পাকিস্তান আমলের প্রশংসা, তীব্র সমালোচনার মুখে মির্জা ফখরুল
<![CDATA[
সরকার উৎখাতে আন্দোলনের হুমকি, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিতর্কিত নানা মন্তব্য করাসহ একেক সময় একেক কারণে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে হাজারো আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়া এই বিএনপি নেতা বর্তমান বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তান আমলের তুলনা করে এবার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছেন বলে মনে করছেন অনেকে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঠাকুরগাঁও শহরের কালীবাড়িতে নিজ বাসভবনে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার যেহেতু আমাদের অধিকার ও সম্পদ হরণ করেছে, এ দেশে শোষণ ও লুটপাট চালিয়েছে; সে কারণে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু এখন তার চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছি।’
বর্তমান সরকার দেশকে পাকিস্তান আমলের চেয়েও খারাপ অবস্থায় নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা ওই সময়ে আর্থিক ও জীবনযাত্রার দিক দিয়ে এখনকার চেয়ে ভালো ছিলাম। সে সময় মাত্র ২২টি পরিবার কোটিপতি ছিল। দেশে এখন এক লাখ ৯২ হাজার কোটিপতি আছে। এখানে দিন দিন গরিব মানুষের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, দেশে ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশকে উন্নত দেশ বলা যায় কীভাবে?’
মির্জা ফখরুলের এমন মন্তব্যের পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন বিএনপি মহাসচিব। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে ফখরুলের এমন মন্তব্যের জবাব দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আরও পড়ুন: ফখরুলের পাকিস্তান আমলের প্রশংসাকে দুঃখজনক বললেন কাদের
মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য শুধু রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিলই নয়, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানিও। বাংলাদেশের অগ্রগতি, সাফল্য, উন্নয়ন ও অর্জন যখন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত, তখন মির্জা ফখরুলের পাকিস্তান আমলের প্রশংসা করা অত্যন্ত দুঃখজনক।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নেতাদের এ ধরনের পাকিস্তানপ্রীতি প্রমাণ করে যে মহান স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে তারা এখনও বাংলাদেশে পাকিস্তানি ধারার রাজনীতি প্রবর্তন করতে চায়।
বিএনপি মহাসচিবের এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আবারও দলটির চিরাচরিত রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান ও স্বাধীনতাবিরোধী অপরাজনীতির গোপন অভিসন্ধির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ও গণমাধ্যমে যখন বাংলাদেশের অগ্রসরমান অর্থনীতির প্রশংসা করা হচ্ছে, তখন বিএনপি মহাসচিব নির্লজ্জভাবে পাকিস্তানের দালালি করছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে যারা রাজনৈতিক ও পারিবারিকভাবে পাকিস্তানি দর্শনের রাজনীতিকে লালন করে, তারা স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এখনও ‘পেয়ারে পাকিস্তান’ মন্ত্র জপছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন মির্জা ফখরুল। শুক্রবার সন্ধ্যায় ফেসবুক পোস্টে বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন রাজনীতিবিদ, বিশ্লেষক, লেখক ও গবেষক মোহাম্মদ এ আরাফাত। পোস্টের শুরুতেই তিনি লিখেছেন, ‘পাকিস্তান আমল ভালো ছিল-এ কেমন মানসিক প্রতিবন্ধীতা?’
মির্জা ফখরুলের বির্তর্কিত বক্তব্যের জবাবে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সকল সমস্যার সমাধান করে ফেলেছে, এ কথা কেউ বলবে না। পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলোও ‘সকল’ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। বাংলাদেশ তো এখনও ‘উন্নত’ দেশের জায়গায়ই পৌঁছেনি। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হয়েছি। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ হয়েছি। বিদেশিদের ঋণের ও দানের টাকার পরিবর্তে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারার যোগ্যতা ও সক্ষমতা অর্জন করেছি। কিন্তু এখনো অনেক দূরের পথ বাকি। সব ঠিকঠাক থাকলে ২০৪১ সালে হয়তো উন্নত দেশ হবো। কিন্তু তারপরেও সকল সমস্যার সামাধান হবে না, কারণ তা হয় না। তবে, ২০ বছর আগের থেকে যেমন তুলনামূলকভাবে আমরা ভালো আছি, তেমনি ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হতে পারলে বর্তমানের থেকে আরও ভালো থাকবে দেশের মানুষ।
তিনি আরও বলেন, ২০ বছর আগের বাংলাদেশে অনেক মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো। আর এখন আমরা এই বিশ্ব মন্দার মধ্যেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
ফেসবুকে দেয়া পোস্টের শেষ অংশে মোহাম্মদ এ আরাফাত লিখেছেন, ‘শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু কিছু মানুষের মানসিকতার উন্নয়ন হচ্ছে না! যদিও পাকিস্তানের থেকে সকল অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে, তারপরও কিছু লোক মনে করে পাকিস্তানই নাকি ভালো ছিল। পাকিস্তানের শিক্ষিত শ্রেণি যদিও কিছুদিন আগে আকুতি করেছে পাকিস্তানকে অন্তত বাংলাদেশের মতো বানিয়ে দিতে। আর, আমাদের মানসিক প্রতিবন্ধী বাংলাদেশের কিছু লোক উল্টো কথা বলছে। দুঃখজনক!’
মোহাম্মদ আরাফাতের ওই ফেসবুক পোস্টের নিচে মির্জা ফখরুলের সমালোচনা করে নানা মন্তব্য করেছেন শত শত মানুষ।
ওয়াহিদুজ্জামান অপু নামে একজন লিখেছেন, ‘এখনই ওকে (মির্জা ফখরুল) গ্রেফতার করা উচিৎ’। জহির ইকবাল নামে অপর একজন লিখেছেন, ‘উনাকে উনার নিজ দেশে (পাকিস্তানে) ফেরত পাঠানো হোক’। এছাড়া আবুল কালাম আজাদ নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও যারা মনে করেন বাংলাদেশের চাইতে পাকিস্তান ভালো ছিল, সেই সকল পাকিস্তান প্রেমিকদের বলবো আপনারা বাংলাদেশে না থেকে পাকিস্তানে চলে যাওয়াই ভালো’।
আরও পড়ুন: সংযত না হলে পুলিশের ওপরও আঘাত আসবে: ফখরুল
দল-মতের ঊর্ধ্বে গিয়ে এ ধরনের নানা মন্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের তীব্র সমালোচনা করেছেন অনেক সাধারণ মানুষ।
]]>




