দিনাজপুর আ. লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ২৮ নভেম্বর, পদ নিয়ে বিভক্তি
<![CDATA[
দীর্ঘ এক দশক পর দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ২৮ নভেম্বর। সম্মেলন ঘিরে জেলা শহর সেজেছে নতুন সাজে। রঙিন পোস্টার-ব্যানারে রাস্তা, সভা মঞ্চ, আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভরে গেছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সব জল্পনা-কল্পনা গ্রুপিং লবিং পেছনে ফেলে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি যেন কাউন্সিলের মাধ্যমে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়।
দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগ একসময় শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। বর্তমানে দিনাজপুর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক ও ভোটব্যাংকে ফাটল ধরেছে। জেলা উপজেলা সব জায়গায় দ্বিধাবিভক্ত। দিনাজপুর ৬টি আসনেই সংসদ সদস্যরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা কাউন্সিলে মাইনাস কমিটি করার জন্য নিজেদের শক্তি বাড়াতে চাচ্ছে। ফলে জেলা আওয়ামী লীগের ৬টি আসনেই ভোটব্যাংকে আঘাত পড়ছে। এই অবস্থায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন।
এদিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৩টি গ্রুপ হয়েছে। দিনাজপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী উপজেলা কমিটির ১৯ জনের স্বাক্ষর নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বরাবরে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে নানা গুঞ্জন।
এদিকে কমিটিতে আসার জন্য সভাপতি সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বিগত কমিটির সিনিয়র ও বর্ষীয়ান নেতাসহ অনেক নতুন মুখ। এই সম্মেলনে সভাপতি ও সম্পাদক পদে নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে ডজনখানেক নেতাকর্মী পদপ্রার্থী।
চা-স্টলগুলোতে আলোচনার ঝড় বইছে, কে আসছেন জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বে। এ কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে একটানা ১০ বছর কাটিয়ে দেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলেও ইলেকশনের চেয়ে সিলেকশনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের সম্ভাবনা বেশি থাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা কাউন্সিলদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের। এ জন্য অধিকাংশ সম্ভাব্য প্রার্থীরা কাউন্সিলদের দ্বারে দ্বারে না গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় বিএনপির সমাবেশ উপলক্ষে জবাই হচ্ছে অর্ধশতাধিক গরু
আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক মন্ত্রী, ৭ বারের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমএইএইচ মাহমুদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী নাম শোনা যাচ্ছে।
এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ৪ বারের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জনশীল গোপাল, সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলতাফুজ্জামান মিতা, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মির্জা আশফাক হোসেন, সম্পাদক ফারুকুজ্জামান মাইকেল, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তহিদুল ইসলাম সরকার প্রমুখ।
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি, দল অবশ্যই যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবে। তারা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাই একযোগে কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন।
সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদস্য ও আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলতাফুজ্জামান মিতা জানান, তিনি দীর্ঘ ১০ বছর পর একটি সফল ও সুন্দর সম্মেলনের জন্য শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। সম্মেলনের মাধ্যমে দল আরও গতিশীল হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
আরও পড়ুন: জেলা সম্মেলনকে ঘিরে চাঙ্গা নেত্রকোনা আ.লীগ
বিরল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রমা কান্ত বলেন, দীর্ঘদিন পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন প্রাণ ফিরে আসছে। ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে দল আরও সুসংগঠিত হবে। সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীরা আবার উজ্জীবিত হয়েছেন।
ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ ময়দানে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মঞ্চ করা হয়েছে। সোমবার (২৮ নভেম্বর) বেলা ১১টায় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী শ্রী রমেশ চন্দ্র সেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড, হাছান মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান, নৌ প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সর্বশেষ দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেই কাউন্সিলে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার সভাপতি ও আজিজুল ইমাম চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
]]>