ফেনীতে ৫ দিনে করোনায় ৩৭ জন আক্রান্ত, জেলায় সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৫৯৭ জন
বিশেষ প্রতিনিধি-
ফেনীতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরো ৩৭ জন। গত শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ মলিকুলার ল্যাবে ফেনী জেলার ২০৯টি এবং সিভিল সার্জন অফিস, নোয়াখালী থেকে পাঠানো ফেনী জেলার ২০২ জন বিদেশগামী যাত্রীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া ফেনী বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে ৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে নতুন করে ৩৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুন ৬০ জনসহ জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৫৯৭ জনে দাঁড়িয়েছে। বুধবার পর্যন্ত জেলায় ৩ হাজার ৭৬ জন সুস্থ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. রফিক উস-সালেহীন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত বছরের ১৬ এপ্রিল ফেনীতে প্রথম এক যুবকের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রামন শনাক্ত হয়। ফেনীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জেনেক্সপার্ট ল্যাব, নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাব, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে পরীক্ষার জন্য প্রায় ২১ হাজারের বেশি নমুনা সংগ্রহ করে প্রেরণ করা হয়েছে।
গত বুধবার নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ মলিকুলার ল্যাবে ফেনী জেলার ১০৪টি এবং সিভিল সার্জন অফিস, নোয়াখালী থেকে পাঠানো ফেনী জেলার ৪৪ জন বিদেশগামী যাত্রীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে নতুন করে ১০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সদরের ৩ জন, দাগনভূঁঞার ৪ জন, সোনাগাজীর ৩ জন, ছাগলনাইয়ার ২ জন, ফুলগাজীর ১ জন ও পরশুরামের ১ জন রয়েছে। এদের মধ্যে বিদেশগামী যাত্রী রয়েছে ১ জন।
এর আগে গত মঙ্গলবার নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ মলিকুলার ল্যাবে ফেনী জেলার ১০৫টি এবং সিভিল সার্জন অফিস, নোয়াখালী থেকে পাঠানো ফেনী জেলার ৭৫ জন বিদেশগামী যাত্রীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া ফেনী বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে ৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে নতুন করে ১৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সদরের ৩ জন, ছাগলনাইয়ায় ৪ জন, সোনাগাজীর ২ জন ও দাগনভূঁঞার ১ জন রয়েছে। এদের মধ্যে বিদেশগামী যাত্রী রয়েছে ১ জন।
তার আগে গত রোববার নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ মলিকুলার ল্যাবে সিভিল সার্জন অফিস, নোয়াখালী থেকে পাঠানো ফেনী জেলার ৮৩ জন বিদেশগামী যাত্রীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া ফেনী বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে ৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে নতুন করে ২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সদরের ১ জন ও দাগনভূঁঞার ১ জন রয়েছে। এদের মধ্যে বিদেশগামী যাত্রী রয়েছে ১ জন।
জেলায় আক্রান্ত ৩ হাজার ৫৯৭ জনের মধ্যে ফেনী সদরে ১ হাজার ৬১৫ জন, দাগনভূঞায় ৬১৬ জন, ছাগলনাইয়ায় ৪৮৭ জন, সোনাগাজীতে ৪০৪ জন, পরশুরামে ২২৮ জন, ফুলগাজীতে ২০২ জন ও ফেনীর বাইরের ৩৭ জন রোগী রয়েছে।
ফেনীতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জেলার কর্মরত সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেনসহ ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৫ জন পুরুষ ও ১১ জন নারী রয়েছে। মৃতদের মধ্যে সদর উপজেলায় ২৩ জন, সোনাগাজীতে ১১ জন, দাগনভূঞা উপজেলায় ৮ জন, ছাগলনাইয়ায় ৮ জন, পরশুরামে ৩ জন ও ফুলগাজীতে ২ জন রয়েছে। (শেষ ১০ জনের পরিচয় এ তথ্যে যোগ হয়নি)
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, গণমাধ্যমকর্মী, জনপ্রতিনিধি, সরকারী কর্মকর্তা, ব্যাংকার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিশু রয়েছে। ফেনীতে আক্রান্ত অনেক রোগী উন্নত চিকিৎসা নিতে যেয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে মারা গেলেও বেশিরভাগ মৃতব্যক্তিদের সংখ্যা জেলার স্বাস্থ্য বিভাগে তালিকায় যোগ হয়নি।
প্রসঙ্গত, ফেনীতে কোভিড-১৯ শনাক্ত’র চার মাসের মাথায় সংক্রমিতের সংখ্যা ১ হাজার ৫শ অতিক্রম করলো। সংক্রমিতের সংখ্যা ৫শ ছাড়াতে সময় লাগে ৭৬ দিন। পরের ৫শ ব্যক্তি সংক্রমিত হতে সময় লাগে ২৬ দিন। আর পরবর্তী ৫শ ব্যক্তি সংক্রমিত হতে ৩৫ দিন সময় লাগে। কোভিড-১৯ শনাক্ত’র সাত মাসের মাথায় সংক্রমিতের সংখ্যা ২ হাজার ও সাড়ে ১১ মাসের মাথায় সংক্রমিতের সংখ্যা ২ হাজার ৫শ অতিক্রম করে। পরবর্তী ৫শ শনাক্ত হয়ে মাত্র ১৫ দিন সময় লেগেছে। পরবর্তী ৫শ শনাক্ত হতে সময় লেগেছে ২৮ দিন।