বিনোদন

বাউল সাধক উকিল মুন্সির পুত্রবধূ-নাতিদের দিন কাটে অভাবে

<![CDATA[

বাউল সাধক উকিল মুন্সির স্মৃতি সংরক্ষণে ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও তার পুত্রবধূ আর সন্তানরা রয়েছেন অভাবে। কয়েক বছর ধরে শয্যাশায়ী উকিল মুন্সির পুত্রবধূ ফুলবানু। তিনি নিজেও একজন গীতিকার। বিছানাই যেন তার সঙ্গী।

হাওড়াঞ্চল নেত্রকোনোর মোহনগঞ্জ উপজেলার জৈনপুর গ্রামে বিখ্যাত সেই বেতাই নদীর পাড়ে বাউল সাধক উকিল মুন্সির বাড়ি। জৈনপুর গ্রামের সঙ্গে উপজেলা মোহনগঞ্জের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। সড়ক নেই। নদী পার হতে হয় এখনো নৌকায়। এমন নানা সংকট প্রত্যন্ত এই বাউলের সাধকের রাজ্য। যেখানে বসে আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানির মতো কালজয়ী সব গান রচনা করেছিলেন বাউল সাধক উকিল মুন্সি। সেখানেই নানা কষ্টেও থাকছেন পুত্রবধূ ফুলবানু। শেষ পর্যন্ত উকিল মুন্সির স্মৃতি কেন্দ্রটি ফুলবানু দেখে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আক্ষেপ করেন তিনি।

অসুস্থ পুত্রবধূ ফুলবানু বলেন, বিছানায় শুয়ে থাকার কারণে আঙুলের ছাপ দিতে পারেননি গিয়ে। যে কারণে দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ভাতা। ফলে তার দিন কাটছে অতি কষ্টে। এক মেয়ে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে দেখভাল করত। কিন্তু মেয়ের অর্থ দেয়ার সামর্থ্য নেই। অন্য দুই মেয়ে খাবার এবং চিকিৎসা চালাচ্ছেন। মেয়েদের একজন বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিল অনেক বছর আগে। আরেকজন বাউল শিল্পী ছিল। এখন যদিও কেউ আর গান করেন না। তাদের নিজস্ব আয়-রোজগারও নেই।

জানা গেছে, উকিল মুন্সির স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখতে তার পুত্রবধূ ফুলবানু ও তার দুই ছেলে বুলবুল আহমেদ ও কুলকুল আহমেদ ২০০ গান দিয়ে একটি বই বের করেন কয়েকবছর আগে। কুলকুল আহমেদ ঢাকায় একটি চায়ের দোকান চালায়। তবুও কষ্ট করে বইটি বের করেন। পরে সেটি পুশিং সেল করে ১০ হাজারের মতো টাকা পান। সেটি দিয়ে শ্বশুর উকিল মুন্সি এবং স্বামীর কবরের ওপরে ছাউনি দেন। এমন খবর প্রচারের পর তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমান উকিল মুন্সির বাড়ির ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠান। পরবতীতে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান ব্যবস্থা করে দেন উকিল মুন্সি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করে দেয়ার। 

আরও পড়ুন: বাউল শাহ আবদুল করিমের গান পেল ১০ হাজার ডলার!

২০১৯/২০ সালের দিকে জেলা প্রশাসক মঈন উল ইসলামের সময়ে কাজটি টেন্ডার হয়। বর্তমানে চার কোটি টাকা ব্যয়ে কাজটি চলমান। কিন্তু ধীরগতিতে অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদার। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের কর্তারা গেলে কাজের গতি বাড়ে। পরে আবার যেই সেই।

স্থানীয় কামাল মিয়া জানান, দীর্ঘদিন পরে হচ্ছে মাজারটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফুলবানু দেখে যেতে পারবেন কিনা জানেন না তিনিও। ঘরের জন্য খাট চেয়ার টেবিল এনে রেখেছে একটি কক্ষে। সেগুলো অনুষ্ঠান করে কবে দেবে কেউ জানে না।

ফুলবানুর মেয়ে বাউল জুয়েল জানান, নিচেই হাড়ি পাতিল রেখে কোনোভাবে চলে যাচ্ছে। বাথরুমের দরজা আটকানো যায় না। মা এমন অসুস্থ হয়েছে যে, তারে দূরে টয়লেট করতে নেয়াও যায় না। আমরা দুই বোন মিলে মায়ের খাবারের ব্যবস্থা করছি। ছোট ভাই কুলকুল ঢাকায় কাজ করে। এখানে এমন কোনো সুযোগও নেই যে এসেই কিছু করতে পারবে। কয়েকমাস ছিল মায়ের সেবার জন্য। কিন্তু ঋণ করে খেতে হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার দাদার নামে এতকিছু হচ্ছে সেগুলো মানসম্মত হলে তো ভালোই ছিল। কেউ দেখার নেই তাই লুটপাট হচ্ছে। জিনিসপত্র আনা হয়েছে সব। কিন্তু কবে দেবে জানি না। মা আর সেই সব জিনিসের আরাম ভোগ করে যেতে পারবেন না। কোটি টাকার বড় কমপ্লেক্স হলে কি হবে আমার মা তো অভাবের মধ্য দিয়েই মরবে। হয়তো অন্যরা ভোগ করবে। ভাতা তো এমন মানুষের জন্যই কিন্তু টিপসই দিতে যেতে পারেননি বলে ভাতাও বন্ধ করে দিয়েছে।

আরও পড়ুন: সাধুসঙ্গে হামলার বিচার চেয়ে বাউলদের মানববন্ধন

এদিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য সোনা মিয়া বলেন, তাদের কারও নম্বরে টাকা যায়। এই জন্য বৃদ্ধ ফুলবানু পান না। তাই এটি বন্ধ।

কার নম্বরে যায় সেই নম্বরটি চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি দেখবেন। একটি ভোটার আইডি কার্ড দিলে সমাজসেবায় যোগাযোগ করবেন। তবে সমাজ সেবার লোকজন ভালো না বলেও জানান তিনি।

ইউপি সদস্য বলেন, উকিল মুন্সিকে কেন্দ্র করে সরকারি স্থাপনা রাস্তাঘাটের জন্য প্রায় ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু এগুলোর সৎ ব্যবহার হচ্ছে না। উকিল মুন্সির স্মৃতি কেন্দ্রের কাজের মানও নিম্নমানের হচ্ছে । চার কোটি টাকার কাজে অনেক ফাঁকি দিচ্ছে বলেও তিনি জানান।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আসাদুজ্জমান রাসেল জানান, তারা ভালোভাবেই কাজ করছেন। দ্রুতই শেষ হবে। যেগুলো সমস্যা এগুলো ঠিক করে দেবেন।

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button
error: Content is protected !!