বিখ্যাত এই রাজকীয় জুটি ভেঙ্গেছে নিয়মের বেড়াজাল
<![CDATA[
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কাপল ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক এবং রানী জেটসুন পেমা। এই জনপ্রিয় কাপলকে ‘হিমালয়ের উইল এবং কেট’ হিসেবেও ডাকা হয়। ব্রিটেনের প্রিন্স উইলিয়াম এবং কেট মিডলটনের কথা তো সবারই জানা। যারা কিনা তাদের রোমান্টিক জীবনের জন্য জনপ্রিয় রাজকীয় জুটি। তেমনি ভুটানের এই লাভ বার্ডও তাদের রোমান্টিক জীবনের জন্য সবচেয়ে বেশি খবরের শিরোনাম হন। উইল এবং কেটের মতো এই দম্পতিও বাগদানের পর ২০১১ সালে বিয়ে সেড়ে ফেলেন। তবে ভালোবাসার জন্য এই জুটি ভেঙ্গেছেন তাদের শতাব্দী পুরনো নিয়ম।
বিয়ের আগে তিন বছর তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তখন তারা একসঙ্গে থাকা শুরু করেছিলেন। এমনকি বিয়ের আগে একাধিক স্ত্রী রাখার নিয়মও ত্যাগ করেছিলেন। কথা দিয়েছিলেন জেটসুনই হবেন তার একমাত্র স্ত্রী। তবে তার আগে অবশ্যই জেনে রাখা উচিত ভুটান দেশটি কতটা রক্ষণশীল। এক মিলিয়নেরও কম জনসংখ্যার ভুটানে ২০০০ খ্রিস্টপূর্বেরও আগে জনবসতি গড়ে উঠেছিল। তখন থেকেই ভুটানিরা খুবই রক্ষণশীল। তাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য রক্ষায় তারা খুবই সতর্ক। ভুটানিরা নিজের সংস্কৃতি রক্ষায় এতটাই রক্ষণশীল যে তাদের প্রথম জাতীয় টিভি চ্যানেল চালু হয় ২০০০ সালে। এর আগে ভুটানে টিভি ছিল না। ভুটান শাসিত হয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের মাধ্যমে।
আরও পড়ুন: নিষিদ্ধ দ্বীপ পোভেগ্লিয়া
সেই রাজার রয়েছে বিপুল পরিমাণ শক্তি। ২০০৬ সালে তরুণ জিগমে খেসার সিংহাসনে বসেন। পাঁচ বছরের মাথায় তার বিয়ে হয় জেটসুন পেমার সঙ্গে। যাকে বলা হয় ভুটানের ইতিহাসে সবচেয়ে অল্প বয়সী রানী। বিয়ের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর এবং রাজার বয়স ছিল ৩১। তারপর থেকেই বিশ্বের বিখ্যাত রাজকীয় জুটির একটি হয়ে উঠল রাজা জিগমে খেসা এবং রানী জেটসুন পেমা। তাদের দুই সন্তান রয়েছে। বেশিরভাগ অনুষ্ঠানেই রাজার সঙ্গে রানীকে দেখা যায়। তবে এই দৃশ্য ভুটানে ততটা স্বাভাবিক ছিল না। কারণ তাদের এই রোমান্টিক জীবন তাদের শতাব্দী পুরনো ঐতিহ্যের বিরোধিতা করছিল। তাদের দুজনের দেখা হয়েছিল অনেক আগেই। তখন জিগমে খেসার বয়স ছিল ১৭ আর জেটসুন পেমার ছিল ৭ বছর। রাজার আয়োজিত এক রাজকীয় ছুটিতে রাজার অনেক বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সেদিন জেটসুন পেমাকে দেখে মজার ছলেই জিগমে খেসার বলেছিলেন পেমাকে সে একদিন বিয়ে করবে। কেউ সে কথা সেভাবে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। কারণ তাদের ছিল বয়সের অনেক ব্যবধান। পাশাপাশি জেটসুন পেমাও রাজকীয় বংশের ছিলেন না। তার বাবা ছিলেন একজন পাইলট। সেদিনের কিছুদিন পরেই প্রিন্স আমেরিকা এবং ব্রিটেনে পড়াশোনা করতে চলে যান। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তখন পেমা ছিলেন পড়াশোনায় ব্যস্ত। প্রথমে ভারতে এবং পরে লন্ডনে পড়াশোনা করতে চলে যান পেমা। দেশের বাইরে পড়াশোনা চলাকালীন প্রিন্সের মধ্যে অনেক পরিবর্তন চলে আসে। তিনি আরও উদার মনের অধিকারী হয়ে ফিরে আসেন।
আরও পড়ুন:শত বছরের রহস্য ‘টাইটানিক’
যেমন তার দেশের শতাব্দী পুরনো কিছু রীতির বিরোধিতা করেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে একাধিক বিয়ের রীতিটি। যেখানে তার বাবাও ৪টি বিয়ে করেছিলেন, সেখানে তিনি হলেন এক নারীতে আসক্ত একমাত্র রাজা। ভুটানের নিয়মানুযায়ী যখন রাজা কাউকে বিয়ে করেন তখন বউয়ের বোনেরাও তার স্ত্রী হয়ে যায়। কিন্তু জিগমে খেসা হেঁটেছেন ভিন্ন পথে। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার একজনই স্ত্রী থাকবেন এবং তিনি হলেন পেমা। বিয়েতেও রাজা পুরনো রীতির বিরোধিতা করেছিলেন। সবার সামনেই তিনি তার স্ত্রীকে চুম্বন করেছিলেন। ভুটানে এই দৃশ্য এর আগে হয়তো কেউ কল্পনাও করেননি। এই জুটির আরেকটি কাজ সবাইকে মুগ্ধ করে। তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যান , তাদের কথা শোনেন। ভুটানের আইন অনুযায়ী, রাজার থেকে রানী অবশ্যই দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটবে। কিন্তু প্রায়ই তাদের দেখা যায় কাছাকাছি এবং হাত ধরেই হাঁটেন তারা। এত এত আইন ভঙ্গ করেও এই জুটি হয়ে উঠেছেন পৃথিবীতে ভালোবাসার অনন্য এক নিদর্শন। ভালোবেসে তারা ভেঙ্গেছেন শতাব্দী পুরনো রীতি। তবুও তারা সাধারণের কাছে ভালোবাসার এবং শ্রদ্ধার।
সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস
]]>