বেনাপোল স্থলবন্দরের প্রধান রাজস্ব ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ। যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবন। অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই জরাজীর্ণ ভবনেই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে বন্দর ব্যবহারকারীরা। পাঁচ বছর ধরে এই অবস্থা চলতে থাকলেও ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা বা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। কাঠের গুঁড়ি ও বাঁশের খুঁটি দিয়ে ভবনের ছাদের ধস রক্ষার চেষ্টা করছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১৯৯৫ সালের ২৬ জানুয়ারি উদ্বোধন করা হয় ভবনটির। তখন থেকে এই ভবনে চলছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। ভবনটিতে অফিস করছেন বন্দর, কাস্টমস, নিরাপত্তা সংস্থা পিমা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সিঅ্যান্ডএফ সদস্যারা। ভবনটির বয়স মাত্র ২০ বছর যেতে না যেতেই দ্বিতীয় তলায় একটি ইউনিটে বড় বড় ফাটল ধরে। এতে বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় তলার একটি অংশ অফিস গুটিয়ে নেয় চেকপোস্ট আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির কর্মকর্তারা থেকে যায় ভবনটিতে। ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা বা সংস্কারের কোনো উদ্যেগ নেই বন্দর কর্তৃপক্ষের।
তিন তলা ভবনটির দ্বিতীয় তলা ধসে পড়ার শঙ্কায় ইতোমধ্যে বাঁশ ও কাঠের গুঁড়ি ও লোহার আ্যাঙ্গেল দিয়ে ভবন ধস রক্ষার চেষ্টা করছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর একটি ইউনিট যেটি ব্যবহার হচ্ছে সেটিও জরাজীর্ণ। সবসময় ছাদ থেকে বালি ঝরছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে ভবনে চলা ফেরা করতে হচ্ছে। যে কোনো সময় ভবন ধসে কয়েকশ’ মানুষের জীবনহানী ঘটতে পারে।বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, আমদানিকারকদের কাছ থেকে বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। অথচ সেই বন্দরের রাজস্ব আদায়ের প্রধান বাণিজ্যিক ভবনটি জরাজীর্ণ। আতঙ্কের মধ্যে ভবনে প্রবেশ করে কাজ করতে হয়। দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত ভবনটি সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ভবনটিতে বন্দর, কাস্টমস, নিরাপত্তা সংস্থার অফিস রয়েছে। সেখানে সবসময় তিন শতাধিক মানুষ বাণিজ্যিক কাজে অবস্থান করে। এমন একটি ভবন বাঁশ ও কাঠের খুঁটি দিয়ে ধস ঠেকানোর চেষ্টা দুঃখজনক। দুর্ঘটনা ঘটলে অনেক মানুষের প্রাণ যেতে পারে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া দরকার।
ভারত বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমডোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, শুরু থেকে বন্দরের দুর্বল অবকাঠামো নিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ রয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বন্দরকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে না নেওয়া হলে কখোনই কাঙ্ক্ষিত অবকাঠামো উন্নয়ন হবে না।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ভবনটি দ্বিতীয় তলার একটি ইউনিট ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে তালা মেরে রাখা হয়েছে। ভবনটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।