নকশিপল্লীর হাত ধরে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গাইবান্ধার নারীরা
<![CDATA[
সুঁই-সুতা হাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাইবান্ধার নারীরা। নকশিকাঁথা, শাড়ি, ওয়ান পিস, টুপিস, থ্রিপিস, এপ্লিকের কাজ, নকশি বেডশিট, বুটিকের ড্রেস, চাদর, পর্দা, কুশন, টেবিল ম্যাট ও সালোয়ার কামিজসহ অসংখ্য হাতে তৈরি পোশাক নিয়ে কাজ করছেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ির নারী উদ্যোক্তারা। এসব তৈরি পণ্য দেশের বাজার ছাড়িয়ে রফতানি হচ্ছে বিদেশে।
পলাশবাড়ি উপজেলার নুনিয়াগাড়ি, উদয়সাগর, গৃধারীপুর, আমবাড়ি ও সুইগ্রাম এলাকায় গড়ে উঠেছে মিতু আক্তার ও মেফালী বেগমের নেতৃত্বে হাতে তৈরি পোশাকের নকশিপল্লী।
সুঁই আর রঙ্গিন সুতায় নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় একেকটি পোশাকে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে নান্দনিক সব নকশা। এখানে কাজে বড় সুবিধা হলো, কর্মীরা নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়েও নকশিকাঁথার কাজ করতে পারছেন। ফলে তাদের প্রাত্যহিক কাজের কোনো ব্যাঘাত ঘটছে না। গৃহবধূ থেকে শিক্ষার্থী সবাই নিজেদের মৌলিক কাজের পাশাপাশি এ কাজ করে নিজেদের চাহিদা মেটাচ্ছেন ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
নারী কারিগররা জানান, নিজেদের সংসারের কাজের পাশাপাশি এ কাজ করে যে অর্থ উপার্জন হয় তা দিয়ে কেউ লেখাপড়ার খরচ বহন করছেন, কেউ সংসারের কাজে সহযোগিতা করছেন, সন্তানদের চাহিদা পূরণ করছেন। এখন তাদের ইচ্ছে পূরণে অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয় না।
নারী উদ্যোক্তা মিতু আক্তার ও শেফালী বেগম বলেন, ‘প্রত্যেক জেলায়, পাড়া-মহল্লায় নারী উদ্যোক্তা তৈরি করা দরকার, যাতে করে মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে না পড়ে। অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হলে বেকারত্বের হার কমার পাশাপাশি নারীরা স্বাবলম্বী হবে।’
আরও পড়ুন: নীলফামারীতে কাপড়ে নকশির কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারীরা
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার উদয়সাগর এলাকার শেফালীর বেগমের বাড়িতে অর্ধশত নারী নকশার কাজ করছেন। এদের মধ্যে কেউ বারান্দায়, কেউ উঠানে, আবার কেউ গাছ তলায় বসে নকশিকাঁথা শাড়ি, থ্রিপিস ও সালোয়ার কামিজসহ বিভিন্ন পোশাকে নকশা আঁকছেন।
কাজের ফাঁকে কথা হলে নারী কারিগররা জানান, কিছুদিন আগেও তাদের সংসারে অভাব ছিল। এখন প্রশিক্ষণ নিয়ে কাপড়ে নকশার কাজ করছেন। ফলে বাড়তি উপার্জন হচ্ছে। প্রত্যেকেই মাসে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা আয় করছেন।
গাইবান্ধা জেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের উপপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক আব্দুর সবুর বলেন, ‘জেলায় অসহায় ও কর্মহীন নারীদের স্বাবলম্বী করতে ১৭ হাজার ৮২০ জনকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এরমধ্যে ১০ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থানে যুক্ত আছে। প্রায় দেড় হাজার জনকে সেলাই প্রশিক্ষণসহ ঋণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। উদ্যোক্তাদের চাহিদা মতো সব ধরণের সহায়তার পদক্ষেপ নেয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘উদ্যোক্তা তৈরিতে আমরা সবসময় কাজ করছি। যেকোনো কারিগরি প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।
সমন্বিত পল্লী দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) বাস্তবায়নে জেলায় ২২ টি পণ্যভিত্তিক পল্লী গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে নকশিকাঁথার গড়ে তোলা হয়েছে ৭টি পল্লী। এসব পল্লীতে বর্তমানে ১৮৭০টি পরিবার কাজ করছেন।
]]>