নাক ডাকার কারণ ও সমাধান
<![CDATA[
ঘুমের মধ্যে কমবেশি অনেকেই আমরা নাক ডাকি। নাক ডাকার শব্দের পরিমাণ এতটাই হয় যে সেই আওয়াজে আশপাশে সবকিছু কাঁপতে থাকে। ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা হতে পারে নানা কারণে। তবে এ নিয়ে চিন্তিত হবেন না। কারণ, এটি কোনো স্থায়ী সমস্যা নয়।
আপনি দেখলেন আপনার পাশে যে মানুষটি শুয়ে আছে তিনি রীতিমতো জোরে জোরে নাক ডাকছে। আপনি তাকে পরদিন এই নাক ডাকার বিষয়ে বলুন, তিনি কখনোই এ বিষয়টি বিশ্বাস করতে চাইবেন না। আসলে যিনি নাক ডাকেন, তিনি সমস্যার বিষয়ে কিছুই অনুভব করেন না। আর এটাই ঝামেলার বিষয়।
তবে মুদ্রার একটা উল্টো পিঠও রয়েছে। এই মানুষগুলো বুঝতে পারেন না সমস্যাকে বাগে আনতে কী করবেন। তাদের তো নাক ডাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই সামনে যা-ই বলুন না কেন, পেছনে তাদের মধ্যে অবসাদ কাজ করতে পারে। তাই এ সমস্যা নিয়ে আরও বেশি চর্চা হওয়া দরকার।
কলকাতার পিজি হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডা. অরিন্দম দাস বলেন, ‘অনেকেই আমাদের কাছে এ সমস্যা নিয়ে আসেন। এর কিছু চিকিৎসা রয়েছে।’
আরও পড়ুন: নখের পরিবর্তন: ক্যানসারের উপসর্গ
নাকে গর্জন হয় কেন?
ডা. অরিন্দম দাসের ভাষ্যমতে, নাক ডাকা শব্দটাই ভুল। অধিকাংশ সময়ই এ আওয়াজ নাক থেকে হয় না। হয় গলা বা নাকের পেছনের অংশ থেকে। আসলে নাক থেকে বায়ু প্রবেশ করে শ্বাসনালি হয়ে ফুসফুসে পৌঁছায়। এবার কোনো কারণে এই বায়ুচলাচলের পথে কোথাও বাধা তৈরি হলে টার্বুলেন্ট এয়ার তৈরি হয়। তখন এই আওয়াজটা শোনা যায়। তাই নাক ডাকার সমস্যা নিয়ে আরও বেশি সচেতনতা জরুরি। তবেই সঠিক তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছাবে।
কয়েকটি কারণে নাক ডাকার সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়–
১. ওবেসিটি বা ওজন বেশি হলে।
২. নাকের হাড় বাঁকা হলে।
৩. গলায় কোথাও মাংসপেশি স্ফীত হয়েছে
৪. জিবেরো নিচের অংশ স্ফীত হয়েছে ইত্যাদি।
এই কারণগুলোর থেকেই মূলত শব্দ তৈরি হয়। তবে মনে রাখবেন, যেকোনো বয়সে এই রোগ হতে পারে।
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া
বেশির ভাগ মানুষ এই সমস্যাকে প্রথমে পাত্তা দেন না। তবে পরে দেখা যায় জটিলতা বেড়ে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার দিকে চলে যায়। এই রোগীদের ঘুমের মধ্যে শ্বাস আটকে যায়। তখন হার্ট রেট বেড়ে যেতে পারে। এমনকি ব্লাড প্রেশার অস্বাভাবিক হয়ে যায়। প্রতিদিন এমন হতে থাকলে একটা সময়ে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই এ সমস্যা ফেলে রাখবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এই লক্ষণে আর অপেক্ষা নয়
অনেক সময় আপনার সামনেই বিপদ থাকে। তবু আপনি চিনতে পারেন না, এমনটাই বলেছেন ডা. দাস। তার মতে, এই কয়েকটি উপসর্গ দেখলেই চিকিৎসকের কাছে আসুন–
১. ঘুম থেকে উঠেও ক্লান্তি যাচ্ছে না
২. সারা দিন ঘুম পাচ্ছে
৩. রাতে হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে পড়ছেন
৪. সকালবেলা মাথা ভারী
৫. কাশি কোনোভাবেই কমছে না ইত্যাদি।
চিকিৎসাতেই মুশকিল আসান
ডা. অরিন্দম দাস বলেন, প্রথমে রোগটা কেন হয়েছে জানতে হবে। সে ক্ষেত্রে পলিসোনোগ্রফি টেস্ট করতে হয়। এই পরীক্ষা ঘুমন্ত অবস্থায় করা হয়। এ ছাড়া এক্সরে, সিটিস্ক্যান করা যেতে পারে। এভাবেই রোগ ধরা পড়ে।
আরও পড়ুন: পাকস্থলী ক্যানসার: এই লক্ষণগুলো কি আপনার আছে?
রোগের চিকিৎসা
মনে রাখবেন, এ রোগের তেমন কোনো সহজ সমাধান নেই। বরং চিকিৎসার কিছু দিক রয়েছে। সেগুলো হলো:
১. ওজন কমাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওয়ার্কআউট করুন বা ওষুধ খান।
২. সি প্যাপ যন্ত্র মুখে লাগিয়ে ঘুমাতে হবে।
৩. কোথাও কোনো মাংসপিণ্ড বড় হয়ে গেলে বা অন্যান্য কোনো সমস্যা থাকলে সার্জারি করা।
৪. দেখা গেছে এক পাশ ফিরে শুলে নাক ডাকার সমস্যা কমে। তবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই।
]]>