বাংলাদেশেই বিশ্বমানের হ্যাকার রয়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
<![CDATA[
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বাংলাদেশেই বিশ্বমানের হ্যাকার রয়েছে। এইতো কয়েকদিন আগে আমাকে পুলিশের এডিশনাল এসপি একজন হ্যাকারের কথা বললেন। যে হ্যাকার আমেরিকা হয়ে পাপুয়া নিউগিনি থেকে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। অথচ কোনো দেশই তাকে শনাক্ত করতে পারেনি। পরে সে বাংলাদেশে এসে অ্যারেস্ট হলো।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) টিএসসিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের ৫টি ছাত্রী হল এবং অধিভুক্ত ২টি কলেজের দুই হাজার শিক্ষার্থীকে দেয়া সাইবার ক্রাইম প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ ঘটনা বলেন।
ওই হ্যাকারের সঙ্গে নিজের কথোপকথন তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি সেই ছেলের সঙ্গে দেখা করলাম। দেখা করার পর জানতে পারলাম সে ছয়টি ব্যাংকের উপদেষ্টা। যে ছেলের আইটি বিভাগে এমন দক্ষতা তাকে আমি কাজে লাগাতে চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনেকেই বললেন, যে একবার ক্রাইমের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে তাকে ক্রাইম থেকে ফেরানো কঠিন।
সাইবার ক্রাইমের শিকার যে কেউ হতে পারে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, সাইবার ক্রাইমে শুধু যে মেয়েরা ভুক্তভোগী তা নয়, সব মানুষই এই ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। এই যে কিছুদিন আগে আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই কীভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেল, অথচ আমরা টেরই পেলাম না। অনেকদিন পর আমরা টের পেলাম। তাই সাইবার ক্রাইম বিষয়ে সবাইকেই সতর্ক থাকতে হবে।
সাইবার ক্রাইমে মেয়েদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, সাইবার ক্রাইমে মেয়েদের ভয় না পেয়ে, সাহসী হতে হবে। তাছাড়া আমাদের মেয়েরা তো হিমালয়ে গিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়ায়। ক্রিকেটে তাদের পারদর্শীতা দেখায়। ফুটবলে তারা জয়ের মালা ছিনিয়ে আনে সেই মেয়েদের ভয় পেলে চলবে না। তারা তাদের সাহসীকতায় সব ভয়কে জয় করবে এটাই আমার বিশ্বাস। কাজেই ক্রাইমকে ভয় পেলে চলবে না, প্রতিহত করতে হবে এবং এর যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থাও করতে হবে।
আরও পড়ুন: জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি হলে নিরাপত্তা বাহিনী বসে থাকবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সাইবার ক্রাইম প্রতিহত করার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ক্রাইমের সঙ্গে আমাদের কোনো কমপ্রোমাইজ নেই। ক্রাইমকে ভয় পেলে হবে না। একে প্রতিহত করতে হবে। সাইবার জগতকে জয় করে আমাদের কাজ করতে হবে। সাইবার ক্রাইম নিয়ে আমরা খুব ভালোভাবে চিন্তা করছি। পুলিশকে সাজাচ্ছি। আর এই জগতকে নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমরা একটি আলাদা বিভাগ চালু করেছি। আমরা সেটাকে বলি এনটিএমসি। আমরা এমনভাবে কাজ করছি যাতে আমাদের জনগণকে সাহায্য করতে পারি। আমরা সবার কাছে সহযোগিতা চাই। জনগণ সহযোগিতা করলে আমরা এই জায়গাটিকে আরও শক্তিশালী হিসেবে ব্যবহার করব।
ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল বলতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলছি। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নে এগিয়ে যাচ্ছি৷ যখন চর কুকরিমুকরি থেকে এক কৃষক ফোন করে জিজ্ঞেস করে আগামীকাল সে ফসল বুনতে পারবেন কি-না এবং সে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলছে তার কী ওষুধ দরকার তখন বলতেই হয় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। আবার আমাদের জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ডায়াল করলেই দেখবেন পুলিশ আপনার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এই যে এই টেকনোলজি আমাদের কতদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সরকারের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সহযোগিতায় আয়োজিত এই কর্মশালা গত ৩০ অক্টোবর শুরু হয় ইডেন কলেজে। এরপর ৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলে গভর্মেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল এবং শামসুন্নাহার হলে।
কর্মশালাগুলোয় ছাত্রীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিরাপদে বিচরণের কৌশলসমূহ, সংশ্লিষ্ট আইনের ব্যাখ্যা, আক্রান্ত হলে তা থেকে পরিত্রাণের উপায়, অভিযোগ জানানোর সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিসহ সাইবার অপরাধের নানা বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
প্রশিক্ষণ দেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অভিজ্ঞ সাংবাদিকরা।
সমাপনী অনুষ্ঠানে আইটি সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অরিফ দেওয়ানের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান হারুণ অর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মামুনুর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
]]>