বিনোদন

ভাইয়ের প্রতারণায় নিঃস্ব হয়ে পথে নেমেছেন পোশাককর্মী কবিতা

<![CDATA[

বাগেরহাটের চিতলমারীতে আপন ভাইয়ের প্রতারণায় নিঃস্ব হয়ে পথে পথে ঘুরছেন কবিতা সরকার নামের এক নারী পোশাককর্মী। সুবিচার পাওয়ার আশায় জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। কাজ না হওয়ায় ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও দায়ের করেন তিনি। কিন্তু ভাইকে দেয়া টাকা ও চুক্তি অনুযায়ী জমি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না এই নারী।

কোনো উপায় না পেয়ে সবশেষ সোমবার (৭ নভেম্বর) চিতলমারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে আমরণ অনশন শুরু করেন অসহায় এই নারী।

দুইদিনের অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়লে বুধবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে চিতলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অশোক বড়াল কবিতার অনশন ভাঙান। কিন্তু কবিতার দাবি পূরণের বিষয়ে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন। এক সপ্তাহের মধ্যে ভাইকে দেয়া ২০ লাখ টাকা অথবা ওই টাকার জমি না পেলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন কবিতা সরকার।

৪০ বছর বয়সী কবিতা সরকার চিতলমারী উপজেলার সাবোখালী গ্রামের মৃত ভরত সরকারের মেয়ে। দীর্ঘদিন ধরে পোশাক কারখানায় চাকরি করেন তিনি।

কবিতা সরকার বলেন, ‘বাবার সংসারে অভাব থাকায় আমি গার্মেন্টসে চলে যাই। বিয়েও করিনি জীবনে। ২০০২ সালের দিকে আমার ছোট ভাই সুব্রত সরকার মাদকসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। সেইসঙ্গে বেশকিছু টাকা দেনা নিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। কিছুদিন পরে ভারত থেকে এসে বিভিন্ন মামলায় কয়েকবার জেলে যায় সুব্রত। জেলে যাওয়ার পরে মামলা পরিচালনা ও বিভিন্ন কারণে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সুব্রতর ভাগের এক একর ৪৫ শতক জমি বিক্রির শর্তে আমার কাছ থেকে টাকা নেয়া শুরু করে। ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সুব্রত সরকার আমার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়েছে। কিন্তু সে আমার সঙ্গে করা চুক্তি ভঙ্গ করে তার মালিকানাধীন জমির মধ্য থেকে প্রায় এক একর জমি বিক্রি করে দিয়েছে। অবশিষ্ট জমি বিক্রির পায়তারা চালাচ্ছে। আমি জমি বিক্রি করতে নিষেধ করলে এবং পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় কয়েকবার আমাকে মারধর করেছে।’

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী গরিব দুঃখী মানুষের পাশে আছেন এবং থাকবেন: উশৈসিং

‘আমার ছোট ভাই সুব্রত সরকার একজন মাদকসেবী। সে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। মায়ায় পড়ে নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে ওকে বাঁচাতে টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখন আমাকে মেরে ফেলার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আমি যেকোনো মূল্যে আমার টাকা এবং জমি ফেরত চাই। এক সপ্তাহের মধ্যে যদি টাকা ও চুক্তিকৃত জমি না পাই তাহলে আমি আত্মহত্যা করবো।’ এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ওই নারী।

কবিতার বড় বোন সাবেক ইউপি সদস্য অঞ্জলী ঢালী বলেন, ‘সুব্রতকে কারাগার থেকে ছাড়ানো, বিভিন্ন লোকের দেনা পরিশোধ, সুব্রতর সংসার দেখভালসহ নানা কারণে কবিতা সুব্রতকে টাকা দিয়েছে। বিশ বছরে কবিতার কাছ থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকা নিয়েছে সুব্রত। কিন্তু এই টাকা ফেরত দেয়ার নাম নেই। বরং আমরা ভাই-বোনরা টাকা ফেরত দিতে বললে আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে। এমনকি কবিতাকে কয়েকবার মারধরও করেছে।’

কবিতার ভাই বিকাশ সরকার বলেন, ‘নিজের জন্য কিছু না করে সুব্রতকে বাঁচাতে জীবনের সবকিছু দিয়েছে কবিতা। সুব্রত বিভিন্ন অসুবিধায় পড়ে কবিতার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকার বেশি নিয়েছে। এটা সবাই জানে। কিন্তু সুব্রত এখন সব টাকার কথা অস্বীকার করে। এমনকি কবিতার পক্ষে কথা বলায় আমাকে মারধরও করতে এসেছে।’

আরও পড়ুন: মহেশখালীর আলোচিত খাইরুল হত্যা মামলার রায় ২৪ নভেম্বর

অভিযুক্ত সুব্রত সরকার বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আমার বোন কবিতা আমাকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দিয়েছে। বিক্রি করার পরে আমার ৯ শতক জমি রয়েছে, আমি সেই জমি দলিল করে দেয়ার কথা বলেছি। কিন্তু আমার বোন রাজি হয়নি।’

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা বলেন, ‘কবিতা সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে আমার অফিসে একাধিকবার বসা হয়েছে। সুব্রতর কাছে কবিতা টাকা পাবে বিষয়টা প্রমাণিত।’

চিতলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল বলেন, ‘কবিতা একজন অসহায় নারী। তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি আমরা। কবিতার অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন সময় শালিস-মীমাংসা করা হয়েছে। কিন্তু সুব্রত কারও কথা মানেন না।’

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button
error: Content is protected !!