারেল এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ তত্তাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক সরকার হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সরকার গঠন করে। ১৯৯১ সালে শিশু গনতন্ত্রের যাত্রা শুরু করে। জেনারেল এরশাদের আমালে রাজনৈতিক দলের শ্লোগান ছিল ‘আমার ভোট আমি দেবো যাকে খুশি তাকে দেব’। এই মুহূর্তে দরকার কেয়ারটেকার সরকার, ক্ষমতায় থেকে সংসদ নির্বাচন মানিনা মানব না। মাগুরা এবং মিরপুর এর মতো নির্বাচন মানিনা মানব না ইত্যাদি, কেয়ারটেকার ছাড়া নির্বাচন মানিনা মানব না। হরতাল, অবরোধ, সচিবালয়ের সরকারী কর্মচারীদের দিগম্বর করা, বাস ট্রেনে আগুন জ্বালিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্র সংগঠন, আইনজিবি, শ্রমিক জনতা, রাজনৈতিক দলসমূহ ব্যাপকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলে।

বাংলাদেশ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে জিহাদ, ডা: মিলন, নুর হোসেন, বসুনিয়া, দিপালী সাহা প্রমুখ ছাত্র সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলের লিডার। বিরোধী দল ১৫৪ দিন হরতাল পালন করে। কেয়ারটেকারের অধীনে ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সংখ্যা গরিস্টতা নিয়ে সরকার গঠন করে। কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজন না করে বিএনপি ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে। ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার কয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা দখল করে রাখার মানসিকতার কারণে গণতন্ত্র হোছট খায়। বিএনপি প্রচার করতে থাকে পাগল এবং শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নহে।

অস্ট্রেলিয়ার স্যার নিনিয়ানকে নিয়ে দুতিয়ালি? ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয়পার্টি ক্ষমতা দখল করে রাখার জন্য সাংবিধানের দোহাই দিয়ে সংবিধানের আওতায় সংসদ নির্বাচন করতে হবে এই শ্লোগান দেয়। এভাবে বিএনপি জাপা আওয়ামী লীগ গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে জাতিকে একদলীয় শাসনের দাসত্ব শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার প্রয়াস চালায় এবং গনতন্ত্র পংগুত্ত বরণ করে। ক্ষমতাসীন দলের অধীনে ১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯৬, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল নিরস্কুশ বিজয় অর্জন করে।

কেয়ারটেকার সরকারের আন্দোলন (১) ১৯৯০ সালে জেঃ এরশাদের বিদায় : কেয়ারটেকার সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ডা: মিলন, জিহাদ, সেলিম, দেলোয়ার, রাউফুন বসুনিয়া, এডভোকেট ময়েজ উদ্দিন এর শাহাদাতের বিনিময়ে১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতন।

(২) ১৯৯৬ বিএনপি সরকারের বিদায় : বিরোধী দলের ৪৫ দিনের অবরোধ, ঢাকার মেয়র হানিফ এর জনতার মঞ্চ গঠন, সচিবালয়ে বিদ্রোহ, সচিবালয় এর কমচারী দিগম্বর ইত্যাদি। (৩) বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের বিদায় এবং কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজন। কেয়ারটেকার সরকার ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে ভোট ডাকাতি মুক্ত, কেন্দ্র দখলমুক্ত নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতিকে উপাহার দিয়েছে। কেয়ারটেকার সরকারের নিরপেক্ষ নির্বাচনের ফলাফল বিরোধী দলের সরকার গঠন এবং সদ্য ক্ষমতাচ্যুত সরকারী দলের বিরোধী দলের আসন গ্রহণ।

বাঙ্গলী জাতি ২৪ বছর পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী এবং পাকিস্তানী জেনারেলদের শোষণ ভুলে গেছে। ক্ষমতা দখল করে রাখার মানসিকতার কারণে রাজনৈতিক দলের লিডারদের সরকারে থাকলে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন মানিনা। বিরোধী দলে থাকলে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং কেয়ারটেকার সরকারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্দী করে। এভাবে সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিক শিষ্টাচার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে না পারলে বাংলাদেশের নাগরিকদের নিকট গনতন্ত্র একটি তামাশায় পরিনত হয়ে থাকবে। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের জন্য নিবাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব রয়েছে।বাংলদেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলের জাতীয় কাউন্সিলে অনেক অবাক করা বিষয় দেখা যায় । ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যানে পুরোজাতি এবং বিশ্ববাসী দেখেছে। দলীয় কাউন্সিল এর জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয় না। কাউন্সিলরদের কোন ভোটিং পাওয়ার নেই, কাউন্সিলরদের ভোট দানের সুযোগ নেই। রাজনৈতিক দলের সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠন, মনোনয়নপত্র বিক্রি, মনোনয়নপত্র দাখিল, একাধিক প্রাথী বা প্যানেল ইত্যাদি উল্লেখ থাকলেও তার কোন চর্চা নেই। ডেলিগেটদের ভোটাভুটির বাধ্যতামূলক কোন ব্যবস্থা নেই। যেখানে রাজনৈতিক দলের ডেলিগেটদের জাতীয় কাউন্সিলে ভোট দেওয়ার কোন সুযোগে নেই। সেখানে দেশে সুস্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে কে?

জাতি আশা করেছিলো বাংলাদেশে সংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইত্যাদি পদে জাতীয় পরিচায়পত্র দেখে ভোটারদের ব্যলট পেপার দেওয়া হবে! ব্যালট এর মুড়িতে ভোটারের স্বাক্ষর নিবে প্রিসাইডিং অফিসার। ইভিএম পদ্ধতি নিরপেক্ষ নির্বাচন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা হবে। ভোট কেন্দ্র দখল এবং ব্যালট চিনতাই হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিং এবং প্রিসাইডিং অফিসারের চাকরি চলে যাবে ইত্যাদি। কিন্তু বেড়ায় ক্ষেত খাওয়ার ন্যায়। জেনারেল এরশাদের আমলের ন্যায় প্রিসাইডিং অফিসারের সাহায্য নিয়ে ব্যালট চিনতাই কেন্দ্র দখল ইত্যাদি অব্যাহত আছে। সংসদ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যার নিরব স্বাক্ষী দেশি-বিদেশি মিডিয়া সিনিয়রসিটিজেনও দেশপ্রেমিক ভোটার।

সুষ্ঠু এবং অবাধ ও নিরাপদ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে বাঙ্গালী জাতির অবিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য করনীয় :

১) রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল সংবিধানের আওতায় নেতা নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে কমিশনার দিয়ে রাজনৈতিক দল এর গণতন্ত্র চর্চা করা। ২) রাজনৈতিক দলের নেতা নির্বাচনের জন্য ভোটাভুটি নিশ্চিত করা। ৩) সুষ্ঠু ও অবাধ নিরাপদ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এর জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা। ৪) শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বাচন কমিশন থেকে নির্ধারন করে ইউপি মেম্বার পদে এইচএসসি, ইউপি চেয়ারম্যান পদে গ্যাজুয়েট, উপজেলা চেয়ারম্যন, সাংসদ এবং মন্ত্রী পদে পোস্ট গ্যাজুয়েট বাধ্যতামূলক করা। ৫) ঘুষখোর, চাঁদাবাজ, লুটপাটকারী, মাদকের ব্যবসায়ীব্যাংক লোন খেলাপীকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা।

৬) নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেধাবী ছাত্রদের দিয়ে ৫০ জনের ভলেন্টিয়ার গ্রæপ তৈরি করা। ৭) ব্যালট ছিনতাই ও ভোট কেন্দ্র দখলকারীর ১৫ বছর জেল দেওয়া। ৮) ভোট কেন্দ্র দখলকারীর পিতা ও মাতাকে ৩ বছরের জেল দেওয়া। ৯) প্রতিটি ভোট কেন্দ্র দখলের জন্য দলের স্থানীয় নেতাদের ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা। ১০) সকল রাজনৈতিক দল এর পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ১১) বিনাপ্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত এ অপশন বাতিল করা। ১২) প্রতিটি পদে কম পক্ষে ৫টি রাজনৈতিক দলের ৫ জন প্রতিদ্বন্ধিতা করবে তা নিশ্চিত করা। ১৩) নির্বাচন কমিশন থেকে পোস্টার ছাপিয়ে দেওয়া। ১৪) ৮০% এর বেশি ভোট পড়লে পুনরায় ভোট গ্রহণ করা। ১৫) নির্বাচন এর তফসিল ঘোষণার পর মামলা থাকলেও কোন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কমীকে এরেস্ট না করা।

১৬) উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপি এবং মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য ২ বারের বেশি সুযোগ না দেওয়া। ১৭) জন প্রতিনিধি ২ বার এর বেশি নির্বাচন করা যাবে না ১৮) উপজেলা চেয়ারম্যান, এম.পি, মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী পদের বয়স সীমা ৬৫ বছর করা।

যেহেতু ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতায় থেকে শাসক দল ১৯৭৩,১৯৭৯,১৯৮৬,১৯৮৮, ১৯৯৬, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে নিবাচন পরিচালনা করে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ক্ষমতা দখলকারী সরকারের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ করে আসছে।

যেহেতু শাসক দল ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ এর সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিস্টতা পায় নাই। সেহেতু শাসক দল এর প্রতি জন মানুষের আস্থার সংকট তারই প্রমাণ করে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা নিয়ে ক্ষমতাসীন কোন শাসক দলই জন মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারে নাই। সকল ক্ষমতাসীন শাসক দল জনমানুষের মতামত না নিয়ে সাংবিধান এর দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে আসছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর নিরংকুশ ম্যান্ডেট দিয়েছে। যাহ ভোট কারচুপির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সেজন্য কেয়ারটেকার সরকারের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আরপিও সংশোধন করতে পারে। সুশীল সমাজ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্দোলন এবং মতামত দিতে পারে। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের জন্য সংসদে আইন পাশ করবে। রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী মেনুফেস্টুতে কেয়ারটেকার সরকার লিপিবদ্ধ করবে।

প্রেসিডেন্ট নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য সংলাপ করে। প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচিত হিসেবে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন উপহার দিতে পারেন নাই। সেজন্য কেয়ারটেকার সরকারের অডিন্যান্স জারি করেই দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এর পরিবেশ তৈরি করতে পারে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। জনগনকে ভোটের লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে দলীয় নমিনেশন ও প্রতীক বাতিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন এর সময় আসলে জোট-মহাজোট খেলা শুরু হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টি ও জামায়াত গণতন্ত্রের এজেন্সি হিসেবে জাতীর সামনে হাজির হয়ে থাকে। জোট-মহাজোট থেকে ছোট ও মাজারি দলগুলো বেরিয়ে আসলে রাজনৈতিক অঙ্গনে, চা দোকানে, টেবিল টক, টকশোতে ঝড় উঠে। এখন হট কেক জামায়াত। জামায়াত ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেছে।

একজন মেধাবী ফেসবুক ফেইজ বিশারদ লিখেছেন ‘জামায়াত একবার এ দলের সাথে গেছে তো আবার গেছে ও দলের সাথে। জামায়াতের কোন স্থায়ী আদর্শ নেই। জোট-মহাজোট এর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ক্ষমতার স্বার্থে জামায়াতের সাথে এসেছে এবং স্বার্থ উদ্ধার করে চলে গিয়েছে। আবার ও দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবী বাস্তবায়নে জামায়াতের কাছে এসেছে! তারাও ক্ষমতার সাধ পেয়ে জামায়াতকে নির্মম নির্যাতসহ ছেড়েছে। আবারো পুরনো মিত্র ক্ষমতা লাভের স্বার্থে জামায়াতের কাছে এসেছে এবং ক্ষমতারোহনও করেছে। সময়ের আবর্তনে এখন তারাও নতুন মিত্র খুঁজছে।

এক তত্ত¡াবধারক সরকার নিয়েই বড় দুটি দল বিভিন্ন সময়ে ভেল্কিবাজির পরিচয় দিয়ে দেশের সীমাহীন ক্ষতি করেছে। বিরোধি দলে থাকলে তাদের তত্ত¡াবধারক সরকার লাগে এবং আন্দোলনে জামায়াতকে লাগে। ক্ষমতায় আসার পর আর তত্ত্বাবধারক সরকার লাগে না। জাতির সাথে এ প্রতারণা উভয় দলই করেছে। তবে এ প্রতারণায় বিএনপির চেয়ে আওয়ামীলীগ অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে।

অবশেষে ১৯৯৬ সালে বিএনপি জনরোষে পড়ে নিজেই তত্ত্বাবধারক সরকার ব্যবস্থা প্রণয়ন করে ক্ষমতা ছেড়েছে। আর যে তত্ত¡াবধারক সরকারের দাবীতে আওয়ামীলীগ শতশত মানুষের জীবনহানি করেছে, জ্বালাও পোড়াও, বছরকে বছর হরতাল অবরোধসহ ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড করে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ও ব্যবসায় বাণিজ্য নষ্ট করেছে। ক্ষমতায় আসার পর তারাই সংবিধান পরিবর্তন করে এ ব্যবস্থা বাতিল করেছে। আজ কথিত গণতন্ত্রের মানসকণ্যার যুগে সরকার গঠন করতে ভোট লাগে না।

একমাত্র জামায়াতে ইসলামী তখন থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় স্বার্থে তত্ত্বাবধারক সরকারের পক্ষে আছে। একমাত্র জামায়াতে ইসলামী কোন বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তির কাছে ধরনা দেয়নি। জামায়াতই কেবল স্থায়ী আদর্শ ও বিশ্বাসযোগ্য নীতির উপর অটল থেকেছে। বাকীরা ক্ষমতার মোটে বারবারই টালমাটাল হয়েছে। ফলে দেশপ্রেমী তরুণ সমাজের কাছে জামায়াত আজ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিশ্বস্ত ও অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে আশার আলো হয়ে উঠেছে। যখন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি দাবাীদাররা ভিনদেশী তাবেদার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

আজও নিরপেক্ষ নির্বাচন, গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন, সামাজিক ন্যায় বিচার, সুষমবণ্টন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে জামায়াতকে সাথে নিয়ে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই।

বাঙ্গালী জাতি উঁচুমানের আদর্শিক রাজনৈতিক দল ও লিডারের সংকটে ভুগছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ১৪ বছর জেল খেটেছেন। বাংলাদেশের নাগরিকদের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আজও আন্দোলন করতে হচ্ছে। জোট-মহাজোট কে গণতন্ত্রের স্বাদ গোলে মেটাত হলেও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে হবে।

এদেশের রাজনীতিতে আদর্শিক সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে জোট-মহাজোট খেলা বন্ধ করে একক দলীয় নমিনেশন দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের মতো নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

লেখক : গবেষক ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!