খেলা

পুতিনের হুমকি: পারমাণবিক অস্ত্রে কতটা শক্তিশালী রাশিয়া?

<![CDATA[

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গড়িয়েছে আট মাসে। এ যুদ্ধে রাশিয়া পারমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে কিনা, সে বিষয়টিও ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে বারবার। এখন পর্যন্ত তেমন কিছু না ঘটলেও, সম্প্রতি ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়াকে সংযোগকারী একমাত্র সেতুতে বিস্ফোরণের পর এ নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসবাদের’ অভিযোগ এনে ‘সর্বশক্তি’ প্রয়োগের হুমকি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর পুতিনের এ হুমকিকে হালকাভাবে নেয়ার কোনো কারণ নেই বলে সতর্ক করেছেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যদিও রাশিয়া ইউক্রেনে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে কি-না, তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে বিশেষজ্ঞ মহলে।

রাশিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি বলেছেন, ‘গত ৬০ বছরের মধ্যে পারমাণবিক হামলার ঝুঁকি এখন সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে। রুশ ভূখণ্ড রক্ষার জন্য পুতিন সর্বশক্তি প্রয়োগ করার কথা উল্লেখ করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি তিনি ঠাট্টা করে বলেননি।’

যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আগ্রহ থেকে এসব কথা বলেননি পুতিন। যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অন্য দেশগুলো যেন ইউক্রেনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না বাড়ায়, মূলত সে বিষয়েই সতর্ক করেছে মস্কো।  

রাশিয়ার কাছে থাকা পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা কত? 

কোনো দেশই তাদের কাছে থাকা পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা প্রকাশ করে না। ফলে পারমাণবিক অস্ত্রের সব পরিসংখ্যান হয় অনুমাননির্ভর। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক বৈশ্বিক পলিসি থিংক ট্যাংক ‘ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টে’র মতে, বিশ্বের মধ্যে রাশিয়ার কাছেই সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৯৭৭টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে, যে ডিভাইসগুলো পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায়। যদিও এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার ওয়ারহেড মেয়াদোত্তীর্ণ।  

আরও পড়ুন: ‘ইউক্রেনের ৬ শহরে পরমাণু বোমা ফেলতে পারেন পুতিন’

বাকি সাড়ে ৪ হাজার পারমাণবিক ওয়ারহেডের মধ্যে বেশিরভাগই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা রকেটের মতো কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র, যেগুলো দীর্ঘ দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এগুলোকে সাধারণত পারমাণবিক যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট অস্ত্র হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।

এর বাইরে ‘কম ধ্বংসাত্মক’ যে পারমাণবিক অস্ত্রগুলো আছে, সেগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে বা সমুদ্রে স্বল্প পরিসরে ব্যবহার হয়। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এর অর্থ এই নয় যে রাশিয়ার কাছে হাজার হাজার দূরপাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার রাশিয়ান ওয়ারহেড ‘মোতায়েন’ রয়েছে, যা বোমারু ঘাঁটি বা সাবমেরিনগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে। 

রাশিয়ার তুলনায় অন্যদের অবস্থান কোথায়? 

জানা যায়, রাশিয়ার পর সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোভুক্ত কয়েকটি দেশের কাছে। তাদের কাছে এ ধরনের অস্ত্র রয়েছে সর্বমোট ৫ হাজার ৯৪৩টি। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে ৫ হাজার ৪২৮টি, ফ্রান্সের কাছে ২৯০টি এবং যুক্তরাজ্যের কাছে আছে ২২৫টি।  

এছাড়াও চীনের কাছে ৩৫০টি, পাকিস্তানের ১৬৫টি, ভারতের ১৬০টি, ইসরাইলের ৯০টি এবং উত্তর কোরিয়ার হাতে আছে ২০টি পারমাণবিক অস্ত্র।      

পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) সই করা ১৯১টি রাষ্ট্রের মধ্যে রয়েছে চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। এ চুক্তির অধীনে, তাদের পারমাণবিক ওয়ারহেডের মজুত কমাতে হবে এবং তাত্ত্বিকভাবে ধীরে ধীরে এসব অস্ত্র সম্পূর্ণ নির্মূল করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

ভারত, ইসরাইল ও পাকিস্তান কখনোই এনপিটিতে যোগ দেয়নি এবং উত্তর কোরিয়া ২০০৩ সালে ওই চুক্তি থেকে সরে আসে। পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে ইসরাইল কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে তার পারমাণবিক কর্মসূচির কথা স্বীকার করেনি, তবে তাদের কাছে যে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে তা কম-বেশি সবারই জানা।  

পারমাণবিক অস্ত্র কতটা ধ্বংসাত্মক? 

পারমাণবিক অস্ত্রগুলো তৈরিই করা হয় সর্বোচ্চ ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য। তবে ধ্বংসের মাত্রা কেমন হবে তা নির্ভর করে ওয়ারহেডের আকার, মাটি থেকে কতটা উঁচুতে এটি বিস্ফোরিত হবে এবং স্থানীয় পরিবেশের ওপর।  

আরও পড়ুন: আবারও পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি রাশিয়ার

কিন্তু ক্ষুদ্রতম পারমাণবিক অস্ত্রও ব্যাপক প্রাণহানি এবং দীর্ঘস্থায়ী পরিণতির কারণ হতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমায় যে বোমাটি প্রায় দেড় লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল, সেটি ছিল ১৫ কিলোটনের। সেই তুলনায় এখনকার পারমাণবিক অস্ত্রগুলো ১ হাজার কিলোটনের বেশি হতে পারে। 

ফলে এ ধরনের পরমাণু অস্ত্র এখন কোনো অঞ্চলে বিস্ফোরিত হলে, সেখানে কারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ এটি যেখানে আঘাত হানবে, তার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে থাকা সব ভবন বা অবকাঠামো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। * 

*বিবিসি থেকে অনূদিত

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!