ফেনীতে পাঁচ শতাধিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ২৫০!
বিশেষ প্রতিনিধি->>
ফেনীতে ১২ বছর ধরে সাড়ে ৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেকেরই প্রধান শিক্ষক নেই। সহকারী শিক্ষকের পদে রয়েছেন দুই শতাধিক। ফলে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম।
জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় সর্বোচ্চ প্রতি ৪০ শিক্ষার্থীর জন্য এক শিক্ষক থাকার নিয়ম থাকলেও ফেনী শহরের জি এ একাডেমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১১ জন। এমন চিত্র শহরের প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
ফেনীর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের তথ্যমতে, ফেনীর ছয় উপজেলায় ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদোন্নতি নিয়ে মামলার জটিলতায় ২০০৯ সাল থেকে প্রধান শিক্ষকের ২৬২টি শূন্যপদে নিয়োগ নেই। এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কাজ চলছে চলতি ও ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে। তিন হাজার ১৩৫ সহকারী শিক্ষকের মধ্যে পদ শূন্য রয়েছে ২২১টি। ফলে সংকটের মুখে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সোয়া লাখের বেশি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে শিক্ষকরা চরম হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে ক্ষতির মুখে রয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
ফেনী শহরের জিএ একাডেমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুদ রায়হান বলেন, এক শিক্ষক দুই ক্লাস নেন। একবার ওই ক্লাসে, একবার আমাদের ক্লাসে। কোনো ক্লাসেই সঠিকভাবে পড়াতে পারেন না।
শিক্ষিকা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, শিক্ষক সংকটে পাঠদান ঠিকমতো হচ্ছে না। যারা কর্মরত তাদেরও উপবৃত্তি, ইউনিক আইডি, ভোটার হালনাগদ, জরিপসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের ব্যস্ত সময় পার করতে হয়।
অভিভাবক আলতাফ হোসেন বলেন, তার মেয়ে শহরের পাইলট প্রাইমারি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। শিক্ষক সংকটের কারণে তারা সঠিক পাঠদান করতে পারছেন না। তাই তিনি তৃতীয় শ্রেণি থেকে প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে তাকে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।
ফেনীর আলী মাদ্রাসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুন্সী ফরিদা আক্তার বলেন, একজন প্রধান শিক্ষকের অনেক প্রশাসনিক দায়িত্ব। সে দায়িত্ব সহকারী শিক্ষক সঠিকভাবে কখনোই পালন করতে পারেন না। কঠোর হওয়া যায় না বলেই প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটে, যার প্রভাব পড়ে সব ক্ষেত্রে।
ফেনী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী বছরের শুরুতেই সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগ হবে। তখন সংকট থাকবে না। প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগ বিষয় নিয়েও সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন।
ফেনীর ৪২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির নতুন সৃষ্টি করা পদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলেও জাতীয়করণ করা ১৩১টি সরকারি বিদ্যালয়ের একটিতেও এ পদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি।