বিনোদন

প্রাকৃতিক যত দুর্যোগে বিপর্যস্ত হয়েছে বিশ্ব

<![CDATA[

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাণহানির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে সমানতালে। ২০২২ সালে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২৬০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। প্রাণহানির বিবেচনায় ২০২২ সালের শীর্ষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল বন্যা।

পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও ভারতে বন্যায় ৩ হাজারের মতো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর বাইরে আফগানিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্প এবং পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে ক্ষরার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন আরও কয়েক হাজার। 

পাকিস্তানের বন্যা 

২০২২ সালে সংঘটিত বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটি হলো পাকিস্তানের বন্যা। প্রাণহানির দিক বিবেচনায় জুন মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলা এই বন্যাই সবার আগে। প্রায় ৫ মাসব্যাপী এই বন্যায় ১ হাজার ৭৩৯ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে ১৭ লাখ বাড়ি।

পাকিস্তান সরকারের দাবি, এই বন্যায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এই বন্যা দেশটির অর্থনীতির মেরুদণ্ড প্রকারান্তে ভেঙে দিয়েছে বলা চলে। 

আফগানিস্তানের ভূমিকম্প 

২০২২ সালে প্রাণহানির বিবেচনায় আফগানিস্তানের ভূমিকম্প অন্যতম ভয়াবহ। গত ২১ জুন আফগানিস্তানের পাকতিকা ও খোস্ত প্রদেশে ভয়াবহ ওই ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। হতাহতের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে কেবল নিহতই হন ১ হাজার ৩৬ জন। বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভর করে চলা আফগানিস্তান এই ভূমিকম্পের পর বেশ বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে।  

নাইজেরিয়ায় বন্যা 

পাকিস্তানের বন্যার মতোই আরেকটি প্রাণ সংহারি বন্যা দেখা দিয়েছিল আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায়। প্রায় ৬ মাসব্যাপী এই বন্যায় প্রাণ হারান ৬১২ জন। বিগত এক যুগের ইতিহাসে দেশটি এর চেয়ে ভয়াবহ কোনো বন্যার মুখোমুখি হয়নি। প্রাণহানির সংখ্যা ৬ শতাধিক হলেও, এ বন্যার কারণে দেশটির ১৪ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। 

দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্যা 

নাইজেরিয়ার মতো বন্যা দেখা দিয়েছিল আফ্রিকার আরেক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায়। ২০২২ সালের এপ্রিলে দেশটির পূর্ব উপকূলীয় এলাকাগুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়। এসব এলাকার মধ্যে বন্দরনগরী ডারবানও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই বন্যায় ৪৬১ মারা যান। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৭০ জন। এ ছাড়া ওই বন্যায় অন্তত কয়েক হাজার মানুষের বাড়িঘর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। 

ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্প 

কেবল বন্যা নয়, ভূমিকম্পও ২০২২ সালজুড়ে সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে চোখ রাঙিয়েছে। গত ২১ নভেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সিয়াঞ্জুরে আঘাত হানে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প। ওই ভূমিকম্পে অন্তত ৩৩৪ জন প্রাণ হারান।  
ফিলিপাইনে ঘূর্ণিঝড় 

২০২২ সালে প্রাণসংহারী প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ ছিল ফিলিপাইনের ঘূর্ণিঝড়। ১০ এপ্রিল আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড়ে ২১৪ জনের মৃত্যু হয়। বিপুল সংখ্যক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। দেশটির সরকারের দেয়া তথ্যানুসারে, ওই ঘূর্ণিঝড় বিগত কয়েক বছরের মধ্য সংঘটিত ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে অন্যতম। 

ব্রাজিলে বন্যা 

প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনাগুলো সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে এশিয়া, আফ্রিকা এগিয়ে থাকলেও খুব একটা পিছিয়ে নেই লাতিন আমেরিকাও। লাতিন অঞ্চলে ইদানিং ঘন ঘন দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। 
গেল মার্চ-এপ্রিলে ব্রাজিলের পেট্রাপোলিস শহরে ভয়াবহ ব্ন্যা দেখা দেয়। সরকারের দেয়া তথ্যানুসারে, ওই বন্যায় ২৩৩ জনের মৃত্যু হয়। প্রাচীন আমলে ব্রাজিল যখন রাজতন্ত্রের অধীনে ছিল তখন এই পেট্রাপোলিস শহরটি সম্রাটের গ্রীষ্মকালীন অবকাশযাপন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হত। অথচ প্রবল বন্যার কারণে শহরটি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা সারিয়ে তুলতে কয়েক মাস লেগে যায়।  

পূর্ব আফ্রিকায় খরা 

পূর্ব আফ্রিকার অধিকাংশ এলাকায় ব্যাপক খরা দেখা দিয়েছেলি ২০২২ সালে। জাতিসংঘ এ খরাকে বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়বাহ বলে আখ্যা দিয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাব অনুসারে, ওই খরায় কেবল উত্তর-পূর্ব উগান্ডায় অন্তত ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে খাবারের অভাবে। এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের হিসাব আমলে নিলে এ সংখ্যা দ্বিগুণও হতে পারে। 

ভারত-বাংলাদেশে বন্যা 

বাংলাদেশ এবং ভারতে বন্যা নতুন বিষয় নয়। তবে নিকট ইতিহাসে চলিত বছরের বন্যা অন্যতম ‘ভয়াবহ’ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, এবারের বন্যায় ভারতের আসামে অন্তত ১৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশেও প্রায় হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন। বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন কয়েক লাখ মানুষ।  

আফগানিস্তানে বন্যা 

২০২২ সালে আফগানিস্তান কেবল ভূমিকম্পই নয়, ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখিও হয়েছিল। ভূমিকম্পে ১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায় দেশটিতে। বন্যায় মৃত্যু হয় অন্তত ১৮২ জনের। আগস্টে সংঘটিত ওই বন্যায় ১৮২ জন মারা যাওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছিলেন আরও কয়েকশ’ মানুষ। 
অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত আফগানিস্তানে কাছাকাছি সময়ে সংঘটিত ভূমিকম্প ও বন্যায় দেশটির সংকট আরও বাড়ে। ব্যাপক মানবিক সহায়তার প্রয়োজন থাকলেও তার সামান্যই পূরণ করা হয়েছিল।

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button
error: Content is protected !!