বাংলাদেশি পাট পণ্য রফতানিতে ফের অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কের প্রস্তাব ভারতের
<![CDATA[
বাংলাদেশের পাট পণ্য আমদানির ওপর আরও পাঁচ বছরের জন্য অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করতে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে দেশটির ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ট্রেড রেমিডিস বা ডিজিটিআর।
এর আগে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে পাঁচ বছর মেয়াদে প্রতি টনে ১৯ ডলার থেকে ২৫২ ডলার পর্যন্ত অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কারোপ করে ভারত, যার মেয়াদ গত ১ জানুয়ারি শেষ হয়েছে।
নতুন মেয়াদেও আগের হারেই শুল্কারোপের সুপারিশটি গেজেট প্রজ্ঞাপন হিসেবে গত ১০ অক্টোবর ডিজিটিআর এর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রজ্ঞাপন দেয়নি।
অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কারোপের ভারতীয় উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, পাটপণ্যের ওপর গত পাঁচ বছর যে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছিল ভারত, সেটি আরও পাঁচ বছর বাড়ানোর জন্য তাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছে ভারতের ডিজিটিআর। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি, আমরা এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছি। স্টেক হোল্ডার বা পাট পণ্যের রফতানিকারক যারা আছেন তাদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করছি। আমরা যাচাই বাছাই ও পর্যালোচনা করে এ ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে আমাদের অবস্থান জানাব।
এদিকে ভারতে বাংলাদেশের পাট ও পাটপণ্য রফতানিতে দেশটি অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করার কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছে বাংলাদেশের পাট শিল্প। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের সার্বিক রফতানি বাড়লেও কমেছে পাট পণ্যের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ও সার্বিক রফতানি।
২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ পাট ও পাট পণ্য রফতানি করেছিল ১১৬ কোটি ডলারের। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানি প্রায় তিন শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১১২ কোটি ডলারে। রফতানি লক্ষ্যমাত্রার থেকে রফতানি কম হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। এ বছর পাট ও পাট পণ্যের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪২ কোটি ডলার।
বিশেষ করে পাটের আঁশ, দড়ি, বস্তা ও ব্যাগ রফতানি কমেছে আগের বছরের থেকে ১৪ শতাংশ কম। আর চলতি বছরের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা কম হয়েছে প্রায় এক তৃতীয়াংশ।
আরও পড়ুন: পাটের আঁশ ছাড়ানোর যন্ত্র আবিষ্কার বারি’র বিজ্ঞানীদের
এদিকে বাংলাদেশি তৈরি পাটপণ্যের ওপর অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের কারণে পাটপণ্য রফতানি কমলেও ভারতে কাঁচাপাট রফতানি বেড়েছে অর্ধেকেরও বেশি।
২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে ভারতে কাঁচাপাট রফতানি হয়েছিল ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানি হয় ২১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের। যা আগের বছরের থেকে প্রায় ৫৬ শতাংশ বেশি।
এভাবে বাংলাদেশে তৈরি পাটপণ্যের আমদানি কমিয়ে বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট আমদানির মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে ভারতের পাটপণ্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) ভাইস-চেয়ারম্যান মো. মৃধা মনিরুজ্জামান মনির সময় সংবাদকে বলেন, আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ভারত আমাদের পাট পণ্যের ওপর অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে। তারপর আমরা এই সেক্টরে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। অ্যান্টি ডাম্পিংয়ের কারণে ভারতে যে পরিমাণ সূতা রফতানি হতো এখন তার অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত পাঁচ বছর ধরে আমরা ধীরে ধীরে বাজারটি হারিয়ে ফেলছি। পাশাপাশি আমাদের এখান থেকে প্রচুর কাঁচা পাট রফতানি হচ্ছে ভারতে যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
আরও পড়ুন: পাটের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা পাট মন্ত্রণালয় ছাড়াও সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টিতে আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি। আমরা বলেছি ভারত অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার না করলে বাংলাদেশ যেন কাঁচা পাট রফতানিতে শুল্ক আরোপ করে। এক্ষেত্রে একটা ভারসাম্য আসবে। নয়তো স্থলপথে ভারতে কাঁচাপাট রফতানি বন্ধ করতে হবে।
মৃধা মনিরুজ্জামান মনির বলেন, একদিকে ভারত আমাদের পাটপণ্য রফতানির ওপর অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করছে, অপরদিকে ভারতে স্থলপথে বিনাশুল্কে কাঁচা পাট আমদানি করছে, এটা বাংলাদেশি পাটপণ্য উৎপাদনকারীদের জন্য বৈষম্য তৈরি করছে।
বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যেই দেশের পাট পণ্য উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ইতোমধ্যেই অর্ধেক কারখানায় উৎপাদন প্রায় বন্ধ, আর অর্ধেক কারখানা চালু থাকলেও উৎপাদন কমে এসেছে। এ ব্যাপারে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে ডব্লিউটিএ’র সহায়তা নিতে হবে।
]]>