বিনোদন

নিখোঁজ সন্তানকে এখনও খুঁজে ফেরেন বাবা

<![CDATA[

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোয় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের চার মাস পেরিয়ে গেলেও, ফেনীর ফুলগাজীর ইয়াছিনের সন্ধান মেলেনি এখনও। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে ফেসবুকে লাইভ করতে করতেই হঠাৎ ভিডিও অন্ধকার হয়ে যায়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ইয়াছিনের ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর থেকেই নিখোঁজ তিনি।

ইয়াছিন ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোসাইপুর গ্রামের বদিউল আলমের ছেলে। তিনি কনটেইনার ডিপোর লরি চালক হিসেবে কাজ করতেন।

ইয়াছিনের পরিবার জানায়, গত ৪ জুন ঢাকার গুলশান থেকে এপেক্স স্পিনিং অ্যান্ড নিটিং মিলস লিমিটেডের কাপড় নিয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোয় পৌঁছান ইয়াছিন। বিএম কনটেইনার ডিপো থেকে মালপত্র নিয়ে আবার রাতেই ঢাকা ফেরার কথা ছিল তার। মালপত্র লোড করার জন্য সেদিন ডিপোর ভেতরে গুদামের সামনে সিরিয়ালে ছিল ইয়াছিনের লরিটি। কিন্তু এর মধ্যেই ডিপোয় আগুন লাগলে সেই দৃশ্য ইয়াছিন ফেসবুক লাইভে এসে সবাইকে দেখানোর চেষ্টা করেন।

ইয়াছিনের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, ফেসবুকে ইয়াছিনের লাইভ দেখে তাকে কল দিই। তখন ইয়াছিন বলেছিল, ‘ভাই আগুনের ভয়াবহতা অনেক বেশি, দোয়া করিস’। একথা বলার কিছুক্ষণ পর হঠাৎই ইয়াছিনের লাইভ অন্ধকার হয়ে যায়। ইউসুফ বলেন, ‘লাইভ বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে কল দিয়েও আর পাওয়া যায়নি।’

ইয়াছিনের বাবা বদিউল আলম বলেন, ছেলের ফোন বন্ধ পেয়ে দ্রুত আমরা সীতাকুণ্ড ডিপোয় যাই। সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হতাহতদের মাঝে ইয়াছিনকে খুঁজি। মরদেহগুলো বারবার দেখেছি। কিন্তু ইয়াছিনের সন্ধান মেলেনি। ছেলেকে জীবিত পাওয়া অথবা ছেলের মরদেহ শনাক্তের জন্য আমার ডিএনএ নমুনাও দিয়ে এসেছি। কখনও কখনও ছেলে হারানোর বেদনা সহ্য করতে না পারলে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ছুটে যাই। নিহতদের মরদেহগুলো ঘুরেফিরে দেখি।

আরও পড়ুন: বৈরুতের ভয়াবহতা মনে করিয়ে দিল সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণ

তিনি আরও বলেন, কদিন আগেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছি। সেখানে এখনও ডিপোয় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৪ জনের মরদেহ শনাক্তের জন্য রাখা আছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে ডিএনএ নমুনা অনুযায়ী আপনার ছেলের মরদেহ থাকলে ফোনে জানানো হবে।

বদিউল আলম বলেন, আমার চার মেয়ে ও তিন ছেলের মধ্যে ইয়াসিন ছিল তৃতীয়। পরিবারের সচ্ছলতার আশায় ১০ বছর আগে ইয়াসিন সীতাকুণ্ড বিএম কনটেইনার ডিপোয় গাড়ি চালকের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করে। প্রায় দুই বছর আগে সে পদোন্নতি পেয়ে বিএম কনটেইনার ডিপোর লরি চালক হয়। আমার স্ত্রী জহুরা বেগম সন্তানের শোকে এখন পাগলপ্রায়। মনে হলেই বিলাপ করে কাঁদে।

গত ৪ জুন রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোয় আগুন লাগে। ১১টার দিকে একের পর এক বিস্ফোরণে চতুর্দিক কেঁপে ওঠে। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে আগুনের ভয়াবহতা। সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে প্রায় ৬১ ঘণ্টার চেষ্টায়। 

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button
error: Content is protected !!