পদ্মা সেতুর পিলারে এবার ধাক্কা দিয়েছে ফেরি বীর শ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর। এ ঘটনায় লৌহজং থানায় জিডি করেছে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন। বলেন, এ বিষয়টি তদন্ত করবে মাওয়া থানা পুলিশ।
সোমবার রাত ১১টার দিকে জিডিটি করেন সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেও জানান তিনি।
বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেন, ফেরিটি যখন পদ্মা সেতু ক্রস করছিল তখন একটি ট্রলার ফেরিটির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। ট্রলারটিকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রবল স্রোতের মধ্যে পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা লেগেছে।
বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান আরও জনান, ঘাট স্থানান্তরসহ অন্যান্য সুপারিশ নিয়ে আজ ঊচ্চপর্যায়ের বৈঠক বসবে।
সোমবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে যাওয়ার পথে বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নামের একটি রো রো ফেরি পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে আঘাত করে ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর। এতে ২৭টি যান ভর্তি রো রো ফেরিটির পেছনের অংশ ফেটে হুঁ হুঁ করে পানি ঢুকতে থাকে। এছাড়া খুঁটির সঙ্গে প্রচণ্ড ধাক্কায় ফেরিতে থাকা দুটি ট্রাক প্রাইভেটকারকে চাপা দেয়। এতে গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
বিআইডিব্লউটিসির সহ-মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) অফিসার আহমেদ আলী বলেন, এতে ফেরিতে থাকা দুইটি প্রাইভেটকার ও একটি ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ওই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন ৫ জন। তাদেরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, ফেরিটিতে পানি ওঠা অবস্থায় দ্রুত সেটি শিমুলিয়ার ২ নম্বর ঘাটে নোঙর করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তলব করা হয় ফায়ার সার্ভিসকে। পরে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিশেষ ব্যবস্থায় পাম্প লাগিয়ে পানি অপসারণ ও একই সঙ্গে ফেটে যাওয়া তলা মেরামতের কাজ করে বলে জানান
বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার সাফায়েত হোসেন।
তিনি আরো জানান, ফেরিটিতে প্রাইভেট কারসহ ছোট আকারের ১৬টি এবং ১১টি ট্রাক ছাড়াও বেশ কিছু যাত্রী ছিল।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, খুঁটির পাইল ক্যাপের কংক্রিট কিছুটা উঠে গেছে।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ফেরি বীর শ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের ধাক্কায় পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর খুঁটির পাইল ক্যাপের সামান্য কিছু অংশের কংক্রিট উঠে গেছে। এতে সেতুর তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তারপরও এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। ফেরিটতে থাকা যাত্রী ও যানবাহনের বড় ক্ষতি হতে পারতো।
পুলিশ জানায়, ফেরিতে শ’ পাচেক যাত্রী ছিলেন। ধাক্কায় আহত পাঁচ জন যাত্রী প্রামমিক চিকিৎসা নিয়ে গন্তব্যে ফিরে গেছেন।
এর আগে গত ২৩ জুলাই সকাল পৌনে ১০টায় রো রো ফেরি শাহজালাল পদ্মা সেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা দেয়।
ফেরিটি বাংলাবাজার ঘাট থেকে রওনা দিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে যাচ্ছিল।
ক্ষতিগ্রস্ত ফেরি শাহজালালের চালক আব্দুর রহমান জানান, ফেরির ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার পড়ে যাওয়ায় স্টিয়ারিং বিকল হয়ে যায়। তবে দ্রুত ঠিক হলেও এর আগেই প্রবল স্রোতে ফেরটির সামনের অংশ পদ্মা সেতুর খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান যাত্রীরা।
আঘাতটি পানির লেভেলের নিচে হলে ফেরিটি ডুবে যেতে পারতো।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের দাবি, শুধু জুলাই মাসেই এ নিয়ে ৩টি ফেরি সেতুর পিলারে আঘাত করেছে।
ওই ঘটনার পরই ফেরি শাহ জালালের চালক আব্দুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়।
এ ছাড়া ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে ফেরির দুই চালককে (মাস্টার ও সুকানি) দায়ী করা হয়েছে।