বনজ কুমারের মামলায় রিমান্ড শেষে কারাগারে বাবুল আক্তার
<![CDATA[
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের একদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
শনিবার (১২ নভেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতের ধানমন্ডি থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক শরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, একদিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিবের আদালত বাবুল আক্তারের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় মিথ্যা ও অসত্য তথ্য সরবরাহ ও প্রচারের অভিযোগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডি থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন বনজ কুমার মজুমদার।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনকে। বাবুল আক্তারকে ৪ নম্বর আসামি করা হয়। অন্য দুই আসামি হলেন বাবুলের ভাই হাবিবুর রহমান লাবু ও বাবুলের বাবা ওয়াদুদ মিয়া।
বনজ কুমার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তার নেতৃত্বাধীন তদন্ত সংস্থা পিবিআই, চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলা তদন্তাধীন থাকাকালে প্রধান আসামি হিসেবে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের নাম বেরিয়ে এলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ ও পিবিআইর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য জেলে থাকা বাবুল আক্তার ও অপর আসামিরা দেশ-বিদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক বিভিন্ন অপকৌশল এবং ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাবুল আক্তার ও অন্যান্য আসামির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় কথিত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন ৩ সেপ্টেম্বর বিদেশে পলাতক থাকা অবস্থায় তার ফেসবুক আইডি থেকে ইউটিউব অ্যাকাউন্টে ‘স্ত্রী খুন স্বামী জেলে খুনি পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে একটি ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেন।
আরও পড়ুন: ইলিয়াস বাবুলের বিরুদ্ধে পিবিআই প্রধানের মামলা
এজাহারে আরও বলা হয়, বিভিন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের মাধ্যমে তদন্তাধীন মিতু হত্যা মামলার তদন্তকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে উল্লেখিত ভিডিও ক্লিপ প্রচার করেন। আসামি ইলিয়াস হোসাইন ভিডিওতে প্রচারিত বক্তব্যে দেশের ভাবমূর্তি এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উসকানি, বাংলাদেশ পুলিশ এবং পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআই ও বিশেষ করে বাদীর (বনজ কুমার মজুমদার) মানসম্মান ও সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছে; যা দেশের মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে।
এজাহারে ওই ভিডিওতে প্রচারিত বিভিন্ন অভিযোগ খণ্ডন করে বলা হয়, আসামি ইলিয়াসের বক্তব্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করার, রাষ্ট্রের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা-বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে।
শুধু মিতু হত্যা মামলার তদন্ত ও বিচারকাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ২ নম্বর আসামি মো. হাবিবুর রহমান লাবু, ৩ নম্বর আসামি আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ও ৪ নম্বর আসামি বাবুল আক্তারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় এবং সার্বিক সহযোগিতায় ১ নম্বর আসামি ইলিয়াস হোসাইন অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাংলাদেশ পুলিশ ও বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআই এবং বাদীর মানসম্মান চরমভাবে ক্ষুণ্ন করার জন্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বক্তব্যসহকারে ফেসবুক আইডি ও ইউটিউব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেন।
হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে পিবিআইয়ের প্রধানসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাবুল আক্তার মামলা নেয়ার আবেদন করেছিলেন। তবে সেপ্টেম্বর মাসে সেই আবেদন আদালত খারিজ করে দেয়ার পর তখন পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হন বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার প্রথমে বাদী হয়ে মামলা করেন।
তদন্ত শেষে পিবিআই গত বছরের ১২ মে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। একই দিন বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় ১৩ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পিবিআই। বাবুল বর্তমানে কারাগারে।
]]>