Feni (ফেনী)ফেনী সদর

ফেনীতে তানিশা হত্যা: বাবাহীন এতিম নিশানের পরিবারকে সহায়তা করতো সৌদি প্রবাসী তানিশার বাবা

বিশেষ প্রতিবেদক-

 

ফেনীর কালিদহে মাদ্রাসাছাত্রী তানিশা উসলামের হত্যাকারী গ্রেপ্তার আক্তার হোসেন নিশানে বাবা সাহাব উদ্দিন প্রায় ১৬ বছর আগে পাকিস্তানে থাকা অবস্থায় মারা যায়। সেখানে নিশানের মা ও ছিলো। বাবার মৃত্যুর সময় নিশান তখন মায়ের গর্ভে ছিলো। নিশানের বাবা মারা যাওয়ার পর তানিশার বাবা শহিদুল ইসলাম সৌদিআরব থাকা অবস্থায় ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে (নিশানের মা) বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করেন। পরে তানিশার বাবা নিশানের পরিবারকে থাকার জন্য ঘর তৈরীতে সহায়তা করেন। নিশান জন্মের পর জেঠা শহিদুল ইসলাম সৌদিআরব থেকে নিশানদের জন্য সহায়তা করে আসছিলেন।

চাচাতো ভাইয়ের জবাই এ খুন হওয়া তানিশা ইসলামের একাধিক স্বজনরা বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে প্রতিবেদককে এমন তথ্য দিয়েছেন। নিশান লস্করহাট মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণির ছাত্র।

সেই নিশানই যে তার মেয়ের খুনি হবে এমনটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তানিশার বাবা। তানিশাকে হত্যার কয়েক ঘন্টা আগেও ভিডিও কলে তানিশার সাথে সৌদি আরবে থাকা বাবা শহিদুল ইসলামের কথা হয়। আগের দিন বৃহস্পতিবার তানিশার জন্মদিনের দিনও একাধিকবার ভিডিও কলে একাধিকবার কথা হয় বাবার।

নিহত তানিশা সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের কালিদহ গ্রামের আনোয়ার ড্রাইভারের বাড়ির সৌদিআরব প্রবাসী শহিদুল ইসলামের ছোট মেয়ে। তানিশা ফেনী শহরের ডাক্তারপাড়াস্থ মহিউচ্ছুন্নাহ আবাসিক মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। করোনার কারণে সম্প্রতি মাদ্রাসা ছুটি দিলে মাদ্রসার হোস্টেল থেকে সে বাড়িতে চলে যায়।

এদিকে ‘ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে’ গলা কেটে তানিশাকে হত্যা করেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে ঘাতক আক্তার হোসেন নিশান।

মর্মান্তিক। বর্বর। পাশবিক। চাচাত ভাইয়ের কু-দৃষ্টি পড়েছিল এক মাদ্রাসাছাত্রীর ওপর। আর সেই লালসা চারিতার্থ করতে ব্যর্থ হয়ে গলা কেটে হত্যা করে তাকে। পাশবিক এ ঘটনার নায়ক আক্তার হোসেন নিশান। যে ওই ছাত্রীর আপন চাচাতো ভাই। শুক্রবার বিকালে নিশান ফেনীর আদালতে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়।

হৃদয়বিদারক এ ঘটনা ঘটে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পরে। নিশাতের জবানবন্দি অনুযায়ী ওই রাতে নিশান তার চাচির অনুপস্থিতিতে ওই ছাত্রীর ঘরে প্রবেশ করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চাচাত বোনের মুখ চেপে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। ওই ছাত্রী চিৎকার দিয়ে সবাইকে বলে দেয়ার হুমকি দিলে তার মাথায় আঘাত করে নিশান। এতে সংজ্ঞা হারায় ওই ছাত্রী। পরে তাকে টেনেহিঁচড়ে সিঁড়ি দিয়ে দোতলার ছাদের চিলেকোঠায় নিয়ে যায়। সেখানে থাকা নাইলনের রশিতে ফাঁস দেয়ার চেষ্টা করে। রশিতে ঝুলাতে ব্যর্থ হয়ে ওই কক্ষের একটি ড্রামে থাকা ছুরি দিয়ে চাচাত বোনের গলায় পরপর তিনবার আঘাত করে। শ্বাসনালি কেটে হত্যা নিশ্চিত করার পর ছাদ লাগোয়া একটি গাছ বেয়ে নিচে নেমে পালিয়ে যায় সে। এর আগে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য শুক্রবার বিকাল ৩টার পর গ্রেপ্তার হওয়া আক্তার হোসেন নিশানকে ফেনী সদর কোর্টের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে হাজির করা হয়। প্রায় দু’ঘণ্টার জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। আদালত ও পুলিশের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার আক্তার হোসেন নিশান সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের কালিদহ গ্রামের আনোয়ার ড্রাইভার বাড়ির মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে। সে লস্করহাট মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণির ছাত্র।

নিহতের মা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বড় মেয়েকে ইসলামকে নিয়ে পাশের বাড়ি বেড়াতে যান তিনি। ওই সময় ঘরে ছোট মেয়ে ও তার বৃদ্ধ শাশুড়ি ছিলেন। রাত ১০টার দিকে পাশের বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি ফিরে ছোট মেয়েকে না দেখে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। এক পর্যায়ে সিঁড়ি বেয়ে বাড়ির ছাদে উঠলে ছাদের চিলেকোঠা ঘরে রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি। এ সময় তাদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে পুলিশকে খবর দেয়।

নিহতের বড় বোন জানান, গত বুধবার ছোট বোনের জন্মদিন থাকায় বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি স্বামীর বাড়ি থেকে বোনের জন্য গিফট নিয়ে বাবার বাড়ি আসেন। ঘটনার সময় তাদের একমাত্র ভাই পার্শ্ববর্তী মসজিদে ইতেকাফে ছিল।

ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওমর হায়দার জানান, এ হত্যার ঘটনায় জিঙ্গাসাবাদের জন্য গত বৃহস্পতিবার রাতেই নিহতের চাচাতো ভাই আক্তার হোসেন নিশানকে আটক করে পুলিশ। শুক্রবার সকালে নিহতের ভাই বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানান, মরদেহের গলায় ছুরির আঘাত রয়েছে। শ্বাসনালী কেটে যাওয়ায় কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। তবে কিশোরীকে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) এএনএম নুরুজ্জামান জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রশি, খুনির জুতোসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে।

পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী জানান, ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকান্ডের গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করেছে পুলিশ। থানা পুলিশের পাশাপাশি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, পিবিআই ও সিআইডির একাধিক তদন্ত দল কাজ করেছে। শনিবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে হত্যার বিস্তারিত জানানো হবে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!